Advertisement
১১ মে ২০২৪

শাড়ি কিনে নিক সরকার, দাবি তাঁতিদের

২৬ নভেম্বর কালনা ১ ব্লকের ধাত্রীগ্রামে বিজেপির তন্তুবায় সেলের দ্বিতীয় রাজ্য সম্মেলন হয়। সেখানে ছিলেন বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু। বিজেপি নেতারা দাবি তোলেন, বহু মানুষকে তাঁত শিল্পী বলে সচিত্র পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে।

কাপড় বোনা। কালনার উত্তর গোয়াড়ায়। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

কাপড় বোনা। কালনার উত্তর গোয়াড়ায়। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৫৩
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রীর সভার আগেই তাঁতশিল্পীদের হাল নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। পূর্বস্থলী এলাকায় বিভিন্ন সভা করে বিজেপি নেতারা দাবি করছেন, তাঁত শিল্প নিয়ে ছেলেখেলা হচ্ছে। আসল তাঁতিরা সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যদিও তৃণমূলের দাবি, পুরোটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

২৬ নভেম্বর কালনা ১ ব্লকের ধাত্রীগ্রামে বিজেপির তন্তুবায় সেলের দ্বিতীয় রাজ্য সম্মেলন হয়। সেখানে ছিলেন বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু। বিজেপি নেতারা দাবি তোলেন, বহু মানুষকে তাঁত শিল্পী বলে সচিত্র পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে। এই সব ভুয়ো তাঁতশিল্পীদের পরিচয় পত্র বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে তাঁতিদের বাড়িতে বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া, বয়স্ক ভাতা দেওয়া, তাঁদের স্বনির্ভর করার মত প্রকল্পে রাজ্য সরকার ব্যর্থ বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা। সায়ন্তন বলেন, ‘‘তাঁতিদের জন্য বরাদ্দ অর্থ শাসকদলের নেতারাই খেয়ে নিচ্ছে। ফলে উন্নয়ন হচ্ছে না।’’ আর এক রাজ্য সম্পাদক রাজীব ভৌমিকের দাবি, ‘‘তাঁতিদের সরকার যে তাঁত যন্ত্র দিচ্ছে তা অত্যন্ত নিম্নমানের। বহু সময় ঘুর পথে সে সব যন্ত্র বিলির পরেই বিক্রি হচ্ছে।’’

যদিও পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানান, গত ৬ বছরে এ রাজ্যে ৫ লক্ষ ৩১ হাজার শিল্পীকে পরিচয় পত্র দেওয়া হয়েছে। বিনামূল্যে তাঁতযন্ত্র প্রদান করা হয়েছে ১ লক্ষ ১৫ হাজার তাঁত শিল্পীকে। পূর্ব বর্ধমান জেলায় তাঁতিসাথী প্রকল্পে ২৫ হাজার ৪৯০ জনকে তাঁত দেওয়া হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে ৩২টি গুচ্ছপ্রকল্প। তাতে উপকৃত হয়েছেন ১৪ হাজার ৫০০ জন। এ ছাড়াও তাঁতিদের জন্য তাঁত বোনা শেড তৈরি হয়েছে ৮৯০টি এবং ‘কমন ফেসিলিটি কেন্দ্র’ তৈরি হয়েছে ১৩টি। মুখ্যমন্ত্রীর চেষ্টায় ধাত্রীগ্রাম এবং শ্রীরামপুরে দুটি তাঁতের হাট তৈরি হচ্ছে বলেও জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘‘এর পরেও বিজেপি কী ভাবে এই জেলায় তাঁত নিয়ে প্রশ্ন তোলে! বাম জামানায় তাঁত শিল্প ধ্বংসের পথে চলে গিয়েছিল। এখন তন্তুজ-সহ বিভিন্ন সংস্থা লাভের মুখ দেখেছে। তাঁতিরা জানে আসল সত্যিটা।’’

রাজনৈতিক তরজায় না যেতে চাইলেও জিএসটি চালু হওয়ার পর থেকে বা এ বারের পুজোর মরসুমে বিক্রিবাটা যে ভাল হয়নি তা মেনে নিচ্ছেন তাঁতিরা। তাঁদের দাবি, পাওয়ার লুমের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো পরিকাঠামো নেই তাঁদের। হস্তচালিত তাঁতযন্ত্রে একটা শাড়ি বুনতে, তাতে নকশা ফোটাতে যত সময় এবং পরিশ্রম লাগে তার চেয়ে অনেক কম সময়ে পাওয়ারলুমে প্রায় একই রকম শাড়ি বোনা যায় বলে তাঁদের দাবি। তাঁত শিল্পী প্রতিমা হালদার, সাগরিকা হালদারেরা বলেন, ‘‘এক দিকে তাঁতের শাড়ি পড়ার ঝোঁক কমছে। পাওয়ার লুমে কম দামে শাড়িও মিলছে। এ ভাবে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা মুশকিল।’’ তা ছাড়া সুতো, রঙের মতো জিনিসপত্রের দাম যে ভাবে বেড়েছে তাতে একটা তাঁতের শাড়িতে লাভ প্রায় হয় না বলেও জানাচ্ছেন তাঁরা।

সমুদ্রগড়ের তাঁত শিল্পী গোবিন্দ দেবনাথের দাবি, বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন শিল্পীদের মজুরি কমিয়ে শাড়ি বোনাতে। তাঁত শিল্পীদের তৈরি শাড়ি সরকার কিনে নিলে স্বস্তি মিলবে। তাঁর কথায়, ‘‘সরকার শাড়ি কিনে বিক্রির ব্যবস্থা করলে ভাল হয়। আবার বাইরের কোনও সংস্থা থেকে বিশেষ নকশা বা বিশেষ সুতোর শাড়ি বোনার বরাত এনে দেওয়ার ব্যবস্থা করলেও ভাল হয়।’’ আর এক শিল্পী বিবেক সাহা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলে তাঁতের উপর থেকে জিএসটি তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করলে উপকৃত হবেন হাজার হাজার তাঁতশিল্পী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Textile Weaver Saree
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE