প্রতীকী ছবি।
অপহরণের মামলা কী অবস্থায় আছে, খোঁজ-খবর করতে গিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই কেঁচো খুঁড়তে মিলল কেউটের হদিস।
সমীরের দেহ এত দিন ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ হিসাবেই রাখা ছিল হাসপাতালের মর্গে। তাঁর মা পোশাক দেখে এক বছরের পুরনো মৃতদেহ নিজের ছেলের বলে সনাক্ত করেছেন। ময়নাতদন্তের পুরনো রিপোর্ট নতুন করে খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।
ঘটনাটি জগদ্দল থানা এলাকার। গত বছর ২২ অক্টোবর আলুথালু বেশে থানায় হাজির হন এক তরুণী। জানান, তাঁর স্বামী সমীর হঠাৎ উধাও হয়ে গিয়েছেন। শ্যামনগরের মাদ্রালের বাসিন্দা বছর সাতাশের তরুণী সুস্মিতার অভিযোগের ভিত্তিতে নিখোঁজ ডায়েরি করে পুলিশ।
খোঁজাখুঁজির পরেও হদিস মেলেনি সমীরের। রাঁধুনির কাজ করতেন তিনি। এলাকার অনেককে সুস্মিতা জানিয়েছিলেন, স্বামী হয় তো অন্যত্র রান্নার কাজ নিয়েই গিয়েছেন।
• সমীর হালদার নিখোঁজ, এই দাবি নিয়ে থানায় এসেছিলেন স্ত্রী সুস্মিতা। তদন্তে নামে পুলিশ। পরে সমীরের মা জানান, অপহরণ করা হয়েছে ছেলেকে।
• তত দিনে প্রেমিক সুবলকে নিয়ে সমীরকে শ্বাসরোধ করে খুন করে দেহ ফেলে দিয়েছে সুস্মিতা। কিন্তু ঘর বাঁধতে পারেনি সুবলের সঙ্গে। পরে অন্য এক যুবকের সঙ্গে থাকতে শুরু করে সে।
• খুনের দিন দশেক বাদে পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়েছিল সমীরের। এত দিনে তা সনাক্ত করেছেন তাঁর মা। দেহ পরিবারের হােত তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কিছু দিন পরে থানায় হাজির হন সমীরের মা। তিনি পুলিশকে জানান, তাঁর সন্দেহ, সমীরকে কেউ তুলে নিয়ে গিয়ে গুম করে রেখেছে। পুলিশ এ বার অপহরণের মামলা করে। তদন্ত শুরু হয়। রাজ্যের সব থানায় সমীরের ছবি পাঠানো হয়। কিন্তু খোঁজ মেলেনি। এরপরে বছর ঘুরেছে।
মামলা কী অবস্থায় আছে, তা নিয়ে পুরনো ফাইল নাড়াচাড়ার সময়ে সমীর-অপহরণের মামলাও তদন্তকারীদের সামনে আসে। তাঁরা হাজির হন সমীরের বাড়িতে।
সেখানে গিয়ে জানা যায়, বাড়ির ছেলে ফেরেনি। বৌমাও পাততাড়ি গুটিয়ে চলে গিয়েছে অন্যত্র। সুস্মিতার বাপের বাড়িতে হাজির হয় পুলিশ। তাঁর মা পুলিশকে জানান, জামাইয়ের খোঁজে দুই সন্তানকে রেখে অন্যত্র গিয়েছেন সুস্মিতা।
সে কথায় খুব একটা ভরসা হয়নি তদন্তকারীদের। ক’দিন পরে সুস্মিতার মাকে ডেকে পাঠানো হয় থানায়। সে বার জেরার মুখে মহিলা জানান, স্বামী নিরুদ্দেশ হওয়ার পরে কাউগাছিতে অন্য এক যুবকের সঙ্গে থাকে সুস্মিতা। ডেকে পাঠানো হয় ওই তরুণীকে। জেরায় ভেঙে পড়ে তরুণী। পুলিশকে সে জানায়, সমীর আদৌ নিখোঁজ হননি। প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতেই তাঁর গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে খুন করেছিল সে।
এই ঘটনায় মনুয়া-কাণ্ডের ছায়া দেখছে পুলিশ। বারাসতের মনুয়া মজুমদার প্রেমিককে দিয়ে স্বামী অনুপম সিংহকে খুন করায় বলে অভিযোগ।
তবে সেই প্রেমিক সুবল হালদারের সঙ্গেও ঘর বাঁধার স্বপ্ন পূরণ হয়নি সুস্মিতার। সুবল বিবাহিত। সুস্মিতাকে নিয়ে সংসার পাততে পারেনি অশান্তির জেরে। এরপরে কাউগাছির এক যুবকের সঙ্গে থাকতে শুরু করে সুস্মিতা। তদন্তে নেমে সুবলকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
দু’জনকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, সমীর তাদের সম্পর্কের কথা জেনে গিয়েছিলেন। বাধা দিয়েছিলেন। বিবাহিত সুবলের বাড়িতেও সব জানানোর হুমকি দিয়েছিলেন। সে কারণেই সমীরকে পথ থেকে সরানোর ছক কষে দু’জন। ২১ অক্টোবর রাতে খুন করা হয় সমীরকে। একটি ভ্যানে দেহ নিয়ে গিয়ে বাসুদেবপুরে খালের ধারে ফেলে আসে। ওই ঘটনার দিন দশেক পরে পুলিশ পচাগলা দেহটি উদ্ধার করেছিল। কিন্তু এত দিন পরিচয় জানা যায়নি। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ঘটনার রহস্যভেদ হওয়ার পরে এ বার ওই যুবকের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy