Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভাঙা মাটির ঘরে দিন কাটছে মাস্টারমশাইয়ের

শিক্ষকের নাম রাধাপদ ঘোষ। বাংলাদেশের শ্রীপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। পরে তিনি চলে আসেন বসিরহাট মহকুমার সুন্দরবন লাগোয়া সন্দেশখালি ২ ব্লকের বউঠাকুরানি গ্রামে। স্থানীয় ঘোলাপাড়ার বাসিন্দারা রাধাপদবাবুকে মাস্টারমশাই বলেই চেনেন। 

নিজের বাড়িতে পোষ্যদের সঙ্গে রাধাপদবাবু। নিজস্ব চিত্র

নিজের বাড়িতে পোষ্যদের সঙ্গে রাধাপদবাবু। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৫০
Share: Save:

তাঁর হাত ধরেই শিক্ষার পথচলা শুরু হয়েছে অনেক কচিকাঁচার। তাঁর উপার্জনের টাকায় বহু পড়ুয়াই চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক হতে পেরেছেন। কিন্তু এখন তিনিই অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন।

শিক্ষকের নাম রাধাপদ ঘোষ। বাংলাদেশের শ্রীপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। পরে তিনি চলে আসেন বসিরহাট মহকুমার সুন্দরবন লাগোয়া সন্দেশখালি ২ ব্লকের বউঠাকুরানি গ্রামে। স্থানীয় ঘোলাপাড়ার বাসিন্দারা রাধাপদবাবুকে মাস্টারমশাই বলেই চেনেন।

টাকি কলেজ থেকে বিএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ করেন। বিএড-ও করেছেন। এরপরেই প্রধান শিক্ষক হিসাবে বউঠাকুরানির উত্তমচন্দ্র বিদ্যাপীঠ স্কুলে যোগ দেন। স্কুলে ছাড়াও ছাত্রদের নিজের বাড়িতেও এনে বিনা পয়সায় পড়াতেন। কিছুদিনের মধ্যেই গ্রামের ছেলেমেয়েদের কাছে প্রিয় মাস্টারমশাই হয়ে ওঠেন। যতটুকু উপার্জন করতেন তার বেশির ভাগটা দিয়ে দুঃস্থ পড়ুয়াদের চাহিদা মেটাতেন।

শুধু পড়ুয়া নয়, সাহায্য করেছেন গ্রামের অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদেরও। অথচ নিজে মাটির বাড়িতে মেঝেতে শুয়ে দিন কাটিয়েছেন। কোনও কোনও দিন দু’বেলা পেট ভরে খেতেও পাননি। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের গরিব, দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীরা যাতে শহরে থেকে পড়াশোনা করতে পারে সেই জন্যে রাধাপদবাবু কলকাতায় একটি আশ্রমও তৈরি করেছিলেন। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা এখন নষ্ট হতে চলেছে।

গত ২০০৪ সালে তিনি স্কুল থেকে অবসর নেন। অবসর জীবনে যতটুকু পেনশন পেয়েছেন তা দিয়ে কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তাঁর বাড়িতে ১০টি কুকুর ও ৪ গরু, ১৫টি বিড়াল থাকে। কিন্তু এখন তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হিমসিম খেতে হয় মাস্টারমশাইকে।

জয়হরি বর্মন নামে এক ছাত্রের পরিবার পালা করে মাস্টারমশাইয়ের দেখভাল করেন। কিন্তু তাতেও সব ঠিকঠাক চলে না। রাধাপদবাবু বলেন, ‘‘ভাঙ্গা মাটির ঘর সারাই করতে হবে। টাকার অভাবে তা করতে পারছি না। পানীয় জলও নেই। তার ব্যবস্থা যদি কেউ করে দেন উপকৃত হব। যে ছাত্রছাত্রীরা আমার কাছে থেকে পড়াশোনা করে তাদের একটু সুবিধা হবে।’’

সন্দেশখালি পঞ্চায়েতের প্রধান দিলীপ মল্লিক বলেন, ‘‘কয়েকজন পড়ুয়াকে বাড়িতে রেখে পড়িয়েছেন। আমিও তাঁর ছাত্র ছিলাম। সমস্যার কথা আমাদের জানালে নিশ্চয় কিছু একটা ব্যবস্থা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teacher Hut
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE