Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

দেগঙ্গার গ্রামে গাছের ডালে মিলল মহিলার দেহ

মৃত্যুর পরে আমিনার বাড়ির লোকেরা পুলিশে অভিযোগ করে জানিয়েছেন, পণের দাবিতে নিত্য অশান্তি এবং অত্যাচার চলত।

আমিনা বিবি

আমিনা বিবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৮ ১৬:৩৭
Share: Save:

স্বামীর সঙ্গে নিত্য অশান্তি সহ্য করতে না পেরে দেড় বছরের ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন স্ত্রী। ওই বাড়িতে গিয়ে, স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে কেনাকাটা আর বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে ওই মহিলাকে নিয়ে বেরোন স্বামী। পরদিন, শুক্রবার সকালে শ্বশুরবাড়ির আমবাগানে পা মুড়ে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় মিলল সেই বধূর মৃতদেহ। পুলিশ জানিয়েছে, ম়ৃতার নাম আমিনা বিবি (৩৫)। দেগঙ্গার চাঁপাতলার কুমরুলির ঘটনা।

মৃত্যুর পরে আমিনার বাড়ির লোকেরা পুলিশে অভিযোগ করে জানিয়েছেন, পণের দাবিতে নিত্য অশান্তি এবং অত্যাচার চলত। তার থেকে মুক্তি পেতেই শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে নিজের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন আমিনা। পরিজনেদের অভিযোগ, আমিনাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। দেগঙ্গা থানার পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার পর থেকে আমিনার স্বামী নাসিরউদ্দিন মল্লিক পলাতক। শ্বশুর নজরুল মোল্লাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।’’

স্থানীয় সূত্রে খবর, বছর দশেক আগে দেগঙ্গার হড়পুকুরের বাসিন্দা আমিনার সঙ্গে কুমরুলির নাসিরউদ্দিনের বিয়ে হয়। তাঁদের তিন ছেলে-মেয়ে। আমিনার দাদা রসুল মণ্ডল শুক্রবার বলেন, ‘‘বিয়েতে সাধ্যমত পণ দেওয়া হয়েছিল। তার পরেও টাকার দাবিতে বোনকে মারধর করতেন ওঁরা। এলাকায় সালিশি সভাও হয়, তবে সমাধান মেলেনি। কিছু দিন আগে বোন বাচ্চাকে নিয়ে আমাদের কাছে চলে আসে।’’

আমিনার বড় ভাই জুলফিকর আলি মণ্ডল জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নাসিরউদ্দিন তাঁদের বাড়িতে যান। নিজের ভুল স্বীকার করে আমিনাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান। জুলফিকর জানান, আমিনাকে হাড়োয়ায় নিয়ে গিয়ে কিছু কেনাকাটা করার কথা বলেছিলেন নাসিরউদ্দিন। এর পরে দেড় বছরের ছেলেকে বাপের বাড়িতে রেখেই স্বামীর সঙ্গে বেরিয়েছিলেন আমিনা। রাত হয়ে গেলেও বোন বাড়ি না ফেরায় তাঁর শ্বশুরবাড়িতে খোঁজ করতে যান জুলফিকরেরা। আমিনার পরিজনেদের বক্তব্য, সেখানে জানানো হয়, দু’জনের কেউই ওই বাড়িতে যাননি। এ দিকে, মায়ের জন্য সারা রাত কান্নাকাটি করতে থাকে শিশুটি। শেষে শুক্রবার ভোরে খবর আসে, শ্বশুরবাড়ির বাগানে উদ্ধার হয়েছে আমিনার ঝুলন্ত দেহ।

স্থানীয়েরা জানান, আমগাছের একটি ডাল থেকে ঝুলন্ত একটি দড়ির ফাঁস আমিনার গলায় লাগানো ছিল। মাটিতে হাঁটু মুড়ে বসানো অবস্থায় ছিল দেহটি। ওই নিচু ডালে কী করে কেউ নিজে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলতে পারেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ঘটনাটি জানাজানি হতেই ক্ষোভ ফেটে পড়েন স্থানীয় মানুষ। পরে পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠায়। হাদিপুর ঝিকরা ২ পঞ্চায়েতের প্রধান সাহাবুদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘‘যে ভাবে দেহটি ছিল, তাতে আমাদেরও সন্দেহ হচ্ছে। পুলিশ তদন্ত করে দোষীকে সাজা দিক।’’ জুলফিকর বলেন, ‘‘পণের দাবিতে বোনকে খুন করে ওঁরা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।’’

এলাকার বাসিন্দা আরিফুল মল্লিক বলেন, ‘‘বিয়ের পর থেকে অশান্তি লেগেই থাকত। বহু বার সালিশি সভা করেও মেটেনি।’’ আমিনার ন’বছরের মেয়ে তাজকুরানা খাতুন বলে, ‘‘মা রাগ করে এক মাস আগে আমাকে বাবার কাছে রেখে চলে যায়। কাল এই বাড়িতে আসেনি। ভোরে দাদু আমবাগানে মাকে দেখতে পায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Amina Bibi tree bough Dead Body
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE