এইসব আবাসন ঘিরেই উঠছে প্রশ্ন। ছবি: শৈলেন সরকার।
কারখানায় উৎপাদন প্রায় বন্ধ। স্থায়ী কর্মীও নেই। কিন্তু কর্মী আবাসন খালি নেই।
কুলটি কারখানার এই সব আবাসন থেকে দখলদারদের তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। গুণতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকার বিদ্যুতের বিল। জল সরবরাহ করতে গিয়ে খরচ হচ্ছে লক্ষ-লক্ষ টাকা। চুক্তির ভিত্তিতে থাকার ব্যবস্থা করা হলেও বসবাসকারীরা সে ব্যাপারে কোনও আগ্রহ দেখাননি বলে অভিযোগ কারখানা কর্তৃপক্ষের। আবাসনের বাসিন্দাদের অবশ্য পাল্টা দাবি, চুক্তির টাকার অঙ্ক অনেক বেশি। তা দেওয়া সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে আবাসন দখলমুক্ত করতে বিদ্যুতের লাইন কাটতে গেলে বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন কারখানার কর্মীরা।
রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা সেল বিকাশ দফতরের অধীনস্থ কুলটি কারখানার প্রায় চার হাজার কর্মী আবাসন রয়েছে। কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় সাড়ে তিনশো আবাসন বাদে বাকি সবই এখন দখলদারদের কব্জায়। দখল উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু হতেই এলাকায় বিক্ষোভ দানা বাঁধছে। সংস্থার কর্তারা জানান, ২০০৩ সালের ৩১ মার্চ কারখানার ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়। তখন কর্মরত প্রায় তিন হাজার শ্রমিক-কর্মী স্বেচ্ছাবসর নিয়ে নিজেদের পাওনাগণ্ডা বুঝে নেন। এর পরে প্রাক্তন শ্রমিক-কর্মীদের অনেকে চলে গেলেও কেউ কেউ আবাসনেই থেকে গিয়েছেন। কিছু আবাসন ফাঁকা পড়ে থাকায় দখল হয়ে গিয়েছে। সেই থেকে সংস্থার হাজার-হাজার আবাসন জবরদখল হয়ে রয়েছে।
আবাসনগুলির অনেকটা অংশেই কারখানার প্রাক্তন শ্রমিক-কর্মীরা থাকায় মানবিকতার খাতিরে কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের সংযোগ ছিন্ন করেননি। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ সালে এই কারখানা ফের খুলে দেয় ইস্পাত মন্ত্রক। কিন্তু স্থায়ী শ্রমিক-কর্মী নিয়োগ হয়নি। ঠিকাদারি প্রথায় সামান্য উৎপাদন শুরু হলেও লাভের মুখ দেখছে না কারখানা। তার উপরে আবার গুণতে হচ্ছে কর্মী আবাসনগুলির জল ও বিদ্যুতের খরচ। জানা গিয়েছে, বিদ্যুৎ বাবদ প্রতি বছর প্রায় এগারো কোটি টাকা ও জলের জন্য আরও কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে সংস্থার।
কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বড় অঙ্কের খরচ বাঁচতে শিমূলগ্রাম ও ইন্দিরা গাঁধী কলোনির আবাসনগুলির বিদ্যুৎ ছিন্ন করা হয়। কিন্তু পানীয় জলের সংযোগ রেখে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ ছিন্ন করা যায়নি স্কুলপাড়া, বাবুপাড়া, আপারকুলটি এলাকায়। কারণ, এই এলাকার বেশ কিছু আবাসনে সেলের বার্নপুর কারখানা ও রামনগর কোলিয়ারির বহু কর্মীকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় কুলটি কারখানা কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, দখল হয়ে থাকা আবাসনগুলি নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে প্রাক্তন কর্মীদেরই ৩৩ মাসের চুক্তির ভিত্তিতে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হবে। মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরে কর্মীরা চাইলে চুক্তি নবীকরণ করাতে পারবেন।
কারখানা কর্তৃপক্ষ ঠিক করেন, আবাসনে থাকার অনুমতি পেতে এককালীন তিন লক্ষ টাকা ‘সিকিওরিটি মানি’ হিসেবে জমা রাখতে হবে। ঘরের ভাড়া, জল ও বিদ্যুতের খরচ বাবদ প্রতি মাসে এক হাজার চারশো টাকা করে দিতে হবে। মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরে কেউ যদি থাকতে না চান তবে তিনি ‘সিকিওরিটি’র টাকা ফেরত পাবেন। সেই মতো বছর তিনেক আগে সংস্থার তরফে বিজ্ঞাপন দিয়ে একশো টাকার বিনিময়ে আবেদনপত্র বিক্রি করা হয়। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, মাত্র ১৬০ জন প্রাক্তন কর্মী চুক্তির ভিত্তিতে আবাসনে থাকার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু ‘সিকিওরিটি মানি’ জমা করার জন্য বারবার তাঁদের খবর পাঠানো হলেও কেউ তা করেননি বলে কারখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ। এ নিয়ে বছর তিনেক ধরে টালবাহানা চলার পরে সম্প্রতি কারখানা সিদ্ধান্ত নেয়, টাকা জমা দেওয়ার সময়সীমা এ বার বেঁধে দেওয়া হবে। তার মধ্যে সাড়া না পেলে আবাসনের বিদ্যুৎ ছিন্ন করে দেওয়া হবে। কিন্তু কিছু আবাসনে বিদ্যুৎ ছিন্ন করতেই শুরু হয়েছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ।
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy