Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভাঙতে বসেছে ঘাটের সেতু, হয়রান যাত্রীরা

ভোর থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিদিন হাজারো মানুষ আসা-যাওয়া করেন এই ফেরিঘাট দিয়ে। অথচ জেটি লাগোয়া প্রায় ৫০ ফুট লম্বা ফুটব্রিজটিই ভাঙতে বসেছে। নিত্য যাতায়াতকারীদের দাবি, ফুটব্রিজের নীচের দিকের কাঠের পাটাতনগুলি পচে গিয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে সেতু ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঘাটের ইজারাদারদের দাবি, পুরসভাকে বিষয়টি জানিয়ে দ্রুত ওই পারাপারের সেতুটি মেরামতের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

ভেঙেছে কাঠ। —নিজস্ব চিত্র।

ভেঙেছে কাঠ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:১৭
Share: Save:

ভোর থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিদিন হাজারো মানুষ আসা-যাওয়া করেন এই ফেরিঘাট দিয়ে। অথচ জেটি লাগোয়া প্রায় ৫০ ফুট লম্বা ফুটব্রিজটিই ভাঙতে বসেছে। নিত্য যাতায়াতকারীদের দাবি, ফুটব্রিজের নীচের দিকের কাঠের পাটাতনগুলি পচে গিয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে সেতু ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঘাটের ইজারাদারদের দাবি, পুরসভাকে বিষয়টি জানিয়ে দ্রুত ওই পারাপারের সেতুটি মেরামতের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

একসময়ে কালনার সমস্ত ঘাটই বাণিজ্যের কাজে, পণ্য আনা-নেওয়ায় ব্যবহার হতো। পরে রেল ও সড়ক যোগাযোগ উন্নত হওয়ায় নদীপথের গুরুত্ব অনেকটাই কমে। তবে ওই খেয়াঘাটটির গুরুত্ব রয়েই গিয়েছে। বিশেষত নদিয়া থেকে কালনার স্কুল, কলেজ, হাসপাতালে প্রচুর মানুষ আসেন। আবার ধান, চাল-সহ নানা পণ্যও নিয়ে যাওয়া হয় ওপারে। ছ’টি বড় নৌকা দিনভর যাত্রীদের নিয়ে পারাপার করে। আবার বার্জের মাধ্যমে গাড়ি বা অন্য ভারি যান পার করা হয়। সবমিলিয়ে প্রতিদিন হাজার দশেক মানুষ পারাপার করেন বলে নৌকাচালকদের দাবি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, যাত্রীদের সুবিধার জন্য আট বছর আগে কালনা খেয়াঘাটে জেটি চালু হয়। কিন্তু ভাসমান এই জেটির দিকবদল হয়ে যাওয়ায় তার সঙ্গে যুক্ত ফুটব্রিজটির বেশ কিছু যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে বলেও তাঁদের দাবি। বর্তমানে জেটিটিতে নৃসিংহপুর ঘাট থকে যাত্রী নিয়ে আসা নৌকাগুলি নামানো হয়। তারপরে ফুটব্রিজ পার করে যাত্রীরা ঘাটে পৌঁছন। যাত্রীদের অভিযোগ, সেতুর নিচের অংশে বিভিন্ন আকৃতির যে কাঠের পাটাতনগুলি রয়েছে তার বেশিরভাগই পচে গিয়েছে। ছাউনি না থাকায় বর্ষার জল ক্রমাগত কাঠে পড়ে সেগুলিতে পচন ধরেছে বলেও তাঁদের দাবি। বেশ কিছু পাটাতন খসে গর্তও হয়ে গিয়েছে। ইজারাদারেরা নিজেদের উদ্যোগে বাঁশ অথবা ছোট কাঠের টুকরো দিয়ে সাময়িক মেরামতির কাজ করেছেন ঠিকই। তবে তাতেও ফাটল পুরোপুরি আটকানো যায়নি। যাত্রীদের দাবি, ওই সেতুর উপর একসঙ্গে একটু বেশি লোক হলেই আলগা হয়ে যাওয়া পাটাতনের শব্দ শোনা যায়। মনে হয় যেন ভেঙে পড়বে। সম্প্রতি ওই সেতু পারাপার করতে গিয়ে কাঠের পাটাতন ভেঙে এক মাঝবয়সী মহিলা জখমও হন। ওই খেয়াঘাট দিয়ে নিত্য যাতায়াতকারী রমেশ ঘোষ বলেন, “শুধু মানুষই নয়, ফুট ওভারব্রিজ দিয়ে মোটরবাইক, সাইকেল, ভ্যান নিয়েও অনেকে যাতায়াত করেন। সেতুটির যা দশা তাতে যে কোনও সময়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।” ইজারাদারদের একজন তপন ঘোষেরও দাবি, “বছরে আমরা ত্রিশ লক্ষ টাকারও বেশি টাকা ইজারা বাবদ পুরসভাকে দিই। অথচ ঘাটের পরিকাঠামোর উন্নতির ব্যাপারে পুরসভা উদাসীন।” তাঁদের দাবি, “জেটির ফুট ওভারব্রিজটি পাল্টানোর জন্যও ইতিমধ্যেই চিঠি দিয়েছি।”

সম্প্রতি কালনা শহরের রাজবাড়ি চত্বরে আলো এবং ছায়া প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসেছিলেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সেখানে কালনার বিধায়ক তথা পুরপ্রধান বিশ্বজিত্‌ কুণ্ডু মন্ত্রীকে খেয়াঘাটের পরিকাঠামো উন্নতির প্রয়োজনের কথা জানান। ঘাটটি ঢেলে সাজলে পর্যটকেরাও আকৃষ্ট হবেন বলে দাবি করেন তিনি। এ ব্যাপারে সাহায্যের আশ্বাস দেন মন্ত্রীও। বিশ্বজিত্‌বাবু বলেন, “পর্যটন দফতর থেকে বিশেষজ্ঞ লোকজন এসে খেয়াঘাট নিয়ে একটি পরিকল্পনা তৈরি করবেন। পরিকল্পনাটি রূপায়নের জন্য ৫ কোটি টাকারও বেশি খরচ করা হতে পারে।” কিন্তু ততদিন কী ভাঙা সেতুই ভরসা? পুরপ্রধানের দাবি, “জেটির ওভারব্রিজের ব্যাপারে ঘাটের ইজারাদারেরা একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। পুরসভার তরফে শীঘ্র ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bridge poor condition kalna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE