Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

এত বাজি এল কোথা থেকে, প্রশ্ন

মৃত্যু-মিছিলের মধ্যেও যাঁরা বাজি ফাটিয়ে উৎসব পালন করলেন, তাঁদের ধিক্কার জানাই। কতটা অমানবিক হলে মানুষ এই ভাবে উল্লাস করতে পারে! বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় পরিবেশকর্মীহাওড়া জেলা (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এত বাজি এল কী ভাবে তা তাদের কাছে অজানা।

উল্লাস: রবিবার রাতে ফাটল এমন বাজিই। —নিজস্ব চিত্র

উল্লাস: রবিবার রাতে ফাটল এমন বাজিই। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
চুঁচুড়া-উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২০ ০৫:০৬
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন দীপ জ্বালতে। বাজি ফাটাতে বলেননি। কিন্তু রবিবার রাতে রাজ্যের অন্যান্য এলাকার মতো দেদার বাজি ফেটেছে দুই জেলার সর্বত্র। এত বাজি এল কোথা থেকে? উত্তর মিলছে না। কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাও নেয়নি পুলিশ প্রশাসন।

হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এত বাজি এল কী ভাবে তা তাদের কাছে অজানা। বাজি ফাটানোর বিরুদ্ধে কারও বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তারা ভাবছে না। জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক কর্তা জানান, কারও কাছ থেকেই এই মর্মে কোনও অভিযোগ আসেনি। হুগলির এক পুলিশকর্তা মনে করছেন, লকডাউনে বাজি বিক্রি হয়নি। মজুত বাজিই ফেটেছে। বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশও মনে করছেন, পুজো-উৎসবের মজুত বাজিই ফেটেছে।

পরিবেশবিদরা মনে করছেন, যে পরিমাণ বাজি ফেটেছে, তা মজুত রাখা সম্ভব ‌নয়। পুলিশের নজরদারির অভাবে বাজি তৈরি এবং বিক্রি চলছে। পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মৃত্যু-মিছিলের মধ্যেও যাঁরা বাজি ফাটিয়ে উৎসব পালন করলেন, তাঁদের ধিক্কার জানাই। কতটা অবিবেচক, অমানবিক হলে মানুষ এই ভাবে উল্লাস করতে পারে! এটা শ্রাদ্ধবাড়ির সামনে বাজি ফাটিয়ে হুল্লোড় করার শামিল। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বা রাজ্য সরকার যে বাজি বন্ধের ব্যাপারে কোনও দায়িত্ব পালন করেনি, সেটাই প্রমাণিত হল। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগও ব্যর্থ।’’

করোনা-যুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, রবিবার রাত ৯টা থেকে ৯ মিনিট ধরে বাড়ির আলো নিভিয়ে মোমবাতি বা প্রদীপ, টর্চ অথবা মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালাতে। কিন্তু রবিবার চৈত্রের আকাশ জুড়ে যেন ‘অকাল দীপাবলি’র রাত নেমেছিল! ৯ মিনিট পেরিয়ে বাজির দাপট দীর্ঘায়িতও হয়।

মারণ ভাইরাসের বিরুদ্ধে যে সব চিকিৎসক বা চিকিৎসাকর্মী লড়াই চালাচ্ছেন এবং যাঁরা অন্যান্য জরুরি পরিষেবা সচল রেখেছেন, তাঁদের অভিনন্দ‌ন জানাতে গত ২২ মার্চ ‘জনতা কার্ফু’র বিকেলে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে হাততালি দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু অনেককেই দেখা গিয়েছিল, থা‌লা, কাঁসরঘণ্টা বাজাতে বাজাতে রাস্তায় নেমেছেন। এ বার প্রধানমন্ত্রীর দীপ জ্বালানোর ঘোষণার পরেই অনেকে আশঙ্কা করেন, উৎসাহের আতিশয্যে ফের উৎসব পালন শুরু হবে। সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়।

হুগলির উত্তরপাড়া, হিন্দমোটর, রিষড়া, শ্রীরামপুর, চন্দননগর, চুঁচুড়া, জিরাট বা গ্রামীণ হাওড়ার উলুবেড়িয়া, বাগনান, উদয়নারাণপুর, আমতা— ছবিটা সর্বত্র একই। দূর আকাশে দিয়ে সশব্দে ফেটেছে বাহারি বাজি। রাস্তায় ফেটেছে চকোলেট বোমা, কালিপটকা। দেশ যেখানে সঙ্কটে, সেখানে এক শ্রেণির মানুষের এমন ‘উৎসব’ পালনে অনেকেই ক্ষুব্ধ।

শ্রীরামপুরের বাসিন্দা, কবি রামকিশোর ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘অসহায় বোধ করছি। মানুষ যেন চেতনা হারিয়ে ফেলছে। এ কি মৃত্যুর পূর্বের উল্লাস!’’ হিন্দমোটরের বাসিন্দা ভাস্কর হালদারের অভিজ্ঞতা, ‘‘ওই সময়টায় ছাদে উঠেছি‌লাম। কাছেই বাজি ফাটতে দেখে দু’-এক জন প্রতিবাদ করেন। প্রত্যুত্তর এল, উলুধ্বনি দিলে সমস্যা হয় না, বাজি ফাটালে দোষ? আশ্চর্য হয়ে গেলাম।’’

গ্রামীণ হাওড়ায় যাঁরা বাজি ফাটিয়েছেন, তাঁদের একাংশের দাবি, অনেক দোকানেই গত বছরের কালীপুজোর বাজি ছিল, সেটাই তাঁরা কিনে আনেন। যদিও এই দাবি পুলিশ মানছে না। কারণ, মুদি দোকান ছাড়া অন্য দোকান এখন বন্ধ। আর সব মুদিখানা এই সময়ে লুকিয়ে বাজি বিক্রি করবে, এটাও মানতে পারছে না পুলিশ। ফলে, রহস্য থেকেই যাচ্ছে।

রবিবার রাতে রিষড়া স্টেশনের কাছেই সদ্য মাধ্যমিক দেওয়া এক কিশোর ফানুস ওড়ানোর তোড়জোড় করতেই আশপাশের কয়েক জন বারণ করেন। নিষেধ করেন তার বাবা-মাও। ভুল বুঝতে পেরে ছেলেটি আর ফানুস ওড়ায়নি। এলাকার এক যুবকের কথায়, ‘‘এই ছেলেটির মতো বাকিরাও ভুল বুঝতে পারলে অমন একটা অমানবিক রাতের সাক্ষী আমাদের থাকতে হতো না!’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE