Advertisement
০৫ মে ২০২৪
নয়া কৃষি বিলে আপত্তি উঠছে নানা স্তরে
Farmer Bill

স্থানীয় ব্যবসা লাটে উঠবে, বাড়ছে শঙ্কা

কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কারে নেমেছে কেন্দ্র। এ সংক্রান্ত বিল পাশ হয়েছে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দানা বাঁধছে দেশের নানা প্রান্তে। এ রাজ্যের অন্যতম ‘শস্যগোলা’ হুগলির কৃষি মহল কী ভাবছে? নয়া সিদ্ধান্তে লাভ না ক্ষতি? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য নয়া কৃষি বিলে ঠিক কী থাকছে তা রাজ্যের অন্যতম ‘শস্যগোলা’ হুগলির বহু চাষির কাছেই স্পষ্ট নয়। তবে, মোস্তাফার মতো কৃষি-ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ আশঙ্কাই প্রকাশ করেছেন।

প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
আরামবাগ শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:২৭
Share: Save:

১১ বছর ধরে একটি বহুজাতিক সংস্থার সঙ্গে চুক্তিতে আলু চাষ করছেন গোঘাটের ভিকদাসের কিছু চাষি। সংস্থাই চাষিদের আলুবীজ, সার, কীটনাশক থেকে চাষের যাবতীয় সরঞ্জাম দেয়। আলুর দামও নির্ধারণ করে তারা। সেই নির্ধারিত দামে চাষিরা শুধু ওই সংস্থাকেই আলু বিক্রি করেন।এতেই তাঁদের অনেকের ব্যবসার ক্ষেত্র ছোট হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন ভিকদাসের আলু ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তাফা। ফলে, নয়া কৃষি বিল অনুযায়ী চুক্তিভিত্তিক চাষ বাড়লে তাঁদের ব্যবসা আরও সঙ্কটে পড়বে বলে মনে করছেন মোস্তাফা। তিনি বলেন, ‘‘এখনই আমরা ভুগছি। এই এলাকা থেকে আগের চেয়ে কম আলু পাচ্ছি। আরও চুক্তিভিত্তিক চাষ বাড়লে আমরা কোথায় যাব?’’

কিন্তু চাষি তো উপকৃত হচ্ছেন? মানছেন না মোস্তাফা। তাঁর দাবি, সব সময়ে চাষি উপকৃত হচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘‘ওই সংস্থার দামের চেয়ে বাজারে যখন আলুর বেশি দাম ওঠে, তখন চাষি বাজারে বিক্রি করতে পারেন না। তা ছাড়া, সংস্থা ভাল আলু বেছে নেয়। ফলে, খারাপ আলুর জন্য চাষিকে লোকসান মেনে নিতে হয়। আমরা সব ধরনের আলুর প্যাকেট নিয়ে নিই।’’

কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য নয়া কৃষি বিলে ঠিক কী থাকছে তা রাজ্যের অন্যতম ‘শস্যগোলা’ হুগলির বহু চাষির কাছেই স্পষ্ট নয়। তবে, মোস্তাফার মতো কৃষি-ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ আশঙ্কাই প্রকাশ করেছেন। চিন্তা বাড়ছে গোঘাটের ধানের আড়তদার মনোজ দে’রও। তিনি বলেন, ‘‘কৃষি বিলে বলা বচ্ছে, অত্যাবশ্যক পণ্য যথেচ্ছ মজুত করা যাবে। চুক্তিভিত্তিক চাষে বড় সংস্থাকে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় আমরা মাল মজুত করতে চাইলে পাব কোথায়?”

একই প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্য হিমঘর মালিক সংগঠনের অন্যতম কর্ণধার পতিতপাবন দে। তিনি বলেন, ‘‘নতুন বিল এখনও আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। তবে প্রচিলত ব্যবস্থায় আলু তোলা থেকে হিমঘরে রাখা এবং বাজারে পৌঁছনোর পথে বহু মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। এখন বড় সংস্থা এসে পুরো ব্যবস্থাটাই কুক্ষিগত করলে আমরা ছোট ব্যবসায়ীরা যাব কোথায়?’’

আরামবাগের মুদি ব্যবসায়ী বলাই নন্দী বা খানাকুলের ঘোষপুরের মুদি দোকানি বিল নিয়ে যেটুকু বুঝেছেন, তাতেই ভয় পাচ্ছেন। শ্রীকান্তের কথায়, ‘‘বড় দোকানগুলি যথেচ্ছ মাল মজুত করে দাম বাড়াবে। গ্রামের দোকান এমনিতেই ধার-বাকিতে চলে। মালের যথেচ্ছ দাম বাড়লে এরপর গ্রামের দোকানে খদ্দেরই মিলবে না।” সরকারি ভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ করা না হলে কালোবাজারি বাড়বে বলে মনে করছেন বলাই।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, এ রাজ্যে প্রয়োজনের ৭০ শতাংশ ডাল আসে হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্য থেকে। বাকি ডাল রাজ্যের চাষিরা ফলান। তাঁরা তা নিয়ে আসেন ‘মান্ডি’-তে। সেখান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে রাজ্যে সরবরাহ করেন। তাঁদের আশঙ্কা, চুক্তি চাষকে হাতিয়ার করে বহুজাতিক সংস্থাগুলি জমি থেকেই চাষিদের ডাল তুলে নেবেন। চাষিদের আর মান্ডিতে আসার দরকার হবে না। অন্যদিকে, মজুত করার সীমারেখা তুলে দেওয়ার ফলে বহুজাতিক সংস্থাগুলি যথেচ্ছ ডাল মজুত করতে পারবে। সেই ডাল তারা নিজেদের নির্ধারিত দামে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করবে। এতে ডালের দাম বৃদ্ধি পাবে। (শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

farmer Bill TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE