Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

গঙ্গায় তলিয়ে গেল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী

দাদার আঙুল, আর বোনের চুল ধরে বাঁচার শেষ চেষ্টা করেছিল সে। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হল না। স্নান করতে নেমে গঙ্গায় তলিয়ে গেল উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী দীপকুমার পাল। বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্যামনগর নানাবাবার ঘাটের ঘটনা। 

দীপকুমার পাল

দীপকুমার পাল

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:২৮
Share: Save:

দাদার আঙুল, আর বোনের চুল ধরে বাঁচার শেষ চেষ্টা করেছিল সে। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হল না। স্নান করতে নেমে গঙ্গায় তলিয়ে গেল উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী দীপকুমার পাল। বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্যামনগর নানাবাবার ঘাটের ঘটনা।

শ্যামনগর নবপল্লির বাসিন্দা দীপ পড়ে কার্তিকচন্দ্র হাইস্কুলের বাণিজ্য বিভাগে। এ দিনই ছিল দীপের ঠাকুমার শ্রাদ্ধ। সেই কাজের জন্যই গঙ্গার ঘাটে গিয়েছিলেন পাল পরিবারের সদস্যেরা। গঙ্গায় স্নান করতে নেমেছিল চার ভাই, এক বোন। ভাটার টানে সকলেই গভীর জলে চলে যায়। বাকি চার জনকে স্থানীয় মানুষজন উদ্ধার করলেও দীপকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। যে দাদা এবং বোনকে ধরে সে বাঁচার চেষ্টা করেছিল, ঘটনার পরে থেকে হতবাক তাঁরা। বাকরুদ্ধ পরিবারের অন্যেরাও। পুলিশ ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালালেও রাত পর্যন্ত সন্ধান মেলেনি দীপের। এই ঘটনার পরে শ্রাদ্ধের কাজ আর শেষ করা যায়নি।

দীপের বাবা মধুসূদন পাল বেসরকারি সংস্থার কর্মী। দীপের আর এক ভাই রয়েছে। দেশকুমার নামে সেই কিশোর দীপের স্কুলেই একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। এ মাসের গোড়ায় দীপের ঠাকুমা বীণা পালের মৃত্যু হয়। গঙ্গার ঘাটে শ্রাদ্ধের কাজ শুরু হওয়ার পরে দীপ, তার তিন ভাই এবং এক বোন স্নান করতে নামে। পাঁচ জনের কেউই সাঁতার জানত না। ফলে গভীর জলে তারা কেউ যেতে চায়নি। বুধবার হাওড়ার নিমতলা ঘাটে জোয়ারে ভেসে গিয়েছিলেন এক যুবক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ দিন দীপেরা যখন নদীতে নামে তখন ভাটা শুরু হয়েছে। ভাটার টানেই গভীর জলে চলে যায় সকলে। সাঁতার না জানায় প্রতিরোধ করতেই পারেনি।জ্যাঠতুতো দাদা জয়, বোন জ্যোতি ছিল দীপের কাছাকাছি। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, সকলেই হাবুডুবু খাচ্ছিল। গঙ্গায় খুচরো পয়সা খোঁজার কাজ করা জনাকয়েক কিশোর তা দেখে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দু’জনকে প্রথমে তোলা গেলেও বেশ গভীর জলে ছিল জয়, দীপ এবং জ্যোতি। ততক্ষণে অনেকেই নদীতে নেমে তাঁদের বাঁচানোর চেষ্টা শুরু করেন। জয় এবং জ্যোতিকে তোলার সময়েও দীপকে দেখা যাচ্ছিল। সে এক হাতে জয়ের একটি আঙুল এবং অন্য হাতে জ্যোতির চুল ধরে বাঁচার চেষ্টা করে। কিন্তু মুহূর্তে জলের তোড়ে ভেসে যায়। জয়ের একটি আংটি এবং জ্যোতির এক গোছা চুল তার হাতেই রয়ে যায়।

ছবি আঁকার শখ দীপের। তার মামা অভি রায় বলেন, “ছবি তোলারও শখ আছে ওর। উচ্চমাধ্যমিকের পরে একটা ডিএসএলআর ক্যামেরা কিনবে বলেছিল। জানি না কী হবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Drowned Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE