উদ্বেগের মুহূর্ত। ছবি: নির্মল বসু।
সোনার দোকান খুলে বহু লোকের টাকা, গয়না গায়েব চম্পট দিল ব্যবসায়ী পরিবার। মাথায় হাত পড়েছে অনেকের। বিশ্বজিৎ সরকার নামে অভিযুক্ত ব্যবসায়ীর বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালায় জনতা। গ্রেফতার করা হয়েছে তার জামাইবাবুকে। বসিরহাট থানার আইসি গৌতম মিত্র জানান, সঞ্জয় বিশ্বাস নামে এক জনকে ধরে আদালতে তোলা হয়েছে। বিচারক তাকে তিন দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা চেষ্টা করছি, ধৃতকে জেরা করে মূল অভিযুক্তদের খবর জানতে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দ’শেক আগে বাংলাদেশ থেকে সপরিবার এ দেশে আসে নির্মল সরকার। মুম্বইয়ে কয়েক বছর কাটানোর পরে ছ’বছর আগে বসিরহাটের সীমান্তবর্তী ইটিন্ডার নাকুয়াদহ হাজরাতলায় জমি কিনে বাড়ি করে। শুরুর দিকে বাড়িতেই সোনার দোকান করে বন্ধকি কারবার শুরু করে নির্মল। বারো মাস টাকা কিংবা সোনার গয়না রাখলে তেরো মাসের মাথায় মজুরিবিহীন গয়না গড়িয়ে দেওয়া, বাড়তি টাকা দেওয়া বা সোনা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। ব্যবসা বাড়তে থাকে হু হু করে। গ্রামের গরিব মানুষ সাধ্যমতো টাকা, গয়না জমা রাখতে শুরু করেন। বছর দু’য়েক আগে নির্মলের বড় ছেলে তপন মুকুন্দকাটি গ্রামে এবং ছোট ছেলে বিশ্বজিৎ ইটিন্ডা কলেরবাড়ি মোড়ে একটি ক্লাবের নীচে ভাড়া নিয়ে দোকান খুলে ব্যবসা ফেঁদে বসে। ১৫ জুলাই আচমকাই তিনটি দোকানে তালা দিয়ে এলাকা ছেড়েছে পরিবারটি।
এই খবর রটে যেতেই রবিবার আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা ভিড় করেন। বিশ্বজিৎদের দোকান-বাড়িতে ভাঙচুর চলে। স্থানীয় ইটিন্ডা-পানিতর পঞ্চায়েতের প্রধান মোসলেমা বিবি বলেন, ‘‘ছেলেটার ব্যবহারে সকলে ওকে বিশ্বাস করত। তার উপরে তিনটি দোকান, বাড়ি থাকায় মানুষের ভরসা আরও বাড়ে।’’ প্রধান জানান, বিশ্বজিৎতদের কাছে টাকা, গয়না রেখে অনেকে এখন নিঃস্ব। এ দিকে, অনেকের আবার সামনে মেয়ের বিয়ে। সেই বিয়ে বন্ধ হওয়ার জোগাড়। আশপাশের এলাকায় এমন অন্তত দশটি পরিবার আছে বলে জানিয়েছেন প্রধান। স্থানীয় ক্লাবের সদস্য তোয়েব আলি গাজি, আজগার আলি গাজি, রফিকুল সর্দাররা বলেন, ‘‘বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়েছিল ওরা। ব্যবহারও ভাল ছিল। চট করে লোকের মন জয় করে নিতে পেরেছিল। অথচ, তারাই যে এমন প্রতারণা করবে, কেউ ভাবতে পারেনি।
রবিবার পূর্ব আখাড়পুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সোনাভান বিবি। স্বামী রবিউল গাজি এবং দুই মেয়ে, ছেলেকে নিয়ে খড়ের চালের ঘরে বাস। সোনাভান বলেন, ‘‘স্বামী-স্ত্রী অন্যের জমিতে কাজ করে আধ পেটা খেয়ে সংসার চালাই। কয়েক দিন পরেই মেয়েটার বিয়ের কথা। তাই গয়না তৈরির জন্য গরু-ছাগল বিক্রির টাকা জমা রেখেছিলাম বিশ্বজিতের কাছে। সংসার খরচ বাঁচিয়ে প্রতি মাসে একটু একটু করে কয়েক হাজার টাকাও দিয়েছিলাম। বিশ্বজিৎ বলেছিল, ইদের পরে মেয়ের বিয়ের গয়না দেবে। এখন কী ভাবে মেয়েটার বিয়ে দেবো, ভাবতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy