Advertisement
০৪ মে ২০২৪

বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার অফিসে ভাঙচুর

দিনের পর দিন হুকিং করে বিদ্যুৎ নিয়ে কাজ চালাচ্ছিলেন ডায়মন্ড হারবার থানার চাঁদনগর-মল্লিকপাড়া এলাকার বেশ কিছু বাসিন্দা। গত মঙ্গলবার ব্যাপক ঝড়বৃষ্টির পরে এলাকার একটি ট্রান্সফর্মার বসে যায়। সেটি সারানোর পর ফের খারাপ হয়ে যায়। তার জেরে শনিবার দু’টি মিনিডোর ভাড়া করে এসে ডায়মন্ড হারবার সাপ্লাই অফিসে এসে ভাঙচুর চালান এলাকার লোকজন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫০
Share: Save:

দিনের পর দিন হুকিং করে বিদ্যুৎ নিয়ে কাজ চালাচ্ছিলেন ডায়মন্ড হারবার থানার চাঁদনগর-মল্লিকপাড়া এলাকার বেশ কিছু বাসিন্দা। গত মঙ্গলবার ব্যাপক ঝড়বৃষ্টির পরে এলাকার একটি ট্রান্সফর্মার বসে যায়। সেটি সারানোর পর ফের খারাপ হয়ে যায়। তার জেরে শনিবার দু’টি মিনিডোর ভাড়া করে এসে ডায়মন্ড হারবার সাপ্লাই অফিসে এসে ভাঙচুর চালান এলাকার লোকজন। মারধর করা হয় স্টেশন ম্যানেজার অভিজিৎ পাত্রকে। হেনস্থা হন সাপ্লাই অফিসের এক মহিলা কর্মী শেফালি গিরি। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার তরফে থানায় অভিযোগ করার পরে তিন জনকে ধরে পুলিশ। ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন এলাকার বিধায়ক দীপক হালদার।

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চাঁদনগরে যে ট্রান্সফর্মারটি রয়েছে তা থেকে চাঁদনগর, মল্লিকপাড়া, জমাদারপাড়া, দেউলপোঁতা, মোল্লাপাড়া, শেখপাড়া এলাকার শ’দুয়েক বাড়িতে বৈধ সংযোগ রয়েছে। কিন্তু তার চেয়ে বেশি সংখ্যায় রয়েছে হুকিং। মঙ্গলবার ঝড়ের বেশ কিছু জায়গায় তার ছিঁড়ে সেটি অকেজো হয়ে পড়ে। সাপ্লাই অফিসের কর্মীরা পর দিন, বুধবার সকালে সেটি সারাতে গেলে তাঁদের এলাকায় রাত পযন্ত আটকে রেখে কাজ করান এলাকার মানুষ। সাপ্লাই অফিসের কর্মীদের দাবি, হুকিংয়ের চাপ সামলাতে না পেরে ট্রান্সফর্মারটি ফের বসে যায়। মানুষ সেই রাগে শনিবার এলাকা থেকে দু’টি মিনিডর এবং কিছু বাইক নিয়ে চলে আসেন ডায়মন্ড হারবার সাপ্লাই অফিসে।

হেনস্থার মুখে পড়া শেফালিদেবী বলেন, ‘‘এ দিন সাড়ে দশটা নাগাদ একটি ফোন পাই। ওপ্রান্ত থেকে বলা হয়, তোদের আটকে রেখেছিলাম মনে নেই? দাঁড়া আজ আবার সাইজ করতে আসছি।’’ এ রকম হুমকি ফোন প্রায় রোজই আসে বলে আলাদা করে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। শেফালিদেবীর কথায়, ‘‘বেলা সাড়ে ১১ টা নাগাদ দু’টি গাড়ি, বাইকে করে ওরা এসেই আমার কেবিনের ঠিক বাইরে থেকে জানালার কাচ ভাঙতে শুরু করে। আমার কেবিনের মধ্যে ঢুকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করে।’’ টেলিফোনের তার ছিঁড়ে ফেলে হামলাকারীরা। আগেও একবার একই ভাবে রায়নগর এলাকার বাসিন্দাদের হাতে হেনস্থা হতে হয় দফতরের কর্মীদের। আতঙ্কে আছেন বলে জানান শেফালিদেবী।

ঝামেলার সময়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মেটাতে গিয়ে ব্যাপক মারধরের শিকার হন স্টেশন ম্যানেজার অভিজিৎ পাত্র। তাঁর ঠোঁট কেটে রক্ত বেরোতে থাকে। মুখে কালসিটের দাগ পড়ে যায়। তাঁকে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে মাথার স্ক্যান করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ঘটনা ঠেকাতে গিয়ে মার খান অফিসের আরও দু’একজন কর্মী। বিলিং সেকশনের একটি কম্পিউটার ভাঙা হয়। তাণ্ডব চালানো হয় ক্যাশ সেকশনে ঢুকেও। সিসিটিভি ফুটেজে সে সবই ধরা আছে।

১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া সাপ্লাই অফিসের উল্টো দিকে রাস্তা পেরোলেই থানা। কর্মীদের দাবি, হামলার সময়ে থানায় ফোন করে সাড়া না পেয়ে দৌড়ে একজন থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে একটি গাড়ি, তার চালক সহ মোট তিন জনকে গ্রেফতার করে। রবিবার অবশ্য সকলেই জামিন পেয়ে গিয়েছেন। এ দিকে, মারধরের পরে এ দিন কাজে আসেননি অভিজিৎবাবু।

শনিবার এই গোলমালের ঘটনায় হামলাকারীরা নিজে এলাকার বিধায়ক দীপক হালদারকে খবর দেয়। তিনি এসে ডিভিশনাল ম্যানেজারের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন। সাপ্লাই অফিসের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, ২১ এপ্রিল ঝড়ের তাণ্ডবে বেশ কিছু গাছ ভেঙে, তার ছিঁড়ে, খুঁটি উপড়ে পরিষেবা ব্যাপক ভাবে মার খেয়েছে। সীমিত পরিকাঠামো নিতে তাঁরা দিন রাত কাজ করে সংযোগ স্বাভাবিক করার কাজ করছেন। কিন্তু এ ভাবে চড়াও হয়ে ভাঙচুর করলে ভয়ে এলাকায় যেতে চাইবেন না কর্মীরা।

হুকিংয়ের সমস্যা স্বীকার করে নিয়ে দীপকবাবু এ দিন বলেন, ‘‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা। পরিষেবা প্রয়োজন হলে সংযোগের জন্য আবেদন করতে হবে এলাকার মানুষকে। সে ক্ষেত্রে সমস্যা হলে আমরা নিশ্চয় দেখব। কিন্তু তা না করে যদি হুকিং করে তার পরে তাঁরা এ ভাবে চড়াও হন, মারধর করেন, তা হলে তাদের পাশে আমরা কোনও ভাবেই দাঁড়াতে পারব না।’’

এই প্রসঙ্গে চাঁদনগর এলাকার বাসিন্দা রাজু শেখ আবার বলেন, ‘‘অফিসের লোকজনকে ফোন করলে পাওয়া যায় না। বার বার বলেও কাজ হয় না। হুকিং করে বিদ্যুৎ জ্বলে অনেক বাড়িতে। কিন্তু ট্রান্সফর্মারও সারানো প্রয়োজন। তা হয়নি বলেই এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ভাঙচুর করেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE