বেলাগাম: বাইক নিয়ে কেরামতি পড়ুয়ার। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
কাঁচা বয়সে পড়ুয়াদের হাতে বাইক পড়ে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে বনগাঁয়।
স্কুল ছুটির পরে সহপাঠীকে বাইকের পিছনে বসিয়ে নিয়ে যেতে দেখা গেল বনগাঁর গাঁড়াপোতার এক পড়ুয়াকে। বাগদার বৈকোলাতেও একই ছবি। রনঘাট অঞ্চল হাইস্কুলে দেখা গেল এক বাইকে তিনজন পড়ুয়া। পরনে স্কুলের পোশাক। বনগাঁ, বাগদা, গাইঘাটা, গোপালনগর— সর্বত্র একই দৃশ্য।
স্কুলপড়ুয়াদের একাংশ কোনও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বাইক চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। স্কুলে যাতায়াত করা ছাড়াও টিউশন নিতে যাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরির সময়েও বাইক চালাচ্ছে তারা। অধিকাংশ সময়ে কারও মাথায় হেলমেটও থাকে না। আঠারো বছর না হলে কেউ লাইসেন্সও পায় না।
দিন কয়েক আগে গাইঘাটার উত্তর বাগনা এলাকায় গাইঘাটা হাইস্কুলের ছাত্র দশম শ্রেণির ছাত্র অর্ঘ্য সরকার বাইক চালানোর সময়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যশোর রোডের একটি গাছে ধাক্কা মারে। ছিটকে পড়ে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার দিন সে টিউশন পড়ে বন্ধুকে বাইকের পিছনে বসিয়ে ফিরছিল। বাইক তার বাবার। অর্ঘ্যর মাথায় হেলমেট ছিল না।
ওই ঘটনার পরেও বনগাঁ মহকুমার অধিকাংশ স্কুলপড়ুয়ার মধ্যে নূন্যতম হুঁশ ফেরেনি। অর্ঘ্যর স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত চার বছরে ওই স্কুলের তিনজন পড়ুয়া বাইক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অলোক বিশ্বাস বলেন, ‘‘ছাত্রেরা যাতে বাইক না চালায়, সে বিষয়ে স্কুলের তরফে ওদের বোঝানো হয়। সচেতনতা বাড়াতে প্রচার কর্মসূচিও নেওয়া হয়।’’ স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, পড়ুয়াদের সচেতন করতে শীঘ্রই স্কুলছাত্ররা অর্ঘ্যর ছবি নিয়ে পথে নামছে। রনঘাট অঞ্চল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অবনীভূষণ কাঞ্জিলাল বলেন, ‘‘স্কুলে কেউ বাইক নিয়ে ঢোকে না। বাইরে চালায়। স্কুলে সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ কর্মসূচি পালন করা হয়।’’
কেন স্কুলছাত্রদের বাইক চালানোর প্রবণতা বন্ধ করা যাচ্ছে না? বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এ বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতনতাটা সব থেকে জরুরি। অনেক সময়ে দেখা যায়, বাবা বা পরিবারের কোনও সদস্যের বাইক নিয়ে পড়ুয়ারা বেরিয়ে পড়ছে। যে সব অভিভাবকের আর্থিক অবস্থা ভাল, অনেক সময়ে তাঁরাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ছেলেকে বাইক কিনে দিচ্ছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ কড়াকড়ি করলে, ছাত্রেরা বাইক স্কুলের বাইরে রেখে ঢোকে।
পরিবহণ দফতর ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আঠারো বছর বয়স না হলে বাইক চালানো বেআইনি। ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয় না। বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায় বলেন, ‘‘থানাগুলিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এ ক্ষেত্রে আরও বেশি ধরপাকড় করতে। স্কুলে স্কুলে আমরা শিক্ষক, ছাত্র, অভিভাবকদের সচেতন করতে কর্মসূচিরও আয়োজন করছি।’’ ছোট ছেলেটির হাতে বাইকের চাবি যাতে না দেন অভিভাবকেরা, সেটা আগে ঠিক করা জরুরি, মনে করেন পুলিশ কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy