Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Onion Farmers

বিমার টাকা অমিল, সমস্যায় পেঁয়াজ চাষিরা

সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থার তরফে জানা গিয়েছে, চাষিদের ক্ষতিপূরণ নির্ধারিত হয় অনেক বিষয়ে খতিয়ে দেখার পরে। সরকারি নানা তথ্যের উপরে তা নির্ভর করে।

—ফাইল চিত্র

—ফাইল চিত্র

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
বলাগড় শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২০ ০১:১৫
Share: Save:

নির্দিষ্ট সময়ে বিমার প্রিমিয়াম জমা দিয়েছেন চাষিরা। অথচ বিমার টাকা পাচ্ছেন না ক্ষতিগ্রস্ত পেঁয়াজচাষিরা। ফলে মহাজনের কাছে ঋণের জন্য হাত পাততে হচ্ছে হুগলি জেলার ওই সব চাষিদের।

হুগলির কয়েকটি ব্লকে পেঁয়াজ চাষ হয়। এর অধিকাংশই হয় বলাগড়ে। এখানকার ‘সুখসাগর’ প্রজাতির পেঁয়াজের নাম রয়েছে। সূত্রের খবর, গত মরসুমে অসময়ের বৃষ্টিতে ফলন তোলার মুখেই পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। তার ফলে এই জেলার প্রায় সাড়ে তিনশো চাষি বিপাকে পড়েন। এই পরিস্থিতিতে বিমার টাকা দ্রুত যাতে তাঁদের দেওয়া হয়, সেই দাবি করছেন তাঁরা।

বলাগড়ের সিজা-কামালপুর পঞ্চায়েত পেঁয়াজ চাষের জন্য বিখ্যাত। এই পঞ্চায়েতের ২১টি গ্রামের মধ্যে ১৬টি গ্রামের চাষি এলাকার কৃষি সমবায় থেকে ঋণ নেন। ওই সমবায় সূত্রের খবর, পেঁয়াজ চাষের জন্য চাষিদের মোট ১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল। সেই ঋণের সাপেক্ষে বিমা-সংস্থাকে ব্যাঙ্ক মারফত চাষিদের থেকে নেওয়া ৬ লক্ষ ২৭ হাজার ৩৮২ টাকা জমা দেওয়া হয়েছিল। ওই সমবায় ব্যাঙ্কের ম্যানেজার অমিত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে চাষিরা ওই টাকা জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু চাষ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরেও এত দিনে বিমার টাকা তাঁরা পাননি। সমবায়ের মাধ্যমে চাষিদের ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়েছিল। এখন বকেয়া টাকা না পেলে পরের মরসুমে তাঁরা কী করে চাষ করবেন?’’ এই প্রশ্নই এখন ঘুরছে পেঁয়াজচাষিদের মুখে।

বলাগড়ের মালঞ্চ এলাকার চাষি মিনাজুল হক বলেন, ‘‘বিমা করে লাভ কী হল? বৃষ্টিতে গতবার পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেল, অথচ এখনও বিমার টাকা পেলাম না। সমবায়, উদ্যানপালন দফতরে বার বার যাচ্ছি আর ফিরে আসছি। বিমা সংস্থা গরিব চাষিদের টাকা কেটে নিল, ফেরত দিল না। এখন চাষের জন্য মহাজনের কাছে হাত পাতা ছাড়া আমাদের আর কোনও উপায় থাকছে না।’’

সমবায়ের ম্যানেজার অমিতবাবু বলেন, ‘‘চাষিরা ঠিকই বলছেন। সমস্যা হচ্ছে, ওঁরা ঋণ শোধ না করলে সমবায়ই বা চলবে কী করে? আমরা সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় কথা বলেছি। কিন্তু ফল পাইনি।’’ জেলা উদ্যানপালন দফতরের অধিকর্তা মৌটুসি মিত্র ধর বলেন, ‘‘আমরা আমাদের তরফে সব রকম চেষ্টা করছি। সংশ্লিষ্ট জায়গায় বার বার চিঠি দিয়েছি। সরকারি পদস্থ কর্তাদের জানিয়েছি। কিন্তু বিমার বকেয়া টাকা এখনও চাষিরা পাননি। তবে, চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’’

সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থার তরফে জানা গিয়েছে, চাষিদের ক্ষতিপূরণ নির্ধারিত হয় অনেক বিষয়ে খতিয়ে দেখার পরে। সরকারি নানা তথ্যের উপরে তা নির্ভর করে। এই ক্ষেত্রে আবহাওয়ার কারণে পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছিল। সেই সংক্রান্ত কিছু রিপোর্ট এখনও জমা পড়েনি। তাই বিমার টাকা চাষিদের দেওয়া যায়নি।

চাষিদের বক্তব্য, পদ্ধতি মেনে তাঁরা বিমা করেন। কিস্তির টাকা ব্যাঙ্ক মারফত জমা দেন। ফলন নষ্ট হওয়ায় আখেরে তাঁদের ঋণে জর্জরিত হতে হয়েছে। দোষ না থাকলেও বিমার টাকা না পাওয়ায় তাঁদেরই ভুগতে হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Onion farmers Finance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE