Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Coronavirus

করোনা পরীক্ষা বাড়িয়ে দিশার খোঁজ দক্ষিণে

জুলাই মাসের গোড়ার দিকে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল একশোর অনেকটাই নীচে। ক্রমে বাড়তে বাড়তে গত ২১ জুলাই জেলায় করোনা আক্রান্ত হন ২০৭ জন। জেলা প্রশাসনের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, এক দিনে আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে এটাই ছিল সর্বোচ্চ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সমীরণ দাস
বারুইপুর শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২০ ০৪:১১
Share: Save:

আক্রান্তের সংখ্যা একই গণ্ডির মধ্যে ঘোরফেরা করছে। আবার দৈনিক আক্রান্তের থেকে সুস্থতার হার বেশি। ফলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার অ্যাক্টিভ করোনা-রোগীর সংখ্যা এখনও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে বলে দাবি স্বাস্থ্য দফতরের। তবে মাসখানেক আগে দৈনিক আক্রান্তের গড় সংখ্যা ছিল একশোর নীচে। সেই সংখ্যা বর্তমানে দু’শো ছুঁই-ছুঁই। আপাতত আক্রান্তের সংখ্যা নামিয়ে আনাই চ্যালেঞ্জ জেলা প্রশাসনের কাছে। সেই লক্ষ্যে আরটিপিসিআর পদ্ধতির পাশাপাশি অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে করোনা-পরীক্ষা চালু হয়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহে সেই লক্ষ্য পূরণ হবে বলে আশাবাদী জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

জুলাই মাসের গোড়ার দিকে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল একশোর অনেকটাই নীচে। ক্রমে বাড়তে বাড়তে গত ২১ জুলাই জেলায় করোনা আক্রান্ত হন ২০৭ জন। জেলা প্রশাসনের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, এক দিনে আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে এটাই ছিল সর্বোচ্চ। তবে আশার কথা, তারপর থেকে গত সাত দিনে আক্রান্তের সংখ্যার গ্রাফ পুরোপুরি নিম্নমুখী না হলেও দু’শোর নীচেই রয়েছে।

এই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই বেশ কিছু এলাকাকে কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করে লকডাউন জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, আক্রান্তের সংখ্যা কমাটা লকডাউনের প্রাথমিক ফল হতে পারে। তবে দক্ষিণ ২৪ পরগনা স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ সোমনাথ মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, “এক সপ্তাহের নিরিখে স্থায়ী সিদ্ধান্তে আসা ঠিক হবে না। গত এক সপ্তাহে সংক্রমণের হার কমেছে। কিন্তু আগামী সপ্তাহেই আবার সংখ্যাটা বাড়তে পারে। অন্তত ছয় সপ্তাহ যদি এই ব্যাপারটা ধরে রাখা যায়, তা হলে অনেকটাই নিশ্চিন্ত হওয়া যেতে পারে। আমরা সেই চেষ্টাই করছি।”

লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনা এবং কলকাতায় আক্রান্তের হার রোজই আশঙ্কা বাড়াচ্ছে। তবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখনও পাঁচ হাজারের মধ্যেই রয়েছে। তার মধ্যে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা এই মুহূর্তে হাজার দেড়েক। সব থেকে উল্লেখযোগ্য, জেলায় মৃত্যুর হার বেশ কম। পড়শি উত্তর ২৪ পরগনায় যেখানে তিনশোরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, সেখানে এই জেলায় মৃতের সংখ্যা ৭৭ জন।

তবে কোনও ভাবেই গা ছাড়া মনোভাব দেখাতে নারাজ জেলা প্রশাসন। আরও বেশি করে পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই ব্লক হাসপাতালগুলিতে লালারস সংগ্রহের দিন বাড়ানো হয়েছে। আপাতত বিভিন্ন ব্লক হাসপাতালে তিন-চার দিন করে লালারস সংগ্রহ করা হবে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে রোজ লালারস সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সপ্তাহখানেক আগেও ব্লক হাসপাতালগুলিতে দিনে ২৫ জনের নমুনা সংগ্রহ হত। সেই সংখ্যা বাড়িয়ে ৩৫-৫০ করা হয়েছে নতুন নির্দেশিকায়।

পাশাপাশি শুরু হচ্ছে নতুন পদ্ধতি অ্যান্টিজেন টেস্ট। যার সাহায্যে স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যেমে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই করোনা-আক্রান্ত কিনা তার আভাস পাওয়া যাবে। ডায়মন্ড হারবারে ইতিমধ্যেই অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হয়ে গিয়েছে। বাকি অংশেও শুক্রবার থেকে এই পদ্ধতিতে টেস্ট শুরু হওয়ার কথা। অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হলে প্রাথমিক ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সিএমওএইচ বলেন, “টেস্ট শুরু হলে আক্রান্তের সংখ্যা এক ধাক্কায় বাড়তে পারে। তবে তাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। একটা স্থিতাবস্থায় পৌঁছনোর জন্য এই পদক্ষেপ জরুরি।”

(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে—পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ১২৮। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ১৪৮। তার আগের দু’দিন ছিল ১১৫ এবং ১০১। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ১৩৬ এবং ১৪২। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ১২৮, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যার গড় পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Covid-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE