জটলা। খুনের ঘটনার পর এলাকাবাসীর জমায়েত। —নিজস্ব চিত্র
রাস্তার উপরে নির্মাণসামগ্রী রাখাকে কেন্দ্র করে বচসা ও তার জেরে এক প্রৌঢ়কে খুনের অভিযোগ উঠল একই পরিবারের চার জনের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় তিন জন জখমও হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে কাঁকসার গোপালপুরের ঘটনা। পুলিশ জানায়, নিহত ভৈরব ধীবর (৫৫) নামে ওই প্রৌঢ় এলাকারই বাসিন্দা। পুলিশ জানায়, এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
পুলিশ জানায়, এলাকারই এক বাসিন্দার বাড়ি তৈরির জন্য গোপালপুরের ধীবরপাড়ায় রাস্তার উপরে বেশ কিছু দিন ধরে বালি, পাথরের মতো নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে। তা নিয়েই ধীবরপাড়ার কয়েক জনের সঙ্গে বচসা বাধে স্থানীয় তপন পালের পরিবারের। অভিযোগপত্রে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে ধীবরপাড়ার কয়েক জন বাসিন্দা তপন পালের বাড়ির সামনে কথা বলতে যান। অভিযোগ, সেই সময়ে তপন ও তাঁর দুই ছেলে স্বাধীন, অরিজিৎ এবং তপনের শ্যালক পরিমল সরকার ধীবরপাড়ার ওই বাসিন্দাদের উপরে চড়াও হন। ধীবরপাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেই সময়ে তাঁদের গালিগালাজ করা হয়। আরও অভিযোগ, ওই সময়ে অরিজিৎ আগ্নেয়াস্ত্র হাতে সকলকে ভয় দেখাতে থাকেন। শূন্যে এক রাউন্ড গুলিও ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ। তখনকার মতো বিষয়টি মিটে যায় বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন ধীবরপাড়ার বাসিন্দাদের একাংশ।
নিহতের স্ত্রী মঙ্গলাদেবীর অভিযোগ, ফের গোলমাল বাধে রাতে। রাত ১০টা নাগাদ তপনের বাড়ির সামনে যান ভৈরববাবু। তাঁর অভিযোগ, ভৈরবকে একা পেয়ে হামলা করেন তপন, তাঁর দুই ছেলে ও শ্যালক। অভিযোগ, সেই সময়ে রড, শাবল দিয়ে ভৈরববাবুর মাথায় ও ঘাড়ে পরপর আঘাত করা হয়। ঘটনার খবর পেয়ে ধীবরপাড়ার কয়েক জন ভৈরববাবুকে বাঁচাতে গেলে তাঁদেরও বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, এক নাবালিকা ও তার মা’কেও মারধর করা হয়েছে। ধীবরপাড়ার বাসিন্দাদের দাবি, আগ্নেয়াস্ত্র হাতে আশপাশের লোকজনকে ভয় দেখান অরিজিৎ।
এর পরে ফের ধীবরপাড়ার আরও কয়েক জন ঘটনাস্থলে গেলে অভিযুক্তেরা চম্পট দেয় বলে জানান এলাকাবাসী। সকলকে উদ্ধার করে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা ভৈরববাবুকে মৃত বলে জানান। ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন আরও তিন জন।
গোলমালের খবর পেয়ে এলাকায় আসে কাঁকসা থানার পুলিশ। পুলিশ অবশ্য জানায়, অভিযুক্ত তপনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে ময়না-তদন্তের পর ভৈরবের দেহ গোপালপুরে আনা হলে উত্তেজিত জনতা অভিযুক্তদের বাড়ির সামনে দেহ রেখে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাঁদের দাবি, দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার করতে হবে। পরে পুলিশের আশ্বাসে দেহের শেষকৃত্য করা হয়। তদন্তকারীরা যদিও গুলি চালানো হয়নি বলেই জানিয়েছেন।
শুক্রবার এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, ভৈরববাবুর বাড়ির সামনে জটলা। এলাকাবাসী দাবি করেন, গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে অরিজিৎ তৃণমূলের একটি কার্যালয়ে গুলি চালানোর ঘটনায় অভিযুক্ত ছিল। জেলও খেটেছে। জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের এলাকায় গোলমাল তৈরি করছে ওই পরিবার।
কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা গোপালপুরের বাসিন্দা কাঞ্চন লায়েক বলেন, ‘‘আমরা প্রশাসনের কাছে দ্রুত দোষীদের গ্রেফতারের আবেদন জানিয়েছি। কঠিন শাস্তি দিতে হবে অপরাধীদের।’’ আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদী বলেন, ‘‘তপন পাল নামে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy