Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

একুশ বছর পরে সংসার ‘জুড়ল’ করোনাভাইরাস

কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা জানান, সামাজিক দূরত্ববিধি থাকলেও দু’জনে পরস্পরকে চিনতে পারেন।

 স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে সুরেশ প্রসাদ। ছবি: পাপন চৌধুরী

স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে সুরেশ প্রসাদ। ছবি: পাপন চৌধুরী

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২০ ০১:০২
Share: Save:

বাবা, স্ত্রী, তিন খুদে ছেলেমেয়েকে ছেড়ে বছর একুশ আগে বাড়ি ছেড়ে সোজা আসানসোল স্টেশন। সে দিন ট্রেনে চড়ে দিল্লি চলে যান পশ্চিম বর্ধমানের বার্নপুরের সুরেশ প্রসাদ। বছর আটেক আগে, পোস্টকার্ড পাঠিয়ে বাড়ি ফিরবেন জানিয়েছিলেন। কিন্তু ফিরব বলেও ফেরা হয়নি। শেষমেশ, করোনা-পরিস্থিতিতে বুধবার সেই আসানসোলেই ফিরলেন পেশায় দিনমজুর সুরেশবাবু। ফের দেখা হল স্ত্রী, সন্তানের সঙ্গে।

রাতে বিশেষ ট্রেনে আসানসোল স্টেশনে নামেন বছর ৬২-র সুরেশবাবু। তাঁকে আসানসোল ইএসআই হাসপাতালের সরকারি নিভৃতবাসে আনা হয়। পুলিশের কাছে জানান, তাঁর বাড়ি বার্নপুর শ্যামবাঁধে। এ-ও জানান, ২১ বছর আগে বাড়ি ছেড়েছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে হিরাপুর থানার থেকে খবর পেয়ে ছেলে সুধীর প্রসাদকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন স্ত্রী ঊর্মিলাদেবী।

কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা জানান, সামাজিক দূরত্ববিধি থাকলেও দু’জনে পরস্পরকে চিনতে পারেন। তবে, দু’জনেই কিছুক্ষণ নীরব থাকেন। শেষে মুখ খোলেন সুরেশবাবুই। বলে চলেন, নিজের, বাবার ও চার ভাইয়ের নাম। এমনকি, প্যান্ট গুটিয়ে ডান হাঁটুতে থাকা উল্কিও দেখান। শেষমেশ বুজে আসা গলায় ঊর্মিলাদেবী বলেন, ‘‘কেন ঘর ছাড়লে? আট বছর আগে একটা চিঠি। তাতে বললে, বেঁচে আছ। এক মাসের মধ্যে ফিরব। তা-ও এলে না...।’’ শুনে চোখ ছলছল করে সুরেশের।

কেন ঘর ছেড়েছিলেন? সুরেশ বলেন, ‘‘বাড়িতে অশান্তি হয়েছিল।’’ তবে, আপত্তি জানিয়ে স্ত্রী ঊর্মিলাদেবী বলেন, ‘‘কোনও অশান্তি হয়নি। ওই দিন সকালে জলখাবার খেয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। থানায় নিখোঁজ ডায়েরিও করি। কত খুঁজেছি...।’’

এ সব কথাবার্তার মধ্যেই বাবা আর দুই মেয়ের খোঁজ নেন সুরেশবাবু। জানতে পারেন, দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাবা বেঁচে নেই। শুনে থম মেরে যান সুরেশবাবু। তখনই, ওই দম্পতির বছর ৩০-এর ছেলে, পেশায় একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী সুধীর বলেন, ‘‘ঠাকুরদা ইস্কোয় কাজ করতেন। আমাদের সংসার চালিয়েছেন উনিই। আজ বেঁচে থাকলে বড় আনন্দ পেতেন। তবে, আজ আমাদের জন্য খুব খুশির দিন। দুই বোনকেও খবর দিয়েছি।’’

এত দিন পরে বাড়ি ফেরার কারণও জানান সুরেশবাবু। জানান, দিল্লিতে প্রায় এক মাস ‘কোয়রান্টিন’-এ ছিলেন তিনি ও কয়েকজন দিনমজুর। কিন্তু একে-একে সব সহকর্মীই বাড়ি ফিরে যান। তা দেখে সুরেশবাবু বলেন, ‘‘দিল্লির কাশ্মীর গেটে থাকতাম। লকডাউন-এর জন্য কাজও পাচ্ছিলাম না ঠিকমতো। সবাই ফিরলে মনে হল, একা কী করে থাকব? বাড়ির জন্যও মন কেমন করছিল। ফিরে দেখলাম, আসানসোল, বার্নপুর— সবই কেমন বদলে গিয়েছে। তবে, সংসারটা আগের মতোই আছে।’’

এই আনন্দের পরিবেশেও এখনই বাড়ি ফেরা হচ্ছে না সুরেশবাবুর। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, তাঁর নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত সরকারি নিভৃতবাসেই থাকতে হবে।— তবে ক’টা দিন ধৈর্য ধরতে মোটেও আপত্তি নেই স্ত্রী ঊর্মিলাদেবীর। বলেন, ‘‘করোনাভাইরাস কত মানুষের সংসার ভাঙছে। আমার সংসারটা কিন্তু জোড়া দিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE