ভাঙন: গারুলিয়ার কাঙালিঘাটে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
পাড় ভাঙছে। ঘরও ভাঙছে।
চোখের সামনে নিজের বসত ভিটে গঙ্গায় তলিয়ে যেতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন বছর আশির চামেলিদেবী। সেই কোন ছোটবেলায় পাটনা থেকে গারুলিয়ার কাঙালিঘাটে আসা। এখানে ঘর গেরস্থালি। গঙ্গার কোলে ঘর। নিয়ম করে ফি বছর গঙ্গা পুজো দিয়েছেন।
সোমবার ফাটল বড় হয়েছিল দেওয়ালে। মঙ্গলবার ভোরে দেওয়াল, মেঝে সব এক হয়ে তলিয়ে গেল গঙ্গায়। বৃষ্টি মাথায় করে দু’হাত দূরে দাঁড়িয়ে দেখলেন। দুপুর গড়িয়ে বৃষ্টি থামলেও ঠিকানা হারানো চামেলিদেবী কেঁদেই চলেছেন। বিয়ের সময়ের স্মৃতি পিতলের কলসিতেই ছিল শেষ সম্বল ক’টা টাকা আর গয়না। হুড়মুড়িয়ে ঘরটা যখন ভেঙে পড়ল, কোনও রকমে নিজেরা বেরিয়ে এসেছিলেন। কলসি তলিয়ে গিয়েছে গঙ্গায়। প্রতিবেশী রামনাথ চৌধুরী, দ্বারিকা চৌধুরীর ঘরও গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে। এ দিন সন্ধ্যায় ফের গঙ্গায় জল বাড়লে জলের ধাক্কায় পাড় ভাঙে। কৈলাশ চৌধুরীর ঘরের একটি দেওয়াল ভেঙে পড়ে। তলিয়ে যায় কানাই চৌধুরীর ঘর।
গারুলিয়ার কাঙালি ঘাটে ফি বছর গঙ্গার ভাঙনে ঘর ভাঙার ঘটনা ঘটলেও প্রশাসনিক তৎপরতা কম বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এই এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দাই মৎস্যজীবী। বহু বছর ধরে গঙ্গার ধারে বাস করেন। প্রতি বছর বর্ষা এলেই আতঙ্কে ভোগেন সকলে। গঙ্গার ভাঙনে প্রতি বছরই ঘর ভাঙে কারও না কারও।
ভাঙন আটকানোর জন্য বিভিন্ন সময় প্রশাসনিক বৈঠক হলেও সম্প্রতি পদক্ষেপ করা হয়েছে। সোমবারই সেচমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁর দফতরের ক্যানাল ডিভিশনের বাস্তুকারেরা কাঙালি ঘাটে বাঁধ দেওয়ার চূড়ান্ত মাপজোক সেরেছেন। পাড় বাঁধাতে ৫৬ লক্ষ টাকা অনুমোদনও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বর্ষার জন্য আপাতত শাল খুঁটি দিয়ে বাঁধ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাস্তুকারেরা। ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী জানান, বাসিন্দাদের অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করেছে পুরসভা। প্রশাসনিক বৈঠকে এই বিষয়ে পুরসভাকে বলাও হয়েছে, যাতে দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়।
পুর প্রশাসনের উদ্যোগে স্থানীয় হরজিন্দর রোডে গঙ্গার পাড়ের পরিবারগুলিকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে ঘর তৈরির কাজও শুরু করছে পুরসভা। যত দিন সেই কাজ শেষ না হয়, তত দিন পুরসভার কমিউনিটি হলে ঠাঁই দেওয়া হবে বাস্তুহারাদের। আপাতত তাঁদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা পুরসভা করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পুরপ্রধান সুনীল সিংহ। ওই এলাকার ১২টি পরিবারকে ঘর বানিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত পুরসভা নিলেও অনেকেরই বক্তব্য, মৎসজীবী হওয়ায় গঙ্গার পাড়ে থাকাটা সুবিধাজনক। কিন্তু এই নতুন ঠিকানা গঙ্গা থেকে বেশ কিছুটা দূরে। সুনীলবাবু বলেন, ‘‘আপাতত জীবন রক্ষা পাক এটাই দরকার। পরে সুবিধা-অসুবিধার প্রশ্ন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy