Advertisement
০২ মে ২০২৪
Cyclone Amphan

ক্ষতিপূরণ নিয়ে ‘দুর্নীতি’তেও প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব

বুধবার দুপুরে মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে দাঁড়িয়ে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর ভাস্কর মণ্ডলের দাবি, শহরে ঘূর্ণিঝড়ে বাড়িঘরের তেমন ক্ষতি হয়নি। অথচ, ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন পাকা বাড়ির মালিকেরা।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২০ ০২:৫৩
Share: Save:

ঘূর্ণিঝড় ‘আমপান’-এ ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা নিয়ে বিরোধীরা স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলতেই কাটোয়ায় একই অভিযোগে মুখ খুলতে শুরু করেছেন কিছু বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর। দুর্নীতির জন্য ওই ‘কো-অর্ডিনেটর’-এরা সরাসরি তৃণমূল পরিচালিত পুর-বোর্ডকে দায়ী করেছেন। এই পরিস্থিতিতে পুর-বোর্ডে তৃণমূলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ প্রকাশ্যে এসে পড়েছে বলে মনে করছেন দলের নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ। তবে প্রকাশ্যে যাঁরা তৃণমূল-বিরোধী কথা বলছেন, তাঁদের দলের লোক বলে মানতে নারাজ কাটোয়া পুরসভার প্রশাসক তথা তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়।

বুধবার দুপুরে মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে দাঁড়িয়ে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর ভাস্কর মণ্ডলের দাবি, শহরে ঘূর্ণিঝড়ে বাড়িঘরের তেমন ক্ষতি হয়নি। অথচ, ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন পাকা বাড়ির মালিকেরা। একই দাবি চার নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর শ্যামল ঠাকুরেরও। এ দিন সন্ধ্যা নাগাদ ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য় দলের কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে ভিজিল্যান্স তদন্তের দাবি জানান ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর প্রণবকুমার দত্ত।

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, কাউন্সিলর-ঘনিষ্ঠরা ‘ভুল করে’ ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন মেনে নেওয়ার পরেই, ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় থাকা ন’টি ওয়ার্ডে খোঁজখবর শুরু হয়েছে। প্রশাসনের তরফ থেকেও তদন্ত শুরু হয়েছে। বিতর্কের মূলে থাকা ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ইলা হাজরার ঘনিষ্ঠ চার বাসিন্দা অবশ্য ইতিমধ্যেই টাকা ফেরত দিতে চেয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরকে মুচলেকা দিয়েছেন। মহকুমাশাসক প্রশান্তরাজ শুক্লর দাবি, টাকা ফেরত দিতে গেলে ‘টিআর ৭’ ফর্মে চালান কেটে ট্রেজারিতে জমা দিতে হবে।

বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর ভাস্কর মণ্ডল, শ্যামল ঠাকুরদের দাবি, ‘‘এখানে আমপানে কাঁচা বাড়িরও সে ভাবে ক্ষতি হয়নি। অথচ, পাকা বাড়ির মালিকেরা বাড়ি ভাঙার টাকা পেয়েছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লিখিত প্রতিবাদ জানাব।’’ আর এক বিদায়ী কাউন্সিলর প্রণব দত্ত বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ে পাকা বাড়ির মালিকদের টাকা পাইয়ে দেওয়ার ঘটনা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। এই রকম অনেক আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে। বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে আর্থিক ভিজিল্যান্স হওয়া উচিত।’’

পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অমর রাম অবশ্য বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা আমাকে অনেক পরে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।” ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণে দুর্নীতি নিয়ে যে, যাঁর ব্যক্তিগত মতামত জানাচ্ছেন। তবে কাটোয়া পুরসভার প্রশাসক তৃণমূলের রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। চার জন টাকা ফেরত দিতে চেয়ে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন।’’ ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “কোনও দূর্নীতি থাকলে, দলের অভ্যন্তরে তা জানানো উচিত। দল ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু দলের লোক বলে পরিচয় দিয়ে কেউ যদি সংবাদমাধ্যম বা সাধারণ মানুষকে এ সব জানান, তাঁকে আমি দলের লোক বলে মনে করি না।’’

ভাস্করবাবু, শ্যামলবাবু, প্রণববাবুরা বলছেন, ‘‘খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার ত্রাণ বিলিতে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বলছেন। সেখানে এ ধরনের দুর্নীতির কথা জনতার জানা উচিত। সে কথা প্রকাশ্যে আনায় কারও আপত্তি থাকতে পারে। আমরা তাতে দমে যাচ্ছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan TMC Corruption
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE