অনিশ্চিত: তামিলনাড়ুতে আটকে এঁরা। জানেন না, কবে ফিরবেন
অসুস্থতার কারণে ভিনরাজ্যে চিকিৎসা করাতে গিয়ে আটকে পড়েছেন ভাঙড়ের এক বৃদ্ধ। টাকাও শেষ হয়ে যাওয়ায় খাবার জুটছে না। ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়িতে ফিরতে পারছেন না তিনি। শুধু ভাঙড়ের ওই বৃদ্ধ নয়, তাঁর মতো অনেকেই ভিনরাজ্যে চিকিৎসা করাতে গিয়ে আটকে পড়েছেন। লকডাউনের কী ভাবে বাড়ি ফিরবেন বুঝতে পারছেন না। গত ১১ মার্চ তামিলনাড়ুর মাদুরাই শহরের মিনাক্ষী মিশন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান ভাঙড়ের কাশীপুর থানার জয়নগর গ্রামের বাসিন্দা হাজারাপদ সর্দার। সেখানে দেড় লক্ষ টাকা খরচ করে কোমরে অস্ত্রোপচার করান।এখন তিনি সুস্থ। ২৪ মার্চ তিরুচিরাপল্লি থেকে ট্রেন ধরে তাঁদের বাড়ি ফিরে আসার কথা ছিল। করোনাভাইরাসের জন্য সারা দেশে লকডাউন হয়ে গিয়েছে। ফলে তিনি আটকে পড়েন। শনিবার হাজারাপদর ছেলে স্বপন সর্দার ফোনে জানান, বাবার চিকিৎসার পরে অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা হোটেলে থাকা খাওয়ার জন্য শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন যা পরিস্থিতি, বাড়ি ফেরা দায়। প্রশাসন যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়, তা হলে তাঁরা অসুস্থ বাবাকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন। একই অবস্থা হুগলির হরিপালের বাসিন্দা রতনচন্দ্র ঘোষের। বছর ছ’য়েক আগে তাঁর বাইপাস সার্জারি হয়। গত পাঁচ দিন আগে তিনি সেখানে চেকআপ করাতে গিয়েছিলেন। লকডাউনের জেরে তিনিও আটকে পড়েছেন। তাঁদের মতো আরও ১৫ জন এ রাজ্যের বাসিন্দা চিকিৎসা করাতে গিয়ে আটকে রয়েছেন। তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও সুরাহা পাননি বলে অভিযোগ। রতনচন্দ্র বলেন, “শেষমেশ আমি দিদিকে বলো-তে ফোন করেছিলাম। কিন্তু কোনও ফল পাইনি। এই সময়ে যদি রাজ্যে ফিরতে না পারি তা হলে প্রশাসনিক ভাবে আমাদের এখানে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করলে উপকৃত হব।”
অন্য দিকে, মাস কয়েক আগে কেরলের রাজমিস্ত্রির কাজে গিয়েছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মন্দিরবাজার রায়দিঘি ও কুলতলি এলাকার বাসিন্দা। লকডাউনের কাজকর্ম সব বন্ধ। বন্ধ গাড়ি চলাচলও। ফলে তাঁরা আটকে রয়েছেন এখন কেরলেই। ওই দলের মধ্যে থাকা এক শ্রমিক ফোনে বলেন, “আমরা রয়েছি এখন কেরলের পানর থানা এলাকায়। হাতে টাকা নেই। খেতেও পাচ্ছি না ঠিকঠাক। এখন সব থেকে বড় চিন্তা বাড়ি ফিরব কী করে।” স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে তাঁরা আবেদন জানিয়েছেন। পুলিশ বলেছে আমরা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কয়েক দিন কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি বলে জানান শ্রমিকেরা।
বাইরের রাজ্যে কাজে গিয়ে সন্দেশখালি থানার মণিপুর, জয়গোপালপুর সহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে কয়েক মাস আগে কেরলের কান্নুর জেলায় কাজে গিয়েছিলেন জনা পনেরো শ্রমিক। আটকে পড়েছেন তাঁরাও।
শনিবার কেরল থেকে টেলিফোনে সন্দীপ গায়েন, দীনেশ রায়, প্রদীপ মিস্ত্রিরা জানান, কয়েক দিন আগে বাড়ি ফেরার জন্য ট্রেনের টিকিট কেটেছিলেন। ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর ফিরতে পারেননি। একটি লজে আটকে আছেন। দশ দিন ধরে কাজ নেই। এ দিকে লজে থাকা-খাওয়ার খরচ বহন করতে গিয়ে টাকা-পয়সা শেষ হয়ে আসছে। এই পরিস্থিতিতে লজের মালিক তাদের থেকে খাওয়ার খরচ নিলেও থাকা-বাবদ টাকা নিচ্ছেন না। আলুসেদ্ধ, ডালসেদ্ধ, ভাত খেয়ে দিন কাটছে। বাড়িতেও টাকা পাঠাতে পারছেন না কেউ। সমস্যায় আছে পরিবারগুলি। দীনেশ রায় পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য। গ্রামের বাড়িতে যা টাকা পাঠান, তা দিয়েই স্ত্রী ও দুই সন্তানের পেট চলে। কিন্তু এখন দীনেশের কাজ নেই। তাই টাকাও পাঠাতে পারছেন না। বললেন, ‘‘আমাদের ফোনে রিচার্জ পর্যন্ত করতে পারছি না। কারণ, বাইরে বেরোনো যাচ্ছে না। পরিবারের সঙ্গে কথা বলব, তা-ও হচ্ছে না। দু’একজনের ফোনে এখনও ব্যালান্স আছে। তাঁদের ফোন থেকেই সকলে অল্প সময় ফোন করছেন।’’ দিন সাতেকের মধ্যে হাতে সব টাকা শেষ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা ওই শ্রমিকদের।
সন্দেশখালির এই পনেরো জন ছাড়াও লজের আটকে পড়েছেন মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি থানার আরও ২২ জন নির্মাণ শ্রমিক।
অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy