Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

ডায়ালিসিস নিয়ে বিপাকে রোগীরা

এই এলাকার রোগীদের ডায়ালিসিস হত মূলত ফুলেশ্বরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সরকারি হাসপাতালের মধ্যে ডায়ালিসিস হয় উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে। এছাড়া উলুবেড়িয়ার দু’টি বেসরকারি হাসপাতাল এবং একটি নার্সিংহোমে অল্প কিছু ডায়ালিসিস হয়।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২০ ০১:২৮
Share: Save:

লকডাউনের জেরে বিপাকে পড়েছেন গ্রামীণ হাওড়ার কিডনির অসুখে ভোগা অনেক রোগী। তাঁদের সপ্তাহে দু’-তিন করে ডায়ালিসিস করাতে হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় মেনে সেই ডায়ালিসিস করাতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন অনেকেই।

এই এলাকার রোগীদের ডায়ালিসিস হত মূলত ফুলেশ্বরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সরকারি হাসপাতালের মধ্যে ডায়ালিসিস হয় উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে। এছাড়া উলুবেড়িয়ার দু’টি বেসরকারি হাসপাতাল এবং একটি নার্সিংহোমে অল্প কিছু ডায়ালিসিস হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর থেকে ফুলেশ্বরের বেসরকারি হাসপাতালটিকে করোনা হাসপাতালে পরিণত করা হয়েছে। তার জেরে এই হাসপাতালে ডায়ালিসিস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যন্ত্রাংশ খারাপ হওয়ার কারণ দেখিয়ে উলুবেড়িয়ার অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমেও ওই পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে ডায়ালিসিস করাতে আসা রোগীদের সব চাপ পড়ছে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতাল এবং একটি মাত্র বেসরকারি হাসপাতালেই।

ডায়ালিসিস করাতে ঘণ্টা চারেক সময় লাগে। রোগীদের অভিযোগ, উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে ভিড় বেড়ে যাওয়ায় ৪ ঘণ্টার বদলে মাত্র ২ ঘণ্টার মধ্যে ডায়ালিসিস করিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে বাড়ি ফেরার পরে রোগীরা ফের শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। শুধু তাই নয়, ডায়ালিসিস করানোর আগে একটি করে ইঞ্জেকশন দিতে হয় রোগীদের পেটে। বেশ দামি সেই ইঞ্জেকশন এখন বাইরে থেকে রোগীদের কিনে আনতে হচ্ছে। এছাড়াও প্রতি ১৫ দিন অন্তর আরও একটি করে ইঞ্জেকশন দিতে হয় রোগীদের। সেটাও এখন রোগীদেরই কিনতে হচ্ছে।

অন্য দিকে, উলুবেড়িয়ার যে বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালিসিস করা হয় সেখানে খরচ অনেকটা বেশি। ফলে গরিব রোগীরা এখানে ঘেঁষতে পারেন না। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে ডায়ালিসিসও বিনা পয়সায় করা যায়। তবে রোগীদের অভিযোগ, এই বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের কোনও সুবিধা মেলে না।

গাদিয়াড়ার এক রোগীর পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়, ফুলেশ্বরের ওই বেসরকারি হাসপাতালটিতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের বিনিময়ে বিনা পয়সাতেই তাঁরা ডায়ালিসিস করাতেন। ৮২ বছরের ওই রোগীর মেয়ে বলেন, "ফুলেশ্বরের হাসপাতালটিকে করোনা হাসপাতাল করায় আমরা বিপাকে পড়ি। নির্দিষ্ট সময়ে ডায়ালিসিস না করানো হলে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়বেন। তাই আমরা বেশি টাকা দিয়েই অন্যত্র ডায়ালিসিস করাতে বাধ্য হচ্ছি। উলুবেড়িয়ার নার্সিংহোম এবং বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে কাজ হয়নি।’’

এর সঙ্গে আছে গাড়ির অতিরিক্ত খরচ। অন্য আর এক রোগীর পরিজনরা বলেন, "গাদিয়াড়া থেকে উলুবেড়িয়া যাতায়াতে অনেক টাকা গাড়িভাড়া লাগছে। কারণ লকডাউনের অন্য সময়ের তুলনায় এখন গাড়ির চালক অনেক বেশি ভাড়া চাইছেন।’’

বাগনানের এক রোগী বলেন, ‘‘আমি স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে ফুলেশ্বরের বেসরকারি হাসপাতালটিতে বিনা পয়সায় ডায়ালিসিস করাতাম। কিন্তু উলুবেড়িয়ার বেসরকারি হাসপাতালটিতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড চলে না। মহকুমা হাসপাতালে বিনা পয়সায় ডায়ালিসিস করাই। কিন্তু চার ঘণ্টার জায়গায় মাত্র ২ ঘণ্টা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। ইঞ্জেকশন কিনে দিতে হয়। তার উপরে বাগনান থেকে গাড়ি ভাড়া করে যেতে হয়। আর পারছি না। সরকার যদি বিনা পয়সায় ইঞ্জেকশনটার জোগান দেয় ভাল হয়।’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ কর্তা জানান, ফুলেশ্বরের বেসরকারি হাসপাতালটিকে করোনা হাসপাতাল করার জন্য সমস্যা হয়েছে ঠিকই, তবে এই হাসপাতালের তত্ত্বাবধানেই পাঁচলায় একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ডায়ালিসিস করানোর বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে। উলুবেড়িয়ার যে সব বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে ডায়েলিসিস বন্ধ আছে সেগুলি চালু করার জ‌ন্য কর্তৃপক্ষদের বলা হয়েছে।

উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালের সুপার সুদীপ্তরঞ্জন কাঁড়ার বলেন, ‘‘এলাকার অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে ডায়ালিসিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সব চাপ মহকুমা হাসপাতালের উপরে পড়েছে। সবাই যাতে ডায়ালিসিস পান নিয়ম মেনে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

ইঞ্জেকশন বাইরে থেকে কিনে দিতে হচ্ছে বলে যে অভিযোগ রোগীরা করেছেন সেই প্রসঙ্গে সুপার বলেন, ‘‘এই সমস্যার কথা আমাকে কেউ জানাননি। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE