Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Habra Murder

মোবাইল বাড়িতে রেখে অ্যাকশনে গিয়েছিল বান্টিরা

যে ভাবে এত আঁটঘাট বেঁধে খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে বান্টি-অজয়রা, তাতে বিস্মিত তদন্তকারী অফিসারেরাও। কারণ, দু’জনের অতীতে তেমন কোনও অপরাধমূলক কাজের খোঁজ এখনও পর্যন্ত মেলেনি।

অজয়ের বাড়ির এই খাটের নীচ থেকেই উদ্ধার হয় বন্দুক-গুলি। ছবি: সুজিত দুয়ারি

অজয়ের বাড়ির এই খাটের নীচ থেকেই উদ্ধার হয় বন্দুক-গুলি। ছবি: সুজিত দুয়ারি

সীমান্ত মৈত্র
হাবড়া শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৪৯
Share: Save:

শ্বশুর-শাশুড়িকে খুন করতে যাবে বলে নতুন কালো জামাকাপড় কিনেছিল বান্টি। তার পরামর্শে সঙ্গী অজয়ও কিনেছিল কালো পোশাক। দু’জন মুখ ঢেকেছিল মাস্কে। মাথায় টুপি, হাতে ছিল গ্লাভস। অন্ধকারে গা ঢাকা দিতে সুবিধা হবে মনে করেই এই সাজগোজ। বাড়িতে ঢোকার মুখে কেউ দেখে ফেললেও পোশাকের কারণে চেনা যাবে না। মোবাইল টাওয়ারের অবস্থান দেখে পুলিশের যাতে কোনও রকম সন্দেহ না হয়, সে জন্য অ্যাকশনে যাওয়ার সময়ে মোবাইল বাড়িতেই রেখে গিয়েছিল বান্টি সাধু, অজয় দাসরা।

যে ভাবে এত আঁটঘাট বেঁধে খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে বান্টি-অজয়রা, তাতে বিস্মিত তদন্তকারী অফিসারেরাও। কারণ, দু’জনের অতীতে তেমন কোনও অপরাধমূলক কাজের খোঁজ এখনও পর্যন্ত মেলেনি। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘খুব ঠান্ডা মাথায় ভেবেচিন্তে খুনের ছক কষা হয়েছিল। পেশাদার অপরাধীদের মতোই বুদ্ধি খাটিয়েছে অভিযুক্তেরা। মাসখানেক ধরে চলেছে তোড়জোড়।’’

১৫ সেপ্টেম্বর হাবড়ার টুনিঘাটার লন্ডনপাড়ায় রামকৃষ্ণ মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রী লীলারানিকে খুনের ঘটনায় ছোট জামাই বান্টি ও তার বন্ধু অজয়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সম্পত্তির লোভেই খুন বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের।

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, অজয়ের বাইকে রামকৃষ্ণর বাড়িতে পৌঁছয় দুই আততায়ী। গ্রিল বেয়ে ছাদে ওঠে। চিলেকোঠার গ্রিলের দরজার তালা প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে ব্লেড দিয়ে কাটে। তারপরে নীচে নেমে রামকৃষ্ণ ও লীলারানির ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকে দেয়। এরপর তারা রামকৃষ্ণের ভাইপোর ঘর আটকাতে যায়। কিন্তু শব্দ হওয়ায় ভাইপোর ঘুম ভেঙে যায়। সে চিৎকার করে ওঠে। ভয় পেয়ে তখন বান্টি ও অজয় ছাদে চলে যায়। নারকেল গাছ বেয়ে নীচে নেমে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে থাকে।

প্রাক্তন সেনাকর্মী রামকৃষ্ণ ও তাঁর স্ত্রীরও ঘুম ভাঙে। তাঁরা বাইরে আসেন। খোঁজাখুঁজি করে কাউকে দেখতে পাননি। রামকৃষ্ণ ও লীলারানির দীর্ঘদিনের অভ্যাস, ঘরের বাইরে বের হলে হাত-পা ধুয়ে ঘরে ঢোকা। সেই মতো লীলারানি উঠোনে কলে পা ধুতে যাচ্ছিলেন। পুলিশের দাবি, সে সময়ে খুব কাছ থেকে বান্টি শাশুড়ির মাথায় গুলি করে। আওয়াজ পেয়ে রামকৃষ্ণ এগিয়ে আসতেই বান্টি কাছ থেকে তাঁর বুকে গুলি করে।

বাইক নিযে চম্পট দেয় দু’জন। গলিপথ ধরে বান্টিকে জয়গাছির বাড়িতে নামিয়ে অজয় নিজের দক্ষিণ হাবড়ার বাড়িতে ফিরে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, বড় রাস্তায় সিসি ক্যামেরা আছে, পুলিশের টহল থাকে। এ সব মাথায় রেখেই গলিপথ ধরেছিল আততায়ীরা।

জোড়া খুনের ঘটনায় মূল অভিযোগের তির ছিল রামকৃষ্ণর ভাইঝির পুরনো প্রেমিকের দিকে। তন্ময় বর নামে সেই যুবক গ্রেফতার হওয়ায় বান্টিরা আশ্বস্ত হয়। কিন্তু শেষমেশ ছবিটা বদলে যায়। ধরা পড়ে বান্টি-অজয়। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তন্ময়কে শুক্রবার বারাসত জেলা আদালতে তোলা হলে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চার্জশিটে তন্ময়ের নাম বাদ দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Habra Murder Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE