ইমার্জেন্সি পরিষেবায় টোটো নিয়ে বাবা-ছেলে। নিজস্ব চিত্র
‘লকডাউন’, স্ট্যান্ড ফাঁকা। ত্রিসীমানায় বাস-অটো-টোটো নেই। তারই মধ্যে রবিবার দুর্গাপুরের মেনগেট স্ট্যান্ডে দেখা গেল, দু’টি টোটো দাঁড়িয়ে। সামনে লেখা পোস্টার জানান দিচ্ছে, নিখরচায় রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার কথা। এ দিন থেকে এমনই ‘ইমার্জেন্সি’ পরিষেবা দিতে শুরু করলেন এক টোটো চালক ও তাঁর ছেলে।
বিরজু সাউ নামে ওই টোটো চালক মেনগেটের লিঙ্কপার্ক এলাকার বাসিন্দা। ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী হেমাংশু। কেন এমন পরিকল্পনা? বিরজুবাবু বলেন, ‘‘সব ধরনের গণ-পরিবহণ বন্ধ। মনে হল, বাড়িতে চুপচাপ বসে না থেকে সমাজের জন্য কিছু করি। বর্তমানে রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে সমস্যায় পড়ছেন অনেকেই। অনেকেরই অ্যাম্বুল্যান্স, গাড়ি ভাড়া করার আর্থিক ক্ষমতা নেই। তাই এই সিদ্ধান্ত।’’
সেই মতো টোটো-র সামনে টাঙানো হয় হাতে লেখা পোস্টার। তাতে লেখা, বিনা ভাড়ায় ১৫ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে যে কোনও হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হবে। পোস্টারে দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলেই টোটো পৌঁছে যাবে রোগীর বাড়িতে, জানান বিরজুবাবু।
সাধারণ সময়ে মেনগেট থেকে বেনাচিতি, এই এলাকার মধ্যে টোটো চালিয়ে ফি দিন গড়ে সাড়ে তিনশো থেকে চারশো টাকা রোজগার হত তাঁর। তা দিয়েই চলে সত্তরোর্ধ্ব মা পার্বতীদেবী, স্ত্রী সারিকাদেবী, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছেলে ও চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে বিরজুবাবুর সংসার। বাড়িতে থাকা অন্য একটি টোটো মাঝে-মধ্যে অবসরে চালায় ছেলে হেমাংশু।
কিন্তু ‘লকডাউন’ পরিস্থিতিতে গত কয়েক দিন রোজগার নেই। সঞ্চয় ভেঙে চলছে সংসার, টোটো স্টার্ট দিতে দিতে জানান বিরজুবাবু। খানিকটা স্বস্তি দিয়েছে রাজ্য সরকারের দেওয়া বিনামূল্যের রেশন।
বর্তমানে এই কঠিন সময়ে বিরজুবাবুর সামাজিক পরিষেবার এমন পরিকল্পনা সমর্থন করেন তাঁর মা ও স্ত্রী। ছেলে হেমাংশু বলে, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিকের বাকি পরীক্ষা করে হবে কোনও ঠিক নেই। তাই আমিও ভাবলাম, সমাজের জন্য কিছু যদি করতে পারি।’’ তবে দু’জনেই জানান, করোনা-সতর্কতা মেনেই এই কাজ করছেন তাঁরা। তাঁরা আরও বলেন, ‘‘পৃথিবীর গভীর সঙ্কট। বহু মানুষ আর্থিক সাহায্য করছেন। আমাদের টাকা নেই। কিন্তু যা আছে, তা দিয়েই যদি কোনও উপকার হয় মানুষের।’’
বাবা-ছেলের কথা শুনতে শুনতে যেন মনে পড়ে, ‘‘পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন;/ মানুষ তবুও ঋণী পৃথিবীর কাছে।’’ টোটো স্টার্ট দেয়...এক নতুন লড়াই জয়ের লক্ষ্যে।
এই লড়াইকে স্বাগত জানিয়ে মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) অনির্বাণ কোলে বলেন, ‘‘খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে অসুস্থ বা প্রবীণদের হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া ছাড়া অন্য কাজে টোটো যাতে ব্যবহার না করা হয়, সেটা যেন তাঁরা খেয়াল রাখেন।’’
অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy