সিপিএম প্রার্থী মায়া ঘোষের (ডান দিকে) সঙ্গে হাত মেলালেন তৃণমূল প্রার্থী মৌসুমী চক্রবর্তী। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
গ্রিলের দরজা, পাঁচিল থেকে নিজেদের দলের পতাকা, ফ্লেক্স খুলে ফেলছিলেন প্রার্থী। আশপাশের লোকজন যা দেখে দৃশ্যতই বাকরুদ্ধ।
শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বিরোধীরা যখন রাজ্য জুড়ে সরব, তখন এমনই উল্টো চিত্র দেখা গেল বনগাঁয়। সিপিএমের কার্যালয় থেকে পতাকা, ফ্লেক্স খুলে নিজেদের পতাকা লাগিয়ে ওই কার্যালয় দখলের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী নিজে হাজির থেকে দলের পতাকা খোলার ব্যবস্থা করলেন। তৃণমূলের স্থানীয় বিধায়কও ছিলেন সেখানে। সিপিএম প্রার্থীর সঙ্গে চা খেতে খেতে এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা নিয়ে আলোচনা হল দু’পক্ষের। সব দেখে শুনে স্বস্তিতে স্থানীয় মানুষও।
সোমবার সিপিএমের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে তাদের প্রার্থী মায়া ঘোষের নির্বাচনী কার্যালয় রাতের অন্ধকারে দখল করে নিয়েছে তৃণমূল। দীর্ঘদিন ধরেই ওই অফিসটি সিপিএমের বিভিন্ন শাখা সংগঠনের কাজে ব্যবহার হয়। অভিযোগ ছিল, রবিবার গভীর রাতে তৃণমূলের লোকজন ওই কার্যালয় থেকে মায়াদেবীর সমর্থনে লাগানো ব্যানার-পোস্টার-ফ্লেক্স-পতাকা ছিঁড়ে ফেলে। তৃণমূল প্রার্থী মৌসুমী চক্রবর্তীর সমর্থনে ব্যানার-ফ্লেক্স-পতাকা সেখানে লাগিয়ে দেওয়া হয়। যা নিয়ে থানায় অভিযোগও দায়ের করেন সিপিএম নেতৃত্ব।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ওই কার্যালয়ের সামনে আচমকাই হাজির হন স্থানীয় বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। মৌসুমীদেবী-সহ দলের কয়েক জনকেও ডেকে নেন তিনি। গাড়ি থেকে নেমে প্রথমেই বিধায়ক ওই কার্যালয় নিজের চোখে দেখেন। এরপরে কাছেই এক ব্যক্তির বাড়িতে ঢুকে পড়েন সকলে। সেখানে উঠোনে চেয়ার পেতে বসার ব্যবস্থা হয়। সিপিএমের এক কর্মীর মাধ্যমে খবর যায় মায়াদেবীর কাছে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই চলে আসেন মায়াদেবী, তাঁর স্বামী মদনবাবু। সিপিএমের আরও কয়েক জন নেতা-কর্মী ছিলেন তাঁদের সঙ্গে। কেন মৌসুমীদেবীরা তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন, তা তখনও পরিষ্কার নয় মায়াদেবীদের কাছে।
এক গাল হেসে বরফ গলালেন বিশ্বজিৎবাবুই। বলেন, ‘‘বনগাঁর রাজনীতিতে দলীয় কার্যালয় দখলের এমন ঘটনা অতীতে কখনও ঘটেনি। রাতের অন্ধকারে কারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে তা আমরা জানতাম না। কিন্তু আমাদের পতাকা ও ফ্লেক্স যখন রয়েছে, তখন আমরা দায় অস্বীকারও করতে পারি না।’’ এমন খবর পেয়েই তাঁরা পরিস্থিতি ঘুরে দেখতে এসেছেন বলে জানান। মায়াদেবী বিধায়ককে অনুরোধ করেন, পুরভোট যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মেটে, সে দিকে নজর রাখতে। বিধায়ক সব রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দেন মায়াদেবীদের।
ইতিমধ্যে বিধায়ককে উঠে পড়তে দেখে মদনবাবু অনুরোধ করেন চা খেয়ে যাওয়ার জন্য। প্রথমে নিমরাজি হলেও চা পানের অনুরোধ ফেরাননি বিশ্বজিৎবাবুরা। একই এলাকায় থাকার সুবাদে প্রার্থীরাও পূর্ব পরিচিত। দুই প্রার্থীকে দেখা যায়, একে অন্যের হাত ধরে বলছেন, ‘‘আমরা সকলেই চাই শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট মিটুক।’’ সিপিএম প্রার্থী বলেন, ‘‘মৌসুমী তো আমার দূরের কেউ নয়। আমার কাছের এক জন।আজকে খুবই ভাল লাগছে।’’
ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে সকলে যান সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে। মৌসুমীদেবী-সহ কয়েক জন তাঁদের দলীয় পতাকা-ফ্ল্যাগ-ফ্লেক্স খোলার কাজে হাত লাগান। মায়াদেবীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ফ্লেক্স খুলে ফেলাটা বড় কথা নয়। আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বটা যেন বজায় থাকে।’’ ঘাড় নেড়ে সম্মতি দেন মৌসুমী। তিনি বলেন, ‘‘ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, মিটেও গিয়েছে।’’
পাশের একটি বাড়িতে তত ক্ষণে চা তৈরি হয়েছে। সেখানে বসে চা খেতে খেতে কিছু ক্ষণ গল্প-গুজব করেন সকলে। বিধায়ক পরে বলেন, ‘‘ঘটনাটির কথা জানতে পেরে আমি দলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে জানাই। তিনি আমাকে এখানে আসতে বলেছিলেন।’’
জ্যোতিপ্রিয়বাবুর কথায়, ‘‘অতি উৎসাহী কেউ কেউ দলের ক্ষতি করতে এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। খোঁজ নিচ্ছি। আমরা রাজনৈতিক হিংসা-সন্ত্রাসে মদত দিই না। অন্য দলের রাজনৈতিক অফিস দখল করাটা কোনও ভাবেই প্রশ্রয় দিই না।’’ জ্যোতিপ্রিয়বাবুর দাবি, অতীতে হাবরায় সিপিএমের বন্ধ পার্টি অফিস খোলানোর ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy