Advertisement
১১ মে ২০২৪
Cyclone Amphan

মানা হয়নি বিধি, তাই ‘জনরোষ’

বিধি বলছে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করবে পঞ্চায়েত স্তরে চার সদস্যের একটি কমিটি।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২০ ০৪:৫৮
Share: Save:

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির জন্য রয়েছে সুস্পষ্ট একটি সরকারি বিধি। কিন্তু সেই বিধি মেনে ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা তৈরি না হওয়ায় শাসকদল ও প্রশাসন ‘জনরোষের’ মুখে পড়েছেবলে অভিমত প্রশাসনের আধিকারিকের একাংশের।

কী বলছে সেই বিধি?

বিধি বলছে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করবে পঞ্চায়েত স্তরে চার সদস্যের একটি কমিটি। কমিটিতে থাকবেন প্রধান, পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা, পঞ্চায়েত সমিতি ও বিডিও-র মনোনীত দুই প্রতিনিধি। ওই কমিটি ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদনপত্র পরীক্ষা করে চূড়ান্ত করবে তালিকা। সেই তালিকা যাবে ব্লক কার্যালয়ে।প্রয়োজনে ব্লক বা সমিতি সেই তালিকায় সামান্য অদল-বদল করতে পারে।

কী হয়েছে বাস্তবে?

বাস্তব বলছে, বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পঞ্চায়েত সদস্যদের থেকে পাওয়া ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা যাচাই না করেই পঞ্চায়েতের তরফে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল ব্লক কার্যালয়ে। তালিকায় যুক্ত হয়েছিল বিধায়ক ও শাসকদলের প্রভাবশালীদের পাঠানো নামও।পুলিশের থেকেও পাঠানো হয়েছিল নাম। অনেকে আবার ব্যক্তিগত ভাবেও আবেদন করেছিলেন। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করার অবকাশ ছিল না প্রশাসনের কাছে। ফলে, তালিকা থেকে বাদ গিয়েছেন বহু প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত। আবার তালিকায় ঢুকে পড়েছেন শাসকদলের কেষ্ট-বিষ্টুদের ঘনিষ্ঠরা।

হাওড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলায় আমপানের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে চার সদস্যের কমিটি গঠন করাই হয়নি। এক আধিকারিকদের বক্তব্য, ‘‘প্রধান থেকে শুরু করে যাঁরা তালিকা পাঠিয়েছেন, তাঁরা কোনও নাম যাচাই করেননি। ব্লক স্তরে ইচ্ছা মতো তালিকা কাটছাঁট করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাবের জেরে অনেক সুপারিশ টিকে গিয়েছে। ফলে, গুচ্ছ গুচ্ছ ভুয়ো নামের সন্ধান মিলছে। ভুয়ো ক্ষতিগ্রস্তদের একাংশ টাকা ফেরত দিচ্ছেন ঠিকই, তবে তাঁদের নাম যাঁরা সুপারিশ করেছিলেন, তাঁরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘কমিটি তৈরি হলে, তার ঘাড়েই দায় পড়ত। কারণ, ব্লকে যে তালিকা পাঠানো হয়, তাতে কমিটিতে থাকা চার সদস্যের সই থাকে। এ ক্ষেত্রে শাসকদল বা প্রশাসনের কাছে বেনিয়মের দায় কমিটির উপরে চাপানোর কোনও অবকাশ নেই।’’

কেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের বিধি মেনে চার সদস্যের কমিটি গড়া হয়নি, তার কোনও ব্যাখ্যা জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর বা ব্লক স্তর থেকে মেলেনি। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি নন কোনও আধিকারিকই। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘রাজ্য প্রশাসন থেকে চার জনের কমিটি গড়ার ব্যাপারে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ব্লক পর্যায়ে টাস্ক ফোর্স গঠন করে যে ভাবে তালিকা যাচাই করা হচ্ছে , তাতে ত্রুটি অনেকটা সংশোধন হবে।’’

তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন ক্ষতিগ্রস্তেরা দ্রুত ত্রাণ পান।
সেই কারণেই ‘ফোর ম্যান কমিটি’ গড়া হয়নি। দ্রুত তালিকা তৈরি করতে গিয়ে কিছু ভুল হয়েছে। তা সংশোধন করা হচ্ছে।’’

ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা ফরিদ মোল্লার বক্তব্য, ‘‘ স্বচ্ছতার স্বার্থে কমিটি গড়া প্রয়োজন ছিল। কমিটি হলে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করা যেত না। স্বজন-পোষণ হত না।’’ কংগ্রেস নেতা তথা বিধায়ক অসিত মিত্র বলেন, ‘‘আইন যখন আছে, তখন তা মানতে হবে। কিন্তু সরকার তা মানল না।’’

সাঁকরাইলের একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান জানিয়েছেন, তাঁর পঞ্চায়েতে কোন‌ও কমিটি গড়া হয়নি। উল্টে তাঁকে মাত্র দু’ঘণ্টার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা দিতে বলা হয়েছিল। টেলিফোন করে তিনি পঞ্চায়েত সদস্যদের থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা চেয়ে পাঠান। তাঁর স্পষ্ট স্বীকারোক্তি, ‘‘তড়িঘড়ি নামের তালিকা চাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের যাচাই করার সময় পাইনি।’’

ত্রাণের বিষয়টি দেখভাল জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। ওই দফতরের কর্তাদের একাংশ বলছেন, কমিটি না গড়ে যে ভাবে নিয়ম ভেঙে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি হয়েছে, তাতে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের খুঁজতে গেলে ঠগ বাঁছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে। তাঁদের দাবি, এ বার ত্রাণ বা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় তাঁদের যুক্ত করা হয়নি। পুরোটাই করেছে জেলা প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE