অপেক্ষা: তেলেনিপাড়া কাণ্ডে নিখোঁজদের পরিবার। নিজস্ব চিত্র
তেলেনিপাড়া জেটি দুর্ঘটনার পর সাত দিন কেটে গিয়েছে। দুর্ঘটনার পর অনেকের বাড়ির পরিজনই আর ফেরেননি। এমনকী দেহও মেলেনি তাঁদের। আর সেটুকুই ভরসা নিখোঁজদের পরিবারগুলোর। পরিজন ফিরবে, এই আশাতেই বুক বেঁধে রয়েছেন তাঁরা।
গত ২৬ এপ্রিল, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বানের টােন তেলেনিপাড়া জেটি ভেঙে গঙ্গায় নিখোঁজ হয়েছিলেন বহু মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় কয়েকজনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল। উদ্ধারকারী দল এখনও পর্যন্ত ১৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করতে পেরেছে। ঘটনার পর সাত দিন কেটে গেলেও নিখোঁজ তালিকাভূক্ত দশ বছরের এক শিশু-সহ ছয়জনের সন্ধান এখনও পাওয়া যায় নি। তবে তল্লাশি অভিযান এখনও অব্যাহত রয়েছে।
চন্দননগর মালাপাড়ার বাসিন্দা দ্বাদশ শ্রেণির সুরজ শর্মা স্কুলের পরীক্ষার জন্য পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেশে যেতে পারে নি। ভেবেছিল পরীক্ষা শেষ হলে সেও দেশে যাবে। সেই মতোই গত মঙ্গলবার শেষ পরীক্ষা দিয়ে টিটাগড়ে পিসির বাড়ি যাওযার জন্য তেলেনিপাড়া জেটিতে ফেরি ধরার জন্য অপেক্ষা করছিল। সেখান থেকে দেশের বাড়ি বিহারের গয়ায় যাবার কথা ছিল। কিন্তু সেই সময়ই ঘটে যায় মর্মান্তিক সেই দুর্ঘটনা। গঙ্গায় নিখোঁজ হয়ে যায় বছর কুড়ির সুরজ। প্রায় সাতদিন কেটে গেলেও এখনও সুরজের খোঁজ পাওয়া যায়নি। বাবা জিতেন্দ্র এবং মা রীতাদেবী ছেলের ছবি নিয়ে অপেক্ষা করছেন। যদি ছেলে ফিরে আসে!
খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বাঁশবেড়িয়ার বাসিন্দা আট বছরের আদিল খান, মানকুন্ডু কুমড়োবাগানের বাসিন্দা শুভদীপ দাস, তেলেনিপাড়ার বাসিন্দা মহম্মদ কামালউদ্দিন, মহম্মদ রসিদ এবং পারভেজ আলমেরও।
বাঁশবেড়িয়ার ৩ নম্বর গুমটি এলাকার বাসিন্দা ছোট্ট আদিল বাবা, দিদা এবং বোনের সাথে তেলেনিপাড়ায় আত্মীয়ের বাড়িতে নিমন্ত্রণ খেতে নৈহাটি থেকে ট্রেনে চেপে তেলেনিপাড়া জেটিতে নেমেছিল। ঘাটের কাছে আসার পথেই জেটি ভেঙে বাবা, দিদা এবং বোনের সঙ্গে গঙ্গার জলে পড়ে যায় সেও। স্থানীয়দের সহযোগিতার পরিবারের অন্যরা প্রাণে বাঁচে। তবে খোঁজ মেলেনি আদিলের। আতঙ্কের সেই দিন ভুলতে পারছেন না আদিলের দিদাও। প্রাণে বেঁচে ফিরতে পারবেন, সে আশা ছিল না। এখন নিজেকেই বারবার দুষছেন তিনি। কেন যে আদিলের হাতটা আরও শক্ত করে ধরে ছিলেন না!
মঙ্গলবারের আতঙ্কের সকালটা ভুলতে পারছেন না নিখোঁজ শুভদীপের দাদা শুভাশিসবাবু। মানকুন্ডু কুমড়োবাগানের বাসিন্দা শুভাশিসবাবু ব্যবসার কাজে ভাই শুভদীপকে নিয়ে তেলেনিপাড়া থেকে গঙ্গা পেরিয়ে শ্যামনগর যাওয়ার জন্য জেটিতে অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ জেটি ভেঙে দুই ভাই জলে পড়ে যান। অনেক চেষ্টা করেও ভাইকে ফেরাতে পারেন নি দাদা শুভশিসবাবু। সাত দিন কেটে গেলেও ভাইয়ের খোঁজ পাননি তিনি। ব্যবসা লাটে উঠেছে। প্রতিদিন সকাল হলেই বাবাকে মোটরবাইকে চাপিয়ে দক্ষিণের বালি থেকে উত্তরে কুন্তিঘাট ত্রিবেণীর গঙ্গার বিভিন্ন ঘাটে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোই এখন তাঁর রোজনামচা।
তেলেনিপাড়ার জেটি দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর না হয়, তার জন্য গত সোমবার রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী তথা চন্দননগরের বিধায়ক ইন্দ্রনীল সেন ভদ্রেশ্বর পুরসভার পুরপ্রধান মনোজ উপাধ্যায়-সহ কয়েকজন আধিকারিককে নিয়ে দুর্ঘটনাপ্রবণ ফেরিঘাটগুলি ঘুরে দেখেন।
ঠিক সেখানেই আফশোস যাচ্ছে না নিঁখোজদের পরিবারের। বারবার তাঁরা বলছেন, এই সচেতনতা যদি আগে থাকত, এত বড় দুর্ঘটনাটা হয়তো এড়ানো যেত!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy