Advertisement
১০ মে ২০২৪

বিসর্জন শেষে ওড়ে শঙ্খচিল

দেবী এখানে ত্রিশূল হাতে অসূরদলনী নন। দশভুজাও নন। দুর্গা বলতে শুধু একটা মুখ। সেই মুখ দেখতেই ভিড় উপচে পড়ে কেতুগ্রামের গোমাই রায়বাড়িতে। আনুমানিক সাড়ে চারশো বছরের পুরনো এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন গোবিন্দ রায়।

কাটা মুণ্ড পুজো। নিজস্ব চিত্র।

কাটা মুণ্ড পুজো। নিজস্ব চিত্র।

সুচন্দ্র দে
কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৬ ০২:০৮
Share: Save:

দেবী এখানে ত্রিশূল হাতে অসূরদলনী নন। দশভুজাও নন। দুর্গা বলতে শুধু একটা মুখ। সেই মুখ দেখতেই ভিড় উপচে পড়ে কেতুগ্রামের গোমাই রায়বাড়িতে।

আনুমানিক সাড়ে চারশো বছরের পুরনো এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন গোবিন্দ রায়। শোনা যায়, দিকনগরের বাসিন্দা গোবিন্দবাবু ‌এক বার কাজে এসেছিলেন অজয় তীরের গোমাই গ্রামে। ভোরে ঠাকুরপুকুরে স্নান করতে নেমে জলে ভাসা এক সুন্দরী মহিলাকে দেখতে পান তিনি। তবে গলা পর্যন্ত দেখা দিয়েই মিলিয়ে যায় সেই মূর্তি। রাতে স্বপ্নাদেশ পান, দেবীর যেটুকু দেখতে পাওয়া গিয়েছে সেটুকুরই পুজো হবে। লোকমুখে পুজোর নাম হয়ে যায় ‘কাটা মুণ্ডর পুজো’। একচালা মাটির ঘরে পুজো শুরু হয়। এখন অবশ্য পাকা মন্দির, নিত্যসেবা। দেবত্তর সম্পত্তির আয়ে রায় পরিবারের ২৪ শরিক এই পুজো পরিচালনা করেন।

সারা বছর দেবীর বেদীতে পুজো হয়। দুর্গাজোর আগে বংশপরম্পরায় শিবলুন গ্রামের সূত্রধর পরিবার মায়ের ‘কাটা মুণ্ড’ তৈরি করেন। ষষ্ঠীর দিন দোলায় পাশের ঠাকুরপুকুর থেকে ঘট নিয়ে এসে বোধন হয়। রুপোর মুকুট, সোনার গয়নায় সাজেন দেবী। ভাগবত পুরাণ মতে পূজিতা দেবীর পুজোয় চণ্ডীপাঠ নিষিদ্ধ। দিনের বেলার বদলে আরতি হয় সন্ধ্যায়। নবমীর দিন ১০৮ প্রদীপ জ্বালানোরও রীতে রয়েছে। তবে পুজোর বিশেষত্ব দশমীতে। এ দিন দুপুরে দোলায় চাপিয়ে দেবীকে সারা গ্রামে ঘোরানো হয়। তারপর ঠাকুরপুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয়। বিসর্জন শেষ হতেই সবার চোখ থাকে আকাশে। পুকুর পাড় দিয়ে শঙ্খচিল ওড়া দেখেই তবে বাড়ি ফেরেন রায় বাড়ির সদস্যেরা।

রায় পরিবরের প্রকাশচন্দ্র রায়, সুভাষচন্দ্র রায়, বংশীপদ রায়েরা জানান, এই পুজোয় অন্নভোগ হয় না। ফল ও লুচি ভোগ দেওয়া হয় দেবীকে। দশমীতে থাকে চিঁড়ে ভোগের আয়োজন। আশপাশের গ্রাম থেকে বহু ভক্ত আসেন অদ্ভুত দর্শন দেবীকে দেখতে। বাড়ির বধূ নিয়তি রায়, নিভৃতি রায়দের বিশ্বাস, ‘‘মায়ের কাছে মানত করলে অনেক রোগ সেরে যায়। দূরদূরান্তের ভক্তেরা মানত করতে আসেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE