গাছ লাগাতে ব্যস্ত প্রবীর। নিজস্ব চিত্র
জন্ম থেকেই সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না প্রবীর। শুধু দু’পায়ের ভরসায় হাঁটতেও পারেন না। তবে পিছিয়ে পড়তে চান না চাতরার প্রবীরকুমার পাল। অদম্য উৎসাহে কাজ করে চলেন। স্কুলের কাজ— কখনও শিক্ষক, কখনও বাগানের কাজ। প্রয়োজন হলে স্কুল চত্বর সাফ করতে ঝাঁটাও ধরেন গ্রামের ‘মাস্টার মশাই’। রোজগার বলতে টিউশনের হাজার তিনেক টাকা আর ৭৫০ টাকার প্রতিবন্ধী ভাতা। তা দিয়েই চলে মা-ছেলের সংসার।
প্রতি বছর শিক্ষক দিবসে গাছ লাগান নিজের স্কুল গোঘাট-১ ব্লকের চাতরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শুধু তাই নয় ৫ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে আশপাশের গ্রামের স্কুলগুলোতেও যান প্রবীর গাছ লাগাতে। এ বার বালিবেলা প্রাথমিক স্কুলে গিয়েছিলেন তিনি। নিজে হাতে গাছ লাগিয়েছেন স্কুলের বাগানে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিজয় রায় বলেন, “প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে গ্রামে শিক্ষা এবং পরিবেশ সচেতনতায় একটা নজির গড়ে চলেছেন প্রবীর। বৃক্ষরোপণ করে স্কুলে খুব সুন্দর একটা পরিবেশ তৈরি করছেন। শিক্ষক দিবসে সেরা প্রাপ্তি আমাদের।”
চাতরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত ২০ বছর ধরে পড়াচ্ছেন বছর বিয়াল্লিশের প্রবীর। তখন তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। স্কুলে শিক্ষকের অভাব ঘোচাতে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক বিভূতি সামুই গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করে স্কুলে প়ড়ানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন প্রবীরকে। সেই শুরু। ২০০৬ সালে চারজন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে ওই স্কুলে। কিন্তু প্রবীর রয়েই গিয়েছেন।
বর্তমান প্রধান শিক্ষক মানিকচন্দ্র ধাড়া বলেন, “প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ছাত্র পিছু ৫ টাকা করে নিয়ে তহবিল তৈরি করে প্রবীরকে সামান্য সম্মান দক্ষিণা দেওয়া হবে। কিন্তু তা নিতে অস্বীকার করেন প্রবীর। আসলে ওঁর মানসিকতাটাই একটা বড় শিক্ষা নতুন প্রজন্মের কাছে। উনি হলেন সত্যিকারের মাস্টারমশাই।’’
বাবা তারাপদ পাল মারা যাবার পর প্রবীরের পাঁচ ভাই আলাদা হয়ে গিয়েছেন। মা হীরারানী পালকে নিয়ে থাকেন প্রবীর। পৈতৃক ৯ কাঠা জমি, টিউশন আর ভাতা নিয়ে সন্তুষ্ট প্রবীর। হালকা হেসে বলেন, “কারও কাছে কিছুই দাবি নেই আমার। কাজ করতে ভাল লাগে। কাজ করতে চাই। মাকে ভাল রাখতে চাই। প্রতিবন্ধকতা আমাকে কাবু করতে পারেনি, পারবেও না কখনও।”
গ্রামের মানুষ মাস্টারমশাইকে নিয়ে খুবই গর্বিত। তাঁরা জানান, ‘‘সব সময় পাশে আছি।’’ তাঁরাই ২০০১ সালে একটি হুইল চেয়ার কিনে দিয়েছেন প্রবীরকে। বছর দুই আগে গোঘাট থানা থেকে তাঁকে একটি মোবাইল ফোনও দেওয়া হয়। প্রবীর বলেন, ‘‘সবই মানুষের ভালবাসা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy