গরমের জন্য দু’মাস ছুটি কেন, প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষকেরা। ক্ষোভ ছড়িয়েছে অভিভাবক ও পড়ুয়াদের মধ্যেও। প্রত্যেকেরই চিন্তা, এত লম্বা ছুটি চললে সিলেবাস কী ভাবে শেষ হবে। মিড-ডে মিল বন্ধ থাকায় অপুষ্টি, স্কুলছুট বেড়ে যাবে কি না উঠছে সে প্রশ্নও।
ইতিমধ্যেই এর প্রতিবাদ জানিয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শক এবং জেলার প্রাথমিক স্কুল বোর্ডের চেয়ারম্যানকে স্মারকলিপি দিয়েছেন দুই বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ এবং এবিপিটিএ-র সদস্যেরা। কাল, মঙ্গলবার জেলা মাধ্যমিক স্কুল পরিদর্শকের (ডিআই) কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলেও তাঁদের দাবি। এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক সুদীপ্ত গুপ্তের দাবি, “সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে তুলে দেওয়ার জন্যই এ রকম পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার। এত লম্বা ছুটি শিক্ষক, অভিভাবক, এমনকী পড়ুয়ারাও চান না। আমাদের ধারণা, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করার জন্য এ সব করা হচ্ছে।’’ তৃণমূলপন্থী একটি শিক্ষক সংগঠনেরও দাবি, মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে ছুটি কমানোর ব্যাপারটি বিবেচনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
‘ফণী’র জন্য গত শুক্র ও শনিবার স্কুলে ছুটি ছিল। আজ, সোমবার থেকে গরমের ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা দফতর। ছুটি চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। নির্দেশিকায় এই ছুটিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমত, বাড়তি গরমের ছুটি মিলবে ২০ মে পর্যন্ত। তারপর চলবে গরমের ছুটি। ওই ছুটি শেষ হলে প্রলম্বিত গরমের জন্যে ৩০ জুন পর্যন্ত ছুটি থাকবে। শিক্ষক সংগঠনগুলির দাবি, ৮ জুনের পরে সাধারণত রাজ্যে বর্ষা ঢুকে পড়ে। কোনও কারণে বর্ষা না এলে অথবা অতিরিক্ত গরম পড়লে ছুটি বাড়ানো যেতে পারে। আগেও এমন হয়েছে। তৃণমূলপন্থী শিক্ষক-সংগঠনের প্রাক্তন সভাপতি রথীন মল্লিকের দাবি, “১০ জুনের পরে স্কুলগুলি খুলে দেওয়ার জন্যে শিক্ষামন্ত্রীকে বিবেচনা করার জন্যে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আমাদের কাছে অনেক পড়ুয়া-অভিভাবক, শিক্ষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।’’
বামপন্থী শিক্ষক সংগঠনের দাবি, টানা দু’মাস ছুটি থাকলে পড়াশোনার ক্ষতির পাশাপাশি অবিভাবকদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। বেসরকারি স্কুলগুলিতে পঠনপাঠন চালু থাকায় সরকারি ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ কমবে। এবিপিটিএ-র জেলা শাখার সভাপতি রাধেশ্যাম দাসের দাবি, ‘‘গরমে সকালে স্কুলের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ছুটি চললে গ্রামের গরিব পড়ুয়ারা পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হবে।’’ আগামী ৭ ও ৮ মে জেলার নানা জায়গায় সভা করা হবে বলেও তাঁর দাবি।
কাটোয়ার কাশীরাম দাস বিদ্যায়তনের শিক্ষক সঞ্জীব দাস বলেন, “এত দিন ছুটি থাকলে সিলেবাস শেষ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।’’ কালনার একটি স্কুলের শিক্ষক প্রদীপ ভট্টাচার্যের দাবি, “অনেক পড়ুয়ার ভরসা স্কুল। তারা অনিয়মিত হয়ে গেলে পড়া থেকে হারিয়ে যাবে, শিক্ষক হিসেবে এটা আমাদের খুব ভয়ের জায়গা।’’ এ ছাড়াও পড়ুয়াদের যে অংশের পুষ্টি নির্ভর করে মিড-ডে মিলের উপর, তাদের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে শিক্ষকদের দাবি। অনেকেই খাবারের টানে স্কুলে যাওয়া শুরু করে। পেট খালি থাকলে স্কুলছুটও বাড়তে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy