বরণ করছেন প্রতিবেশীরা। নিজস্ব চিত্র
বাড়ির উঠোনে পাশাপাশি শোয়ানো দু’জন। পুরুষটির পরনে নতুন ধুতি-পাঞ্জাবি, কপালে চন্দনফোঁটা, গলায় রজনীগন্ধার মালা, মাথায় টোপর। মহিলার পরনে লাল বেনারসি, গলায় মালা, মাথায় মুকুট। যেন নবদম্পতি।
হাবড়ার ভারতীনগর কলোনি এলাকার বাসিন্দা মণিমোহন মণ্ডল (৭৩) ও তাঁর স্ত্রী নিরুপমা (৬৩) শনিবার সন্ধ্যায় ও গভীর রাতে বারাসত জেলা হাসপাতালে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মারা গেলেন।
কিন্তু আশপাশের মহিলারা হাতে বরণের সাজসরঞ্জাম নিয়ে মৃত দম্পতিকে বরণের উদ্দ্যেশে জড়ো হয়েছেন তাঁদের বাড়ির উঠোনে। দেওয়া হচ্ছে উলু ও শঙ্খধ্বনি। বরণ শেষে মৃতদেহ নিয়ে যাত্রা করা হল শ্মশানে।
পেশায় রেলকর্মী মণিমোহনের চার মেয়ে, এক ছেলে। সকলেই বিবাহিত। শুক্রবার রাতে অসুস্থতার কারণে মণিমোহনকে বারাসত জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। স্বামীর অসুস্থতা নিয়ে তখনই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন নিরুপমা। পরে তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়েন। শনিবার সকালে তাঁকেও বারাসত জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁদের বড় মেয়ে নীলিমা মণ্ডল বৈরাগী এ দিন বলেন, ‘‘মা প্রায়ই বলতেন, বাবার সঙ্গেই মরতে চান। গোটা জীবনটা একসঙ্গে কাটালেন, শেষটা একা থাকতে পারবেন না। ঈশ্বর তাঁর মনের ইচ্ছা পূরণ করেছেন। ওঁদের আত্মা শান্তি পাবে।’’ মায়ের এই ইচ্ছাকে সম্মান দেওয়ার জন্যেই সম্ভবত মণিমোহনের পরিবার থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, শ্মশানে যাওয়ার আগে তাঁদের বিয়ের সাজে বরণ করা হবে। সেই মতো ব্যবস্থাও হয়।
স্বামী-স্ত্রীর একসঙ্গে মৃত্যুর ঘটনায় এলাকার মানুষ জানালেন, একসঙ্গে দম্পতি বা প্রেমিক-প্রেমিকা আত্মহত্যা করেছেন—এমন ঘটনা তো ঘটেই। কোনও দুর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী মারা গেলেন—এমনও দেখা যায়। কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়ে এ ভাবে একসঙ্গে মৃত্যুর বিষয়টি একটু ব্যতিক্রমীই মনে হচ্ছে তাঁদের। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা বিজ্ঞানমঞ্চের সদস্য বিজয়কুমার দেবনাথ অবশ্য বলেন, ‘‘একসঙ্গে দম্পতির মৃত্যু কিন্তু নতুন কোনও বিষয় নয়। এরকম ঘটেই। সাধারণত একজনের মৃত্যুর শোকটা সামলাতে না পেরেই অন্যজন মারা যান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy