Advertisement
০৮ মে ২০২৪

ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ‘মত্ত’ হাতে স্টিয়ারিং

ই ঘটনার কথা চাউর হতেই আতঙ্ক ছড়ায় অভিভাবকদের মধ্যে।

সোমবার রানিসায়র ও ধসল মোড়ে। —নিজস্ব চিত্র।

সোমবার রানিসায়র ও ধসল মোড়ে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৫৪
Share: Save:

মত্ত অবস্থায় স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে দু’জন চালককে গ্রেফতার করল পুলিশ। সোমবার ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে জামুড়িয়ায় ধসল মোড় এবং ২ নম্বর জাতীয় সড়কের রানিসায়র মোড়ের ঘটনা। এই ঘটনার কথা চাউর হতেই আতঙ্ক ছড়ায় অভিভাবকদের মধ্যে।

পুলিশ জানায়, এ দিন সকাল সওয়া ৯টা নাগাদ ধসল মোড়ের কাছে পড়ুয়াদের নিয়ে একটি গাড়ি যাচ্ছিল। কিন্তু গাড়িটি ঠিক ভাবে না চলায় প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ হয় পুলিশের। এর পরেই গাড়িটি আটকায় পুলিশ। জামুড়িয়া থানার পুলিশ জানায়, ‘ব্রেথ অ্যানালাইজার’ দিয়ে পরীক্ষায় দেখা যায় গাড়ির চালক, চিচুরিয়ার বাসিন্দা আস্তিক পাল মত্ত অবস্থায় রয়েছেন। জামুড়িয়ার ট্র্যাফিক ওসি চিত্ততোষ মণ্ডল জানান, চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে গাড়িটিকেও।

এই ঘটনার কথা চাউর হতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন অভিভাবকেরা। কেন্দার বাসিন্দা হরেরাম সাউ বলেন, ‘‘আস্তিকবাবুর গাড়িতে তাঁর ছেলে-সহ ১২ জন পড়ুয়া রানিগঞ্জের একটি বেসরকারি ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে যাতায়াত করে। যে কোনও মুহূর্তে বিপদ ঘটতে পারত।’’ চন্দ্রশেখর বার্নওয়াল নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘‘কেন্দা ফাঁড়ির পুলিশ ফোনে জানায়, চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার পরে অভিভাবকেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলে নিয়ে নিয়ে যান। ভাবতেই পারছি না, গাড়ির চালক মত্ত অবস্থায় ছিলেন।’’ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে পড়ুয়ারাও। দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া অঙ্কিত সাউয়ের বক্তব্য, ‘‘প্রতি দিনই গাড়িতে যাই। আজ কী হল, বুঝতে পারছি না। পুলিশ গাড়ি আটকানোর পরে বিষয়টা বুঝতে পারি।’’

রানিগঞ্জ থানার পুলিশ জানায়, এ দিনই সাত জন পড়ুয়াকে নিয়ে একটি গাড়ি রানিগঞ্জের সিহারসোলের হিন্দিমাধ্যম একটি বেসরকারি স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল। চালকের আসনে ছিলেন, রানিসায়রের বাসিন্দা সুজিত বাউরি। রানিগঞ্জের ট্র্যাফিক ওসি প্রসেনজিৎ বসাক জানান, এ দিন দুপুর দেড়়টা নাগাদ রানিসায়র মোড়ে দেখা যায় চালকের কানে মোবাইল। গাড়ি চলছে ভুল রুটে। সঙ্গে সঙ্গে আটকানো হয় গাড়িটি। পুলিশের দাবি, ‘ব্রেথ অ্যানালাইজার’ দিয়ে পরীক্ষায় দেখা যায় গাড়ির চালক মত্ত। এর পরেই গাড়িটি আটক করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় চালককেও। পুলিশ জানায়, পড়ুয়াদের গাড়িতেই রাখা হয়েছিল। অভিভাবকদের খবর দেওয়ার পরে তাঁরা ছেলেমেয়েদের নিয়ে যান।

আস্তিকবাবুর গাড়িতে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির এবং সুজিতবাবুর গাড়িতে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়ারা ছিল বলে দু’টি স্কুল সূত্রে জানা যায়। তাদের বিপদ ঘটতে পারত বলে আশঙ্কা অভিভাবকদের। অভিভাকদের একাংশ পুলকার বা পড়ুয়াদের নিয়ে যাতায়াত করা গাড়িগুলির দিকে আরও নজরদারিরও দাবি জানিয়েছেন। সিহারসোলের স্কুলটির প্রধান শিক্ষিকা প্রভা চৌধুরী বলেন, ‘‘সুজিত প্রায় দশ বছর আমাদের এখানে গাড়ি চালাচ্ছে। এমন ঘটনা ঘটবে, বুঝতে পারিনি।’’

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আটক করা ওই দু’টি গাড়িরই নির্দিষ্ট ছাড়পত্র নেই। কী সেই ছাড়পত্র? পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিবহণ দফতরের মুখ্য আধিকারিক মানস হালদার বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের নিয়ে যাতায়াত করতে হলে সংশ্লিষ্ট গাড়ির বাণিজ্যিক-অনুমোদন থাকা জরুরি। পুলকারের অনুমোদন থাকাও বাধ্যতামূলক।’’

ঘটনাচক্রে, মত্ত অবস্থায় পড়ুয়াদের স্কুলে দেওয়া-নেওয়ার অভিযোগ নতুন নয় জেলায়। মাসখানেক আগেই ২ নম্বর জাতীয় সড়কে রানিসায়র মোড়ে পডুয়াদের নিয়ে যাওয়ার সময়ে এক চালক মত্ত ছিল পুলিশ জানায়। তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়। মহকুমাশাসক (আসানসোল) প্রলয় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘পুলকারগুলি বিধি মেনে চলছে কি না, তা দেখতে নিয়মিত অভিযান চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Asansol আসানসোল
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE