মৃত বলরাম দাস ও গোষ্ঠ দাস। ডান দিকে, বেহাল প্ল্যান্ট। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
পানীয় জলে উচ্চমাত্রার আর্সেনিক এখনও গাইঘাটার মানুষের কাছে বড় সমস্যা। শুধু বিষ্ণুপুর নয়, এই সমস্যা গোটা ব্লকেরই।
‘আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটি’ সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা গাইঘাটা ব্লকই আর্সেনিকপ্রবণ। ইতিমধ্যেই সেখানে ৩৫ জন মারা গিয়েছেন। আর্সেনিক নিয়ে ১৯৯৫ সালের আগে পর্যন্ত এখানকার মানুষের মধ্যে তেমন কোনও সচেতনতা ছিল না বলে জানা গেল ওই কমিটি সূত্রে। গ্রামবাসীরা জানান, বাড়ির টিউবওয়েলের জল থেকেই আর্সেনিক বিষ শরীরে ঢুকছে। এখন অবশ্য গ্রামে গ্রামে পানীয় জলের গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। তবে ওই জলেও উচ্চমাত্রায় আর্সেনিক রয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ওই জলই তাঁদের পান করতে হয়। আর্সেনিক থেকে বাঁচতে কেউ কেউ পানীয় জল কিনছেন।
‘আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটি’র রাজ্য সম্পাদক অশোক দাসের অভিযোগ, ‘‘আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধে কোনও সরকারই যথার্থ পদক্ষেপ করেনি। রোগীদের চিহ্নিত করে তাঁদের উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থাও হয়নি।’’ কমিটির তরফে বেশ কিছু গভীর নলকূপের জল সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তাতে আর্সেনিকের উপস্থিতি স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি। পাইপ লাইনের জলেরও একই অবস্থা। কমিটির দাবি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) মতে, প্রতি লিটার জলে ০.০১ মিলিগ্রামের বেশি আর্সেনিক থাকলে তা পান বা রান্নার অযোগ্য। এখানে ওই সীমা অতিক্রম করেছে।’’
আর্সেনিকে আক্রান্তরা জানান, মাসে পাঁচ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। দিনমজুরি-খেতমজুরি করে ওই খরচ জোগানো অসম্ভব। তাঁদের বক্তব্য, সরকার তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে মৃত্যু ছাড়া কোনও উপায় নেই তাঁদের। বনগাঁর সদ্য নির্বাচিত সাংসদ শান্তনু ঠাকুর বলেন, ‘‘আর্সেনিক সমস্যা মেটাতে রাজ্য সরকার কোনও পদক্ষেপ করেনি। আমি শীঘ্রই বিষয়টি সংসদে তুলব।’’
বিকল্প ব্যবস্থা কী করা যায়?
আর্সেনিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গাইঘাটা ব্লকে প্রচুর নদী-খাল-বিল-বাওর-পকুর রয়েছে। সেই জল ধরে রেখে পানীয়ের ব্যবস্থা করতে পারলে, এক দিকে যেমন আর্সেনিক সমস্যা মেটানো সম্ভব হয়, তেমনই বন্যা প্রতিরোধও সম্ভব হবে।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানানো হয়েছে, নৈহাটি থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গঙ্গাজল নিয়ে আসার কাজ চলছে। ওই জল শোধন করে পানীয় হিসেবে প্রতিটি বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। গাইঘাটা ব্লকে আর্সেনিক-মুক্ত পানীয় জলের জন্য ৭১টি ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ বসানো হয়েছে। শীঘ্রই গাইঘাটা ব্লককে ‘আর্সেনিক-মুক্ত ব্লক’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে। ওই ব্লকের অনেক স্কুলেও প্ল্যান্ট বসানো হয়েছে।
গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোবিন্দ দাস বলেন, ‘‘আর্সেনিক সমস্যা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এলাকায় ৪০৩টি গভীর নলকূপ বসানোর কাজ চলছে।’’
বিএমওএইচ ভিক্টর সাহা বলেন, ‘‘বিষ্ণুপুর ধর্মপুর জলেশ্বর চাঁদপাড়ায় প্রতি সপ্তাহে একদিন করে পঞ্চায়েতের তরফে ক্যাম্প করে আর্সেনিকে আক্রান্তদের চিকিৎসা করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy