Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Cyclone Amphan

বাড়িই নেই, নাম ক্ষতিগ্রস্ত তালিকায়

ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় তাঁর নাম ওঠার পরে কৌশিকের দাবি, ‘‘আমার নিজস্ব কোনও বাড়ি নেই। ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য আবেদনও করিনি।

অনৈতিক: খাড়ুবেড়িয়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শ্যামল সামন্তের বাড়ি। এই বাড়িতেই থাকেন সিভিক ভলান্টিয়ার কৌশিক মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

অনৈতিক: খাড়ুবেড়িয়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শ্যামল সামন্তের বাড়ি। এই বাড়িতেই থাকেন সিভিক ভলান্টিয়ার কৌশিক মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

সুব্রত জানা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২০ ০৬:২৪
Share: Save:

বাড়ি নেই। তাই তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রশ্নও নেই। তবু আমপানে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় নাম উঠেছে আত্মীয়ের বাড়িতে বসবাসকারী শ্যামপুর থানার এক সিভিক ভলান্টিয়রের। এই খবর প্রকাশ্যে আসার পরে তাজ্জব সকলে। প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে যখন ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির সময় স্বচ্ছতা বজায় রাখার কথা বলা হচ্ছে, তখন এমন ঘটনা ঘটে কী করে?

ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ আসায় নবান্ন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়, প্রতিটি ব্লকে টাস্ক ফোর্স গঠন করে পঞ্চায়েতের দেওয়া ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা সরেজমিনে পরীক্ষা করতে হবে। সেই মোতাবেক কমিটি গঠিত হয়েছিল শ্যামপুর-২ ব্লকেও। তদন্তের পরে তৈরি হয় নতুন তালিকা। সেই তালিকাতেই রয়েছে খাড়ুবেড়িয়া পঞ্চায়েতের গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা কৌশিক মণ্ডলের। তাঁর নিজস্ব বাড়ি নেই। আদি বাড়ি বাগনানের দেউলটিতে। তবে থাকেন তাঁর আত্মীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শ্যামল সামন্তের বাড়িতে।

ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় তাঁর নাম ওঠার পরে কৌশিকের দাবি, ‘‘আমার নিজস্ব কোনও বাড়ি নেই। ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য আবেদনও করিনি। কী ভাবে আমার নাম তালিকায় উঠল, জানি না।’’ শ্যামলবাবুও বলেন, ‘‘কৌশিক আমার বাড়িতে ছোট থেকেই আছে। ও ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করেনি।’’ সঙ্গে যোগ করেন: ‘‘তালিকায় ওর নাম থাকলে বিডিও-কে বলে বাদ দিয়ে দেব।’’ টাস্ক ফোর্সের সদস্য তথা শ্যামপুরের তৃণমূল বিধায়ক কালিপদ মণ্ডল বলেন, ‘‘তড়িঘড়ি করে কাজ করতে গিয়ে কিছু ভুল হয়ে গিয়েছে। আবার তদন্ত করে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করব।’’ বিডিও (শ্যামপুর ২) সুব্রত ঘোষের বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তদন্ত করব। প্রথম ক্ষতিপূরণের তালিকায় প্রায় ছ’শো জনের নাম ছিল। টাস্ক ফোর্স তৈরির পরে প্রায় ১৩ হাজার আবেদনপত্র জমা পড়ে। সব আবেদনের তদন্ত করে ওঠা সম্ভব হয়নি।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘মোটামুটি হাজার পাঁচেক আবেদনকারীর বাড়ি গিয়ে একটি তালিকা তৈরি হয়েছে। তা থেকে আমরা তেরোশোর মতো নামের একটি তালিকা তৈরি করেছি।’’

কৌশিকের নাম তালিকায় ওঠায় বিরোধী পক্ষ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ ঘটনায় দুর্নীতির গন্ধ পাচ্ছে। তাঁদের বক্তব্য, কৌশিক এলাকায় প্রভাবশালী বলে পরিচিত। সেই কারণেই তাঁর নাম জায়গা পেয়েছে তালিকায়। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দার দাবি, ‘‘শ্যামলবাবুর বাড়িটি দোতলা এবং পাকা। বাড়িতে ‘এসি’ আছে। সেই বাড়িতেই থাকেন কৌশিক। প্রভাবশালী না-হলে তালিকায় ওর নাম উঠত না।’’ গ্রামবাসীর একাংশের আরও অভিযোগ, ‘‘প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকের নাম তালিকায় নেই।’’

স্থানীয় সিপিএম নেতা মেঘনাথ বাগের অভিযোগ, ‘‘ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে শাসকদল দুর্নীতি করছে। আমরা ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েতে ডেপুটেশন দিয়েছি। টাস্ক ফোর্সের তালিকাতেও ভুয়ো নাম রয়েছে। বিডিও-র কাছে স্মারকলিপি দেব।’’ কংগ্রেস নেতা আতিয়ার রহমানের দাবি, ‘‘আবেদনকারীদের আবেদনপত্র টাস্ক ফোর্সের সদস্যেরা খুলেও দেখেননি। অফিসে বসে তৃণমূল নেতাদের দেওয়া নামের তালিকা ঝুলিয়ে দিয়েছে। আর তাতেই ধরা পড়ে গিয়েছে দুর্নীতি।’’

অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূল। শ্যামপুর ২ পঞ্চায়েতে সমিতির সভাপতি তৃণমূলের জুলফিকার আলি বলেন, ‘‘বিরোধীরা তৃণমূলের মুখে কালি ছেটানোর জন্য ইচ্ছা করে কিছু তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠদের নাম জমা দিয়েছে। একটি নাম তালিকায় চলে এসেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE