Advertisement
০২ মে ২০২৪
Crops

ফসল বাঁচাতে জরুরি পরিকল্পনা

দফতর সূত্রে জানা যায়, আমপানের প্রভাবে জামালপুর, কালনা ১-এ ১১৫ মিলিমিটারেরও বেশি এবং মন্তেশ্বর, রায়না ২, মেমারি ১ ও ২, পূর্বস্থলী১, মঙ্গলকোট ব্লকে ৭০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে।

ঝড়-বৃষ্টির পরে এমনই হাল জমির। কালনায়। নিজস্ব চিত্র

ঝড়-বৃষ্টির পরে এমনই হাল জমির। কালনায়। নিজস্ব চিত্র

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২০ ০৫:২৬
Share: Save:

কৃষি দফতরের হিসেবে আমপানের জেরে সম্ভাব্য প্রায় ছ’শো কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কৃষিকর্তাদের পরামর্শ, যেটুকু ফসল বাঁচানো যাবে, তা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ঘরে তুলতে হবে। পাশাপাশি, বিপর্যয়ের ধাক্কা কাটিয়ে দ্রুত নামতে হবে চাষের কাজে।

দফতর সূত্রে জানা যায়, আমপানের প্রভাবে জামালপুর, কালনা ১-এ ১১৫ মিলিমিটারেরও বেশি এবং মন্তেশ্বর, রায়না ২, মেমারি ১ ও ২, পূর্বস্থলী১, মঙ্গলকোট ব্লকে ৭০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে, ধানের বহু জমিতে জল জমেছে। ঝড়ের ধাক্কায় জমিতে লুটিয়ে পড়েছে ধান।

কৃষিকর্তারা জানান, এই সময়ে যত দ্রুত সম্ভব জমিতে নেমে চাষিদের কাস্তে দিয়ে ধানের শিষ কাটতে হবে। তার পরে তা উঁচু জায়গায় রেখে শুকিয়ে নিতে হবে। বেশি দিন জমিতে ধান পড়ে থাকলে অঙ্কুরোদগমের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা। বোরো ধান ছাড়াও বর্তমানে মাঠে রয়েছে পাট, তিল, বাদাম, মুগ, বাদাম-সহ বেশ কিছু গ্রীষ্মকালীন আনাজ। এগুলির মধ্যে তিল, পাট, আনাজের জমিতে জল জমে থাকেলই বিপদ। এ সব ক্ষেত্রে চাষিদের প্রথমেই জমির পাশ দিয়ে ছোট নালা কেটে জল বাইরে বার করে দিতে হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঝড়ের ধাক্কায় পূর্বস্থলীর মতো বেশ কয়েকটি ব্লকে কাদা-মাখা জমিতে ভেঙে পড়েছে আনাজের মাচা। ফলে, পাতা-সহ গাছের নানা অংশ আটকে রয়েছে কাদায়। কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এ ক্ষেত্রে গাছের পাতা দ্রুত সাফ করতে হবে। জেলার অন্যতম সহ-কৃষি আধিকারিক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘জমি থেকে জল বার করে দেওয়ার পরে ছত্রাকনাশক হিসেবে কপার অক্সিক্লোরাইড চার গ্রাম অথবা ম্যানকোজেব ও কার্বেনডাজিমের মিশ্রণ আড়াই গ্রাম অথবা মেটালক্সিল ও ম্যানকোজেবের মিশ্রণ দু’গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে ‘স্প্রে’ করতে হবে। ঝড়ে ভেঙে যাওয়া ডাল জমিতে দ্রুত কেটে ফেলতে হবে। কাটা অংশে দিতে হবে কপার অক্সিক্লোরাইডের প্রলেপ।’’

এ ছাড়া, কিছু দিনের মধ্যেই আমন ধানের চাষ শুরু হওয়ার কথা। কৃষিকর্তারা জানান, এখন থেকেই ভাল ফলন পেতে চাষিদের আট দফা পরিকল্পনা করতে হবে। যথা, জমির চরিত্র অনুযায়ী নির্বাচন করতে হবে জাত। অর্থাৎ নিচু জমিতে দীর্ঘমেয়াদি, মাঝারি জমিতে মধ্য-মেয়াদি ও উঁচু জমিতে স্বল্প-মেয়াদি ধান চাষের পরিকল্পনা নিতে হবে। পাশাপাশি, ভাল ফলনের জন্য কৃষি খামার অথবা সরকারি স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে ‘সার্টিফায়েড’ বীজ সংগ্রহ করতে হবে। এই ধরনের বীজ থেকে পর-পর দু’বার চাষ করা সম্ভব। এর পরে ফের ওই বীজে চাষ করলে ফলন কমার আশঙ্কা থাকে। তা ছাড়া, বীজ জমিতে ছড়ানোর আগে প্রথমে রোদে শুকিয়ে ঝাড়াই করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে, অন্য প্রজাতির বীজ যাতে কোনও ভাবে মিশে না যায়। বপনের আগে কার্বেনডাজিম দু’গ্রাম অথবা ট্রাইকোডারমা পাঁচ গ্রাম প্রতি কেজি বীজে মাখিয়ে শোধন করাটা জরুরি। এ ছাড়া, বীজতলার জন্যও বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি আধিকারিকেরা। তাঁরা জানান, বীজতলার জমি কর্ষণ করে তা রোদে রেখে দিতে হবে। একই জমিতে বারবার বীজতলা করা যাবে না। পাশাপাশি, বীজতলায় পর্যাপ্ত জৈব সার প্রয়োগ করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Crops
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE