আর্থিক সাহায্য মৃতের পরিবারকে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
এত দিন চেয়েও জবকার্ড পাননি। গোঘাটের বিজেপি কর্মী গণেশ রায়ের মৃত্যুর পরে গোঘাটের তৃণমূল বিধায়ক মানস মজুমদারের হস্তক্ষেপে মৃতের পরিবারের তিন সদস্যকেই জবকার্ড দিল শাসকদল পরিচালিত গোঘাট পঞ্চায়েত। গণেশের রহস্যমৃত্যু নিয়ে এখন সরগরম গোঘাট। রবিবার সকালে গোঘাট স্টেশনের কাছে একটি গাছ থেকে ঝুলতে দেখা যায় গণেশের দেহ। বিজেপির অভিযোগ, তাঁকে মেরে ঝুলিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, খুনের নেপথ্যে রয়েছে বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল। গণেশের রহস্য-মৃত্যু নিয়ে দুই দলের কাজিয়া চলার মাঝেই সোমবার সন্ধ্যায় মৃতের স্ত্রী ছায়া এবং দুই ছেলে বিশ্বজিৎ এবং ধর্মদাসকে জবকার্ড দেয় গোঘাট পঞ্চায়েত। সঙ্গে আরও কিছু সরকারি সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। এতেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
গোঘাট-১ পঞ্চায়েতের প্রধান মণীষা সেনের বক্তব্য, ‘‘স্থানীয় বিধায়কের নির্দেশে তিন জনকে জবকার্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মৃতের দেহ সৎকারের জন্য সমব্যথী প্রকল্পে ২ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে তিন জনকেই। গীতাঞ্জলি প্রকল্পে বাড়ির জন্য আবদেন করতে বলা হয়েছে।’’
বিজেপির দাবি, খুনের অভিযোগ ওঠায় অপরাধ ঢাকতে গণেশের পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছে তৃণমূল। বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিমান ঘোষের অভিযোগ, “গরিব জেনেও এতদিন কেন গণেশের পরিবারের সদস্যদের জবকার্ড দেওয়া হয়নি। খুনের মতো অভিযোগ ওঠায় অপরাধ ঢাকতে অনৈতিক ভাবে তাঁর পরিবারকে জবকার্ড দেওয়া হয়েছে। তাও আবার কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পে।”
মানসবাবুর বক্তব্য, “সোমবার নিজেদের অভাব অভিযোগ জানাতে ওঁরা (গণেশের স্ত্রী ও দুই ছেলে) আমার কাছে এসেছিলেন।’’ সরকারি সহায়তার আশ্বাস পেয়ে খুশি গণেশের দুই ছেলে। তাঁরা বলেন, ‘‘বিধায়ক যা কথা দিয়েছিলেন, তা তিনি রাখছেন। আমরা যাতে কাজ পাই, তার জন্য তিনটি জবকার্ড হয়েছে। এতদিন একটাই হচ্ছিল না।”গণেশের দেহ উদ্ধারে পরেই এলাকায় অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। বিজেপি কর্মীরা তৃণমূলের কার্যালয় ভাঙচুর করেন। পথ অবরোধ হয়। পাল্টা মিছিল বার করে তৃণমূল। বিজেপির পতাকা ছেঁড়ার অভিযোগ ওঠে শাসকদলের বিরুদ্ধে।
সোমবার গণেশের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল বিজেপি নেতৃত্বের। কিন্তু তাঁর স্ত্রী ছায়া এবং দুই ছেলে বাড়িতে না থাকায় তাঁরা কর্মসূচি বাতিল করেন। বিজেপির তরফে অভিযোগ তোলা হয়, গণেশের স্ত্রী ও দুই ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে অবশ্য বিশ্বজিৎ এবং ধর্মদাস বলেন, ‘‘আমাদের কেউ অপহরণ করেনি। নিজেরাই বিধায়কের অফিসে গিয়েছিলাম। ১০০ দিনের জবকার্ড পাইনি। ঘর-বাড়ি ভাঙা। এই সব অভাব-অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলাম।”
গণেশের পরিবারের সদস্যেরা জবকার্ড পাওয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন গ্রামবাসীর একাংশ। দীপালি রায় নামে তাঁদের এক জনের অভিযোগ, “আমরা শ্বশুরের সংসারে থাকলেও হাঁড়ি আলাদা। তবু পঞ্চায়েত জবকার্ড দিচ্ছে না। অথচ খুনের অভিযোগ উঠতেই গণেশের পরিবার তিন-তিনটি জবকার্ড পেল।” মনসা রায় নামে আর এক জনের প্রশ্ন, “একই পরিবার কী করে তিনটি জবকার্ড পেল বুঝতে পারছি না!’’ তবে এ নিয়ে তাঁর কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি বলে জানিয়েছেন ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের জেলা নোডাল অফিসার অনির্বাণ বসু। তিনি বলেন, “পরিবার পিছু একটাই জবকার্ড থাকবে। তবে পরিবার ভাঙলে পঞ্চায়েত তদন্ত করে পৃথক জবকার্ড দিতে পারে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy