—প্রতীকী ছবি।
স্বল্প সঞ্চয়ে মানুষকে উৎসাহিত করতে প্রত্যেক ব্লকে ‘সঞ্চয় উন্নয়ন আধিকারিক’ থাকার কথা। কিন্তু, বাস্তব চিত্র বলছে, হুগলির ১৮টির মধ্যে ওই আধিকারিক রয়েছেন মাত্র দু’টি ব্লকে। সেই দুই আধিকারিককেও আবার অস্থায়ী ভাবে অন্যত্র বদলি করায় এখন স্বল্প সঞ্চয়ের পুরো কাজ সামলাচ্ছেন এক জন জেলা সঞ্চয় উন্নয়ন আধিকারিক। এতে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতির সুযোগে ফের ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি মাথাচাড়া দিতে, পারে বলে মনে করছেন প্রশাসনের একাংশ।
এই পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে মানুষকে উৎসাহিত করা যাচ্ছে না বলে প্রশসানের একাংশের বক্তব্য। স্বল্পসঞ্চয় প্রকল্পটি টিকিয়ে রেখেছেন মূলত ডাকঘরের এজেন্টরাই। আরামবাগ, গোঘাট, খানাকুল, তারকেশ্বরের মতো বিভিন্ন ব্লকের ডাকঘর এজেন্টদের অভিযোগ, ব্লক দফতরগুলিতে সর্বক্ষণের আধিকারিকের অভাবে প্রয়োজনীয় পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট খোলার কার্ড শেষ হয়ে গেলেও তা পুনরায় পেতে অসুবিধা হয়। গোঘাট-খানাকুলের মতো এলাকা ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে জেলা সদরে গিয়ে তা সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তা-ও ১০-২০টির বেশি মিলছে না। এজেন্সি চুক্তিপত্র নবীকরণ করতেও জেলা অফিসে দৌড়ঝাঁপ করে হয়রান হতে হয়।
এক জন আধিকারিক দিয়ে ১৮টি ব্লক সামলানো কঠিন বলে জানাচ্ছেন জেলার ডাকঘর এজেন্টদের সংগঠনের সদস্য বনমালী লাহা। তিনি বলেন, “ঝিমিয়ে পড়া সঞ্চয় প্রকল্পে গতি বাড়াতে আমাদের দাবি, ব্লকগুলিতে ফের আধিকারিক নিয়োগ করা হোক। আর তা যদি না-ও করা যায়, তাহলে অন্তত প্রতি সপ্তাহে বা দু’সপ্তাহে অন্তত এক দিন করে প্রতিটি ব্লকে আধিকারিক পাঠানো হোক।”
জেলা প্রশাসনের তরফেও দাবি করা হয়েছে, একার পক্ষে ১৮টি ব্লকের কাজের চাপ সামলাতে অসুবিধা হচ্ছে এক জন আধিকারিকের। জেলা স্বল্প সঞ্চয় আধিকারিক যোগেন্দ্রনাথ সোরেন বলেন, “সাংঘাতিক চাপের মধ্যেই ১৮টি ব্লকের কাজ সারতে হচ্ছে। দু’জন স্বল্প সঞ্চয় উন্নয়ন আধিকারিক যদিও বা ছিলেন, তাঁদের করোনা-কালে অস্থায়ী ভাবে অন্যত্র দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সব কাজ জেলা অফিসে বসেই সারতে হচ্ছে। এখান থেকেই কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট বিডিও-দের কাছে সই করানোর জন্য পাঠানো হচ্ছে।”
কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা রাখলে বেশি হারে সুদ পাওয়া যায়। আমাতকারীদের পাওনা মেটানোর পরে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে জমা টাকা থেকে রাজ্য সরকার সহজ শর্তে ঋণ পায় কেন্দ্রের থেকে। কিন্তু রাজ্য সরকারের উদাসীনতায় স্বল্পসঞ্চয় প্রকল্প ক্রমশ জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে বলে অভিযোগ। স্বল্প সঞ্চয় আধিকারিকদের মূল কাজ হল গ্রামেগ্রামে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে স্বল্পসঞ্চয় প্রকল্পের প্রতি মানুষের উৎসাহ বাড়ানো, এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, তাঁদের নিয়মিত কার্ড সরবরাহ করা এবং ডাকঘরে স্বল্পসঞ্চয় সংক্রান্ত কোনও অসুবিধা দেখা দিলে তার সমাধান করা।
প্রশাসন সূত্রে খবর, কর্মীর অভাবে স্বল্পসঞ্চয় প্রকল্পের প্রচারের কাজ কার্যত বন্ধ। প্রকল্পটিকে যাঁরা জিইয়ে রাখছেন, সেই এজেন্টদের কমিশন কমিয়ে দেওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। দফতরের হাল দেখে প্রশাসনের একাংশের আশঙ্কা, স্বল্পসঞ্চয় প্রকল্প ধাক্কা খেলে ফের ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি মাথাচাড়া দেবে।
স্বল্প সঞ্চয় দফতরের জেলার ডেপুটি ডিরেক্টর অরুণকুমার সেনগুপ্ত বলেন, “অতীতে সব ব্লকে স্বল্প সঞ্চয় আধিকারিক থাকলেও বর্তমানে নেই। অফিসারের অভাবে খুব অসুবিধার মধ্যেই চলছে। বিষয়টা রাজ্য স্তরে জানানো হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy