Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Election In Argentina

ভোটের সময়ে সবাই এখানে রাজনীতিবিদ

আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় প্রস্তুতি। প্রস্তুতি শুধু সরকারি কাজের নয়, সারা দেশ উত্তেজনায় ফুটতে থাকে।

—প্রতীকী চিত্র।

পরাগ চট্টোপাধ্যায়
বুয়েনস আইরেস, আর্জেন্টিনা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:১৬
Share: Save:

ভারতে নির্বাচনের দামামা বেজেছে, আর মাস ছয়েক আগেই হয়ে যাওয়া আর্জেন্টিনার সাধারণ নির্বাচনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।

বুয়েনোস আইরেসে আছি বছর সাতেক হয়ে গেল। ভোটের উত্তাপ আর রাজনীতি এই দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুভূত হয়। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় প্রস্তুতি। প্রস্তুতি শুধু সরকারি কাজের নয়, সারা দেশ উত্তেজনায় ফুটতে থাকে। রাজধানী বুয়েনোস আইরেসের বাস, মেট্রো, রাস্তা-ঘাটে একটাই আলোচনা— নির্বাচন। সেখানেই সীমাবদ্ধ নয়, আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই, এই ক’দিন সেখানেও ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক, সবাই যে যার নিজস্ব রাজনৈতিক মতামত নিয়ে আলোচনা এবং তর্কবিতর্কে মেতে ওঠেন। যেমন বিশ্বকাপের সময়ে সবাই এখানে ফুটবল বিশেষজ্ঞ, তেমন নির্বাচনের এই কটা দিনের জন্য সবাই যেন রাজনীতিবিদ বা অর্থনীতিবিদ।

এই দেশটা ফুটবল থেকে রাজনীতি, সবেতেই বেশ বিভক্ত। তবে আর যাই হোক, আর্জেন্টিনা আবেগে ভরপুর। ভোট গোপন হলেও এখানে প্রায় সবাই নিজেদের রাজনৈতিক মতামত নিয়ে বেশ খোলামেলা এবং যুক্তি ও আবেগের সঙ্গে রক্ত গরম করা তর্কেও প্রস্তুত। শুধু তা-ই নয়, এখানে কাকে ভোট দেওয়া হবে, সেই নিয়ে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া বা বন্ধুত্ব ভেঙে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেই।

আর্জেন্টিনার নির্বাচন প্রেসিডেন্ট-কেন্দ্রিক। এ ছাড়া, প্রত্যেক প্রদেশেও নির্বাচন হয়। ১৮ থেকে ৭০ বছর বয়সিদের ভোট দেওয়া এখানে বাধ্যতামূলক। এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ায় আমিও ভোট দিই। নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থীদের বিতর্ক সভা হয়। সেই থেকে প্রতিটা মুহূর্তে উত্তেজনা। মোড়ের মাথায়, অফিসে-বাড়িতে শুরু হয়ে যায় জল্পনা, কে জিতবে। এখানকার প্রচারটাও বেশ অন্য রকম। মোড়ে মোড়ে পথসভা না হলেও, কিছু বড় জায়গায় সভা করেন প্রার্থীরা, অনেকটা আমাদের ব্রিগেডের সভাগুলোর মতো। এ ছাড়া, সামাজিক মাধ্যম বা গণমাধ্যমেও প্রচার হয়।

সব থেকে আকর্ষণীয় হল সাধারণ মানুষের প্রচার। যাঁরা হয়তো প্রার্থীই নন, বা সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভুক্তও নন, এমন মানুষজনও মেট্রো-বাস-ট্রেনে চলতে চলতে প্রচার করেন। গানের বা কবিতার মাধ্যমে তাঁদের রাজনৈতিক মতাদর্শ তুলে ধরেন। সাধারণ মানুষও তাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাল মেলান। নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে এই রাজনৈতিক উত্তাপ প্রত্যেক মুহূর্তে এই শহরের শিরায় শিরায় বোঝা যায়।

ভোট হয় রবিবার। সে দিন উৎসব, উৎকণ্ঠা সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। ভোটের লড়াই ছাড়াও এই দিনটা পারিবারিক মিলনেরও দিন। সকাল থেকেই সপরিবার ভোটের লাইনে দাঁড়ানো, সেখান থেকে সপরিবার রেস্তরাঁয় খেতে যাওয়া, বিকেল পর্যন্ত বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া, আর সন্ধেবেলা টিভির পর্দায় চোখ রেখে অপেক্ষা করা— কে সরকার গড়বে পরের চার বছর।

এই কয়েক মাসের রুদ্ধশ্বাস নির্বাচনের সঙ্গে কলকাতা থেকে ষোলো হাজার কিলোমিটার দূরের আর্জেন্টিনার এই শহরে কোথাও যেন একটা আবেগ এক হয়ে যায়। আর এই উৎকণ্ঠা, প্রচার, তর্কবিতর্ক, উত্তেজনার মাঝে জিতে যায় একজনই— গণতন্ত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Election Process Argentina
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE