Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অসীমা, হিন্দোলের বাসায় স্বচ্ছন্দ টিয়াপাখির দল

কয়েক বছর ধরেই এমনটা চলছে। সকালে বেরিয়ে বিকেলে এখানেই ফিরে আসে তারা। 

কৃত্রিম কোটরে পেঁচা। নিজস্ব চিত্র

কৃত্রিম কোটরে পেঁচা। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৫১
Share: Save:

পাখিদের এখানে কোনও ভয় নেই। কেউ তাদের মারবে না, কেউ তাদের ধরার জন্য জাল বিছিয়েও রাখেনি। উল্টে চণ্ডীতলার আঁকুনি গ্রামে তাদের ‘নিজস্ব ঘর’ রয়েছে। ফল রাখার কাঠের বাক্সের সেই ঘরের মধ্যেই টিয়া, লক্ষ্মীপেঁচা, কুঠুরে পেঁচা, কালপেঁচা, কাঠঠোকরা, শালিক, দোয়েল, বালিহাঁসদের সংসার। কয়েক বছর ধরেই এমনটা চলছে। সকালে বেরিয়ে বিকেলে এখানেই ফিরে আসে তারা।

চড়াই, দোয়েল, পেঁচা, নীলকণ্ঠ, বসন্তবৌরি-সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি কমে যাচ্ছে দেখে সমীক্ষা চালিয়েছিলেন গ্রামের যুবক হিন্দোল আহমেদ। তাঁর মনে হয়েছিল, যে সব পাখি গাছের কোটরে থাকে, তারাই বিপন্ন বেশি। তার পরেই তিনি পাখিদের কৃত্রিম কোটর তৈরিতে হাত দেন। হাড়িতে গর্ত করে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। তাতে টিয়া আর শালিক আশ্রয় নেয়। কিন্তু গরমে মাটির হাঁড়ি তেতে ওঠে। ঝড়ে পড়ে যায়। এর পরেই ফল রাখার বাক্স কিনে এনে খোপ কেটে ঝুলিয়ে দেন ইউক্যালিপটাস, কৃষ্ণচুড়া, আম, তেঁতুল, ক্ষিরিশ, কদম গাছে। বাড়ির দেওয়ালেও। এখানেই পাখি থাকে।

হিন্দোল বলেন, ‘‘অনেক বাক্স নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেগুলো বদলে নতুন বাক্স লাগাব। মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য চামচিকের বাসা করব। বড়সড় একটা বাক্সে হাজারখানেক চামচিকে থাকতে পারবে। ওরা মশা খায়। মাছরাঙা, কাঠঠোকরা, নীলকণ্ঠের জন্যও বাসা করব।’’

রোদের তেজ একটু কমলেই শ্রীরামপুরের মাহেশ লক্ষ্মীঘাটের মনসাতলার গেরস্থ বাড়ির ছাদেও নেমে আসে টিয়ার ঝাঁক। গৃহকর্ত্রী অসীমা সেনগুপ্ত ছোলা আর চাল ছড়িয়ে দেন। পাশে বসে দিব্যি টুকটুক করে সবটা সাবাড় করে দেয় পাখিগুলো। তার পরে বাসায় ফিরে যায়। বছরের বারো মাস রুটিন। অসীমাদেবী বলেন, ‘‘গত চোদ্দ বছর ধরে এমনই চলছে। কোথাও বেড়াতে গেলে চোদ্দোবার ভাবতে হয়।’’ বসন্তবৌরি, কোকিলেরও নিত্য আনাগোনা তাঁদের বাড়িতে।

চারপাশে গাছগাছালির সংখ্যা কমে যাওয়ায় পাখির সংখ্যাও কমেছে। এখন চড়াই আসেই না। অসীমাদেবী বলেন, ‘‘আগে সত্তরটা করে পাখি ছাদে এসেছে। এখন সংখ্যাটা পঞ্চাশেরও কম।’’ রাজ্য জীব বৈচিত্র পর্ষদের হুগলি জেলার কো-অর্ডিনেটর মানিক পাল বলেন, ‘‘এমন অনেকেই পকেটের টাকা খরচ করে পাখিদের জন্য করেন। এটা খুবই ভাল। নালিকুল, বন্দিপুর, তারকেশ্বর-সহ কয়েকটি জায়গায় বিভিন্ন সংগঠনও পাখিদের সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করছে।’’ তিনি জানান, জেলার পুরসভা এবং ব্লকে জীববৈচিত্র ব্যবস্থাপনা সমিতি তৈরি করা হয়েছে। তারা জীব বৈচিত্রের নথি তৈরি করবে। নথি তৈরি হলে সব খতিয়ে দেখে পাখি বাঁচাতে প্রকল্প হাতে নেওয়া যেতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Wildlife Birds Chanditala
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE