Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus Lockdown

ছাত্রছাত্রীদের জন্য গাছতলাতেই বসল স্কুল

গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, মন্দির লাগোয়া ঝাঁকড়া বটগাছের তলায় চলছে ক্লাস।

বরথোল গ্রামে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষিকা। ছবি: পাপন চৌধুরী

বরথোল গ্রামে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষিকা। ছবি: পাপন চৌধুরী

সুশান্ত বণিক
বার্নপুর শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২০ ০৩:০৫
Share: Save:

সম্প্রতি জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতর সমীক্ষা করে জানিয়েছিল, পশ্চিম বর্ধমানের অন্তত ২৫ শতাংশ পড়ুয়া ‘ই-লার্নিং’ ব্যবস্থার বাইরে রয়েছে। মূলত তাদের দিকে তাকিয়েই এ বার গ্রামে ছুটলেন বার্নপুর শান্তিনগর বিদ্যামন্দিরের ৩৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। বৃহস্পতিবার বার্নপুরের বরথোল গ্রামের ঘটনা।

গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, মন্দির লাগোয়া ঝাঁকড়া বটগাছের তলায় চলছে ক্লাস। পড়ুয়ারা নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে বই-খাতা নিয়ে বসে। ‘মাস্ক’ পরা শিক্ষক-শিক্ষিকারাও নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ঘুরে ঘুরে পড়াচ্ছেন— বাংলা, ভূগোল, শারীরশিক্ষাপ্রভৃতি বিষয়।

কেন এমন উদ্যোগ? স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিব্যেন্দু সাহা বলেন, ‘‘প্রায় চার মাস হল স্কুল খুলছে না। কবে খুলবে তা-ও অনিশ্চিত। পড়ুয়ারা পড়াশোনার মধ্যে না থাকলে অনেকটাই পিছিয়ে পড়বে। সে কথা ভেবেই এই উদ্যোগ। এ বার থেকে বিভিন্ন গ্রামে সাত দিন করে এই স্কুল চলবে।’’

এ দিনের গাছতলার স্কুলে শান্তিনগর বিদ্যামন্দির ছাড়াও, এলাকার বিভিন্ন স্কুল, এমনকি স্কুলছুট প্রায় ২৭৫ জন পড়ুয়া যোগ দিয়েছিল। কী ভাবে চলেছে স্কুল? শিক্ষকেরা জানান, পড়ুয়ারা কে, কোন শ্রেণিতে পড়ে, তা জেনে নিয়ে তাদের একাধিক ভাগে ভাগ করে সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত ক্লাস নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, পড়ুয়াদের জন্য ‘মিড-ডে মিল’-এরও ব্যবস্থা করা হয়।

দিব্যেন্দুবাবু-সহ শিক্ষকদের বড় অংশের পর্যবেক্ষণ, বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় পড়ুয়াদের ‘অ্যান্ড্রয়েড ফোন’ কেনার ক্ষমতা নেই। ফলে, তারা ‘ই-লার্নিং’ ব্যবস্থার বাইরে থেকে যাচ্ছে। আবার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাতের কাছে পেয়ে কয়েকজন স্কুলছুট পড়ুয়ারাও এই স্কুলে যোগ দিয়েছেন বলে জানান দিব্যেন্দুবাবুরা। অনেক দিন পরে পড়ুয়াদের মুখোমুখি হতে পেরে খুশি শিক্ষক পূর্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়, শিক্ষিকা মৌমিতা মণ্ডলেরাও। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী প্রিয়া ওরাংও বলে, ‘‘গাছতলায় স্যর-ম্যাডামদের কাছে পড়তে পারার আনন্দই আলাদা। অনেকটা যেন স্কুলে গিয়ে ক্লাস করার মতো।’’

এমন স্কুলের খবর পেয়ে গ্রামে যান অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা) প্রশান্ত মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘পড়ুয়াদের স্বার্থে এটা একটা দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ।’’ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক)

অজয় পালও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE