Advertisement
E-Paper

‘দ্বিতীয় বিয়ে করেছি বলে ফাঁসিয়ে দিয়েছে’! পান্ডুয়া বিস্ফোরণকাণ্ডে ধৃত রিতা কেঁদে ফেললেন আদালতে

পান্ডুয়ায় বোমা ফেটে মৃত্যু হয় রাজ বিশ্বাস নামে বছর বারোর এক কিশোরের। গুরুতর জখম হয় রূপম বল্লভ এবং সৌরভ চৌধুরী। রূপমের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে মা রীতা মণ্ডলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২৪ ২৩:১৯
Pandua Blast Case arrest

কান্নায় ভেঙে পড়লেন পান্ডুয়া কাণ্ডে ধৃত রীতা মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

তিনি প্রথম পক্ষের স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন। সেই রোষেই তাঁকে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন স্বামী এবং তাঁর পরিবার। এমনই দাবি করলেন পান্ডুয়া বিস্ফোরণকাণ্ডে ধৃত রীতা মণ্ডল। আদালতে যাওয়ার পথে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘নিজের সন্তানকে কোন মা মারতে চায়!’’

সোমবার সকালে পান্ডুয়ার তিন্না নেতাজিপল্লি খাদের কাছে বোমা ফেটে মৃত্যু হয় রাজ বিশ্বাস নামে বছর বারোর এক কিশোরের। গুরুতর জখম হয় রূপম বল্লভ এবং সৌরভ চৌধুরী। রাজের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের মেমারি পাল্লা রোডে। স্কুলের ছুটিতে মামার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল সে। তিন জন মিলে খেলছিল। কিন্তু পড়ে থাকা বোমাকে বল ভেবে খেলতে গিয়ে তা ফেটে যায়। বিস্ফোরণের তীব্রতায় এক কিশোরের হাত উড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রাজের। বাকি দুই কিশোরকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় পান্ডুয়া হাসপাতালে। পরে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল তারা। মঙ্গলবার তাদের আরজি কর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

লোকসভা ভোটের আবহে এই বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক শোরগোলে সরগরম পান্ডুয়া। হুগলির বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জিটি রোড অবরোধ করে বিজেপি এনআইএ তদন্তের দাবি করে। ঠিক তখনই হুগলি গ্রামীণ পুলিশ জানিয়ে দেয়, বোমা ফেটে আহত রূপম বল্লভের মা রীতাকে এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে। রীতার প্রাক্তন স্বামী শুকদেব বল্লভ অভিযোগ করেছেন যে, তাঁর ছেলেকে মেরে ফেলতেই বোমা রেখেছিলেন প্রাক্তন স্ত্রী। চুঁচুড়া হাসপাতালে ছেলেকে দেখতে এলে রীতাকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁকে গ্রেফতার করে মগরা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার আদালতে হাজির করানোর সময় রীতা কেঁদে ফেলেন। তিনি দাবি করেন, তিনি বোমা রাখেননি। তিনি কোনও অন্যায় করেননি। তাকে ফাঁসিয়েছেন প্রাক্তন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কাঁদতে কাঁদতে রীতা বলেন, ‘‘নিজের ছেলেকে কেউ মারার চেষ্টা করতে পারে? আমি ওকে মারিনি। আমি ডিভোর্স দিয়ে দ্বিতীয় বার বিয়ে করেছি বলে ওরা আমায় ফাঁসিয়েছে।’’

স্থানীয় সূত্রে খবর, শুকদেবের সঙ্গে রীতার বিবাহবিচ্ছেদ হয় অনেক আগে। তার পর মাস পাঁচেক আগে ওই এলাকারই দেবা সরকার নামে এক যুবককে বিয়ে করেন রীতা। বর্তমানে তাঁরা বিহারে থাকতেন। রীতার বর্তমান স্বামী হাতুড়ে চিকিৎসক। বিয়ের পর মাত্র দু’বার পান্ডুয়া আসেন রীতা। দিন তিনেক আগে দাঁতের চিকিৎসার জন্য আবারও গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। প্রাক্তন স্বামীর বাড়িতে না গেলেও সন্তানকে ডেকে কথা বলতেন বলে জানিয়েছেন রীতার প্রতিবেশীরা। সেই ছেলেকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে রীতা গ্রেফতার হয়েছেন। এই ঘটনা নিয়ে রীতার প্রাক্তন শাশুড়ি শুকদেবের মা ঊষা বল্লভের বক্তব্য আবার ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘‘বৌমা আট বছর আমাদের বাড়িতে থাকে না। ও বাপের বাড়িতে থাকে। ও কেন ছেলেকে খুন করতে যাবে! নাতির হাত উড়ে গিয়েছে দেখে ছেলের মাথার ঠিক নেই। তাই ও অভিযোগ করেছে। বৌমা এতে জড়িত নয়।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন, ওই বোমা রাখা কোনও সাধারণ মানুষের কাজ হতে পারে না। অন্য দিকে, পুলিশ সূত্রে খবর, বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও কেউ যুক্ত থাকতে পারেন। দু’জনের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এক জন গ্রেফতারও হয়েছেন। অপর জনের খোঁজ চলছে।

মঙ্গলবার বিকালে হুগলি জেলা পরিষদের সদস্য মানস মজুমদার চুঁচুড়া পুরসভার কাউন্সিলর সমীর সরকারকে নিয়ে জখম রূপম ও সৌরভকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে আরজি কর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। মানস জানান, পান্ডুয়ার বিধায়ক রত্না দে নাগের সহযোগিতায় জেলা স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে দুই কিশোরের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মঙ্গলবার হাসপাতালে মেডিক্যাল বোর্ড বসে সিদ্ধান্ত নেয় আহত দুই কিশোরের আরও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। কয়েকটি অস্ত্রোপচার করতে হবে। তাই আরজি কর হাসপাতলে কথা বলে বেডের ব্যবস্থা থেকে চিকিৎসা যাতে ঠিকঠাক হয় তার সব রকম ব্যবস্থা করে সেখানে পাঠানো হল।’’

Pandua bomb blast Bomb Blast Case arrest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy