Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

ভোট দিয়ে পুরনো ক্ষোভ ভুলল বসিরহাট

গত পঞ্চায়েতে বেলাগাম সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠে সেখানে। সে বার সব ক’টি পঞ্চায়েত দখল করেছিল শাসকদলই।

বুথমুখো: টাকিতে। নিজস্ব চিত্র

বুথমুখো: টাকিতে। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু 
বসিরহাট: শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৯ ০০:১৭
Share: Save:

পঞ্চায়েতে ভোট দিতে না পারার আফসোস ঘুচল অনেকের।

সাতটি বিধানসভা এবং নব্বইটি পঞ্চায়েত নিয়ে বসিরহাট লোকসভা। গত পঞ্চায়েতে বেলাগাম সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠে সেখানে। সে বার সব ক’টি পঞ্চায়েত দখল করেছিল শাসকদলই। সন্ত্রাস নিয়ে মানুষের ক্ষোভের অন্ত ছিল না। অনেককে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এ বার অবশ্য কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ভোট দিলেন মানুষ। সকাল থেকে লম্বা লাইন পড়ে বুথের বাইরে বাইরে।

হিঙ্গলগঞ্জের কালীতলা পঞ্চায়েতের বাসিন্দা সমীর দাস, কাকলি মণ্ডল বলেন, ‘‘শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও গত পঞ্চায়েতে ভোট দিতে না পারাটা আমরা ভাল ভাবে নিইনি।’’ সমীর-কাকলিরা জানালেন, পঞ্চায়েতে ভোট দিতে গিয়ে বোমাবাজির মধ্যে পড়েছিলেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রাণের ভয়ে ভোট না দিয়েই বাড়ি ফেরেন। তাঁদের কথায়, ‘‘এ বার কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবে শুনে শুধু আমরাই নই, গ্রামের অনেক মানুষই ঠিক করি, ভোট দেবই। দু’একটা গন্ডগোল হলেও এ দিন আমরা নির্ভয়েই ভোট দিতে পেরেছি।’’

একই রকমের অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন বসিরহাট মহকুমার যোগেশগঞ্জের বাসিন্দা প্রত্যুষা মণ্ডল, কল্পনা আঢ্য। তাঁদের কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের ক’দিন আগে থেকেই বাড়িতে এসে বুথে না যাওয়ার হুমকি দিচ্ছিল শাসকদল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। সে কারণে পঞ্চায়েতে ভোট দিতে যেতে পারিনি। পরে শুনেছিলাম, একশো শতাংশ ভোট হয়ে গিয়েছে। এ বার কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকায় সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি হয়নি। নিজের ভোট নিজে দিতে পেরে পঞ্চায়েতে ভোট দিতে না পারার দুঃখ মিটিয়ে নিয়েছি।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

হাসনাবাদের কালীবাড়ি বকুলতলা এলাকার বাসিন্দা তুলসী প্রামাণিক, রতন বৈদ্য বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব দেখেছিলাম। প্রাণের ভয়ে বাইরে বেরোতে সাহস করিনি। রবিবার নির্ভয়ে ভোট দিয়ে সেই অশান্তির প্রতিবাদ জানালাম। এখন শুধু একটই চিন্তা, কেন্দ্রীয় বাহিনী ফিরে গেলে ফের অশান্তি ছড়াবে না তো!’’

বসিরহাট মহকুমার সন্দেশখালির কোড়াকাটি গ্রামের বাসিন্দা শম্পা অধিকারী বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তা আগে কখনও দেখিনি। ক’টা দিন ছোট্ট মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ভয়ে-আতঙ্কে ঘরে সিঁটিয়ে ছিলাম। এ বার গণতন্ত্রের উৎসবে সামিল হতে পেরে ভাল লাগছে।’’

এক কথায় সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দাদের বক্তব্য, গত কয়েক বছরে গ্রামের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। অনেকে শাসকদলকেই সমর্থন করেন। তা সত্ত্বেও প্রার্থী দিতে না দিয়ে এবং ভোটারদের হুমকি দিয়ে পঞ্চায়েত বিরোধীশূন্য করাটা তাঁরা একেবারেই মেনে নেননি। এই নিয়ে এত দিন মনে ক্ষোভ পুষে রেখেছিলেন অনেকেই। এ দিন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিজের ভোট নিজে দিতে পেরে সন্তুষ্ট তাঁদের অনেকেই।

তৃণমূল নেতা ফিরোজ কামাল গাজি অবশ্য দাবি করেন, পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাসের কোনও ঘটনা ঘটেনি। কাউকে ভয় দেখানো হয়নি। বুথ জ্যাম বা রিগিংও হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘বিরোধীদের সংগঠন না থাকায় অনেক জায়গায় তারা সে বার প্রার্থীই দিতে পারেনি। সন্ত্রাসের মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE