Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ছেলে দৌড়তে পারলেই উৎসবের আলো ফিরবে ঘরে

বাড়ির অদূরেই পুজো মণ্ডপ। শেষ পর্বের প্রস্তুতির ব্যস্ততা সেখানে। কিন্তু তাতে মন নেই পিউ শীটের। উৎসবের রেশ নেই তাঁর স্বামী জয়ন্তর মুখেও। ছেলের বয়সী খুদেরা মণ্ডপের আশপাশে ছুটে বেড়াচ্ছে। কিন্তু দৌড়নো তো দূর, তাঁদের সন্তান যে ঠিক ভাবে দাঁড়াতেই পারছে না।

রানিগঞ্জের বল্লভপুরের বাড়িতে অঙ্কুশ। নিজস্ব চিত্র

রানিগঞ্জের বল্লভপুরের বাড়িতে অঙ্কুশ। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:০৪
Share: Save:

বছর তিনেকের ছেলেটা উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু পেরে উঠছে না।

বাড়ির অদূরেই পুজো মণ্ডপ। শেষ পর্বের প্রস্তুতির ব্যস্ততা সেখানে। কিন্তু তাতে মন নেই পিউ শীটের। উৎসবের রেশ নেই তাঁর স্বামী জয়ন্তর মুখেও। ছেলের বয়সী খুদেরা মণ্ডপের আশপাশে ছুটে বেড়াচ্ছে। কিন্তু দৌড়নো তো দূর, তাঁদের সন্তান যে ঠিক ভাবে দাঁড়াতেই পারছে না।

বল্লভপুর হরিবোল মন্দিরের কাছে মাহিষ্যপাড়ার বাড়িতে বসে পিউ বলেন, ‘‘সমবয়সী মিলন, আর্য, অরিত্রদের সঙ্গে খেলতে চাইছে ছেলে। কিন্তু ওর আবদার রাখতে পারছি না আমরা। তাই পুজোর কোনও আনন্দ নেই আমাদের কাছে।’’

২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর জন্ম জয়ন্ত-পিউয়ের ছেলে অঙ্কুশের। জানুয়ারিতে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হওয়ায় আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাকে। ভর্তি করা হয় সেখানে। স্যালাইন দেওয়া হচ্ছিল। এক সকালে পিসি শিখাদেবী খেয়াল করেন, খুদে অঙ্কুশের ডান হাতের আঙুলগুলি কালো হয়ে গিয়েছে। কর্তব্যরত নার্সকে জিজ্ঞাসা করায় তিনি জানান, স্যালাইন দেওয়ার জন্য এমনটা হয়েছে, ঠিক হয়ে যাবে। শিখাদেবীর অভিযোগ, ‘‘এর পরে দেখি, স্যালাইনের চ্যানেল করার আগে যে রবারের ব্যান্ড বাঁধা হয়েছিল কনুইয়ের কাছে, তা খোলা হয়নি। সে কথা নার্সকে জানাতেই তিনি তড়ঘড়ি সেটি খুলে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে চলে যান।’’

হাত স্বাভাবিক না হওয়ায় বিষয়টি চিকিৎসকের নজরে আনা হলে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় অঙ্কুশকে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে চিকিৎসকেরা জানান, হাত বাদ দিতে হবে। ২০১৬-র ২ ফেব্রুয়ারি অস্ত্রোপচার করে একরত্তি অঙ্কুশের ডান হাতের কনুইয়ের নীচের অংশ বাদ দেওয়া হয়। তার পিসেমশাই সুশান্ত মণ্ডলের দাবি, তার পরে প্লাস্টিক সার্জারি করার আশ্বাস দেওয়া হলেও তা হয়নি।

পিউ জানান, এখন অঙ্কুশের দাঁড়াতে সমস্যা হয়। সে জন্য পায়ের চিকিৎসা করানো দরকার বলে জানিয়েছেন ডাক্তারেরা। তিনি বলেন, ‘‘ছেলের পায়ে রক্ত চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। ও স্বাভাবিক ভাবে চলতে-ফিরতে না পারা অবধি স্বস্তি পাব কী করে!’’ আসানসোল জেলা হাসপাতালের প্রাক্তন সুপার শ্যামল সান্যাল বলেন, ‘‘এমনিতে পায়ে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। কেন সমস্যা হচ্ছে, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা উচিত। টীকাকরণে কোনও গোলমালেও এমনটা হতে পারে।’’

বাসে অস্থায়ী খালাসি হিসেবে কাজ করেন জয়ন্তবাবু। তিনি জানান, ঘটনার পরে হইচই হতে নেতা-কর্তারা এসেছিলেন বাড়িতে। তাঁর স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় হাসপাতালে মাসিক সাড়ে চার হাজার টাকা বেতনে কাজ করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু এত দূরে যাতায়াত করে ওই বেতনের চাকরিতে সংসার চালানো মুশকিল। তাই করিনি।’’ তিনি জানান, আত্মীয়েরা সহায়তা করেন। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ছেলের ‘ফিজিয়োথেরাপি’র ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু পায়ের শক্তি ফেরাতে ছেলের যে চিকিৎসা প্রয়োজন, তার টাকা জোটানোর সামর্থ্য নেই।

পিউ জানান, মুখ্যমন্ত্রীর তহবিল থেকে এক লক্ষ টাকা অঙ্কুশের নামে জমা করা হয়েছে। তবে সে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত সেই টাকা তোলা যাবে না। বিধায়ক তাপসবাবু জানান, অঙ্কুশের বাবাকে অস্থায়ী কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছিল। পরে স্থায়ীকরণ হয়ে যেত। এখন বিকল্প কোনও ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা ভেবে দেখার আশ্বাস দেন তিনি।

উৎসবের আলো নেই তাঁদের মুখে। ছেলে যেন সুস্থ হয়ে ওঠে, মণ্ডপে গিয়ে এটুকুই প্রার্থনা করতে চান শীট দম্পতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja Durga Puja 2018
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE