কারখানায় কাজ করতে যে দক্ষতার প্রয়োজন, তা শেখাতে দেশের চার ইস্পাত শহরে কারিগরি কলেজ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেল। তার মধ্যে একটি হবে কুলটিতে। সম্প্রতি এক বিশেষজ্ঞ দল কলেজ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জমি ও পরিকাঠামোগত ব্যবস্থা দেখে গিয়েছে। বছরখানেকের মধ্যে কলেজ তৈরি হয়ে যাবে বলে আশা করছেন সেল কর্তারা।
সেলের মানবসম্পদ উন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ন্যাশানাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশ (এনএসডিসি) এবং সেলের যৌথ উদ্যোগে এই কলেজ তৈরি হবে। দুই সংস্থা চুক্তি করেছে, ভিলাই, রৌরকেল্লা, বোকারো এবং কুলটি— এই চার ইস্পাত শহরে কলেজগুলি গড়া হবে। সেলের মানবসম্পদ উন্নয়ন দফতরের ইডি এমআর পাণ্ডা জানান, এই কলেজগুলিতে এক দিকে যেমন সেলে কর্মরত শ্রমিক-কর্মীদের ছেলেমেয়েরা নিজেদের কারিগরি দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ পাবেন, তেমনই সেই সুযোগ থাকবে এলাকার বেকার যুবকদের জন্যও। শিল্প সংস্থায় কাজ করতে যে সব কারিগরি দক্ষতা দরকার, তা ন্যূনতম খরচে এই কলেজে হাতেকলমে শেখানো হবে। দূরদূরান্ত থেকে প্রশিক্ষণ নিতে আসা অন্তত একশো জনের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হবে।
সেল বিকাশ বিভাগের কুলটি কারখানার এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর আরএন দাস জানান, কলেজ তৈরির মতো পর্যাপ্ত জমি ও পরিকাঠামো কুলটিতে আছে। তা ছাড়া কুলটি কারখানার সামগ্রিক উন্নয়ণের কথা ভেবেই সেল কর্তৃপক্ষ এখানে কলেজটি তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘কলেজ তৈরির জন্য প্রায় ১০ একর জমি দরকার। কারখানার পুরনো হাসপাতালে সাড়ে আট একরের কিছু বেশি জমি আছে। হাসপাতাল ভবনটিও কাজে লাগিয়ে নেওয়া যাবে। সেটি কার্যত অব্যবহৃত থেকে নষ্ট হচ্ছে।’’
সেল বিকাশ বিভাগের এক কর্তা জানান, পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পরে ২০০৮ সালে কুলটি কারখানার উৎপাদন শুরু হলেও কোনও স্থায়ী কর্মী নিয়োগ হয়নি। উৎপাদন চালাচ্ছেন ঠিকা শ্রমিকেরা। ভবিষ্যতেও স্থায়ী কর্মী নিয়োগ না করে ঠিকা প্রথায় কাজ চালানোর ভাবনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। এমনকী, স্থানীয় লোকজনকে ঠিকা প্রথায় নিয়োগের পরিকল্পনাও রয়েছে। তাই এখন কর্মরত ঠিকা শ্রমিক বা এলাকার বেকার, সকলেরই কারিগরি দক্ষতা বাড়ানো দরকার। শুধু কারখানায় কাজ পাওয়া নয়, এলাকায় কারিগরি কলেজ হলে স্থানীয় যুবকেরা প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বনিযুক্তি প্রকল্পেও উৎসাহিত হবেন।
তবে কারখানার পুরনো হাসপাতালটি তুলে দিয়ে সেখানে কলেজ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রাক্তন শ্রমিক-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। হাজার পাঁচেক প্রাক্তন কর্মী এখনও কুলটিতে বাস করেন। সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী তাঁরা কারখানার হাসপাতাল থেকেই চিকিৎসা পরিষেবা পান। ২০০৩ সালে কারখানা বন্ধ হওয়ার পরে হাসপাতালের শয্যা তুলে দেওয়া হয়েছে। বেশি অসুস্থ হলে বার্নপুরে ইস্কোর হাসপাতালে যেতে হয় প্রাক্তন কর্মীদের। কিন্তু প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য তাঁরা পুরনো হাসপাতালেই যান। সেখানে কয়েকটি শয্যা রাখার দাবিও তুলেছিলেন। এখন হাসপাতালের জায়গায় কলেজ হবে, এই খবর শুনে আশঙ্কায় তাঁরা। কুলটি কারখানার এগজিকিউটিভ ডিরেক্টরের অবশ্য আশ্বাস, অন্য জায়গায় একটি হাসপাতাল তৈরি হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy