Advertisement
০৮ মে ২০২৪

চোর সন্দেহে মার, চোখে লঙ্কাগুঁড়ো টোটোচালকের

কিছু দিন আগেই শ্রীবাস দত্ত লেনে চোর সন্দেহে বাপি প্রসাদ নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে বাতিস্তম্ভে বেঁধে লাঠি আর বাঁশ দিয়ে পিটিয়েছিলেন তাঁরই পাড়ার লোকজন। এ বার চোর সন্দেহে গণপিটুনি দেওয়া হল এক টোটোচালককে।

প্রহৃত: হাসপাতালে ফিরোজউদ্দিন মোল্লা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

প্রহৃত: হাসপাতালে ফিরোজউদ্দিন মোল্লা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৮
Share: Save:

হাওড়া রয়েছে হাওড়াতেই!

কিছু দিন আগেই শ্রীবাস দত্ত লেনে চোর সন্দেহে বাপি প্রসাদ নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে বাতিস্তম্ভে বেঁধে লাঠি আর বাঁশ দিয়ে পিটিয়েছিলেন তাঁরই পাড়ার লোকজন। এ বার চোর সন্দেহে গণপিটুনি দেওয়া হল এক টোটোচালককে। লোহার রড, স্টিল পাঞ্চার ও হকি স্টিক দিয়ে বেধড়ক মারা হল তাঁকে। শুধু তা-ই নয়, তাঁর চোখে ঘষে দেওয়া হল লঙ্কাগুঁড়ো। ছুরিও মারার চেষ্টা হল পেটে।

বুধবার রাতে এই ঘটনা ঘটেছে সাঁতরাগাছি এলাকার দক্ষিণ বাকসাড়ার শিবতলায়। হাওড়া শহরে এক মাসে দু’টি গণপিটুনির ঘটনায় এ বার পুলিশের নজরদারি নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। শ্রীবাস দত্ত লেনের ঘটনার পরে এক মাস কেটে গেলেও পুলিশ কাউকে ধরতে পারল না কেন? কেনই বা গণপিটুনির খবর সময়মতো পুলিশের কাছে পৌঁছচ্ছে না? অপরাধীরাই বা রেহাই পাচ্ছে কী ভাবে?

পুলিশ জানিয়েছে, আক্রান্ত টোটোচালকের নাম ফিরোজউদ্দিন মোল্লা। বছর আঠেরোর ওই তরুণের বাড়ি স্থানীয় তিন নম্বর সুলতানপুর হাজিবাড়িতে। বাবা নবাবউদ্দিন মোল্লা পেশায় দর্জি। ফিরোজউদ্দিন এক জনের কাছ থেকে ভাড়ায় টোটো নিয়ে চালাতেন। রোজই শিবতলায় টোটো রেখে সুলতানপুরে ফিরতেন তিনি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত আটটা নাগাদ শিবতলার মাঠে টোটো রাখতে যান ফিরোজউদ্দিন। ওই সময়ে মহিলা-পুরুষ মিলিয়ে ৮০-৯০ জন ‘চোর’ ‘চোর’ বলে চিৎকার করতে করতে কাউকে তাড়া করছিলেন। রাস্তার ধারে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা ফিরোজউদ্দিনকে দেখতে পেয়ে তাঁকেই চোর ভেবে বসেন সকলে। তার পরেই শুরু হয় বেধড়ক মার। প্রথমে পিছন থেকে সজোরে রড দিয়ে আঘাত করতেই মাটিতে পড়ে যান ফিরোজউদ্দিন। মাথা ফেটে গলগল করে রক্ত বেরোতে থাকে। সেই অবস্থাতেই তাঁকে রাস্তায় ফেলে শুরু হয় হকি স্টিক ও লাঠি দিয়ে মারধর। এক জন তাঁর চোখে লঙ্কা গুঁড়ো ঠেসে ধরেন। শুধু তা-ই নয়। অভিযোগ, ওই অবস্থায় তাঁর মুখে স্টিল পাঞ্চার দিয়ে পরপর ঘুসি মারা হয়। একটা ঘুসি লাগে বাঁ দিকের চোখে। চারপাশে রক্ত জমাট বেঁধে চোখ ফুলে যায়। উন্মত্ত জনতার হাত থেকে ওই যুবককে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন এলাকার একটি ক্লাবের সদস্যেরা। কোনও রকমে ওই যুবককে উদ্ধার করে ক্লাবে নিয়ে আসেন তাঁরা। এর পরে পুলিশ এলে ওই যুবককে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ গুরুতর আহত ওই যুবককে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে।

বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে শুয়ে ফিরোজউদ্দিন বলেন, ‘‘টোটোর চাবি দেখিয়ে বারবার ওদের বলছিলাম, আমি টোটোচালক। গাড়ি রাখতে এসেছিলাম। কিন্তু কেউ শোনেনি।’’ হাসপাতালে ছেলেকে দেখতে এসেছিলেন নবাবউদ্দিন মোল্লা। তিনি বলেন, ‘‘আমি পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। ওকে যারা এ ভাবে মেরেছে, তাদের ছাড়ব না। ওর মোবাইল, টাকার ব্যাগ ও টোটোর চাবিটাও চুরি গিয়েছে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, গোটা দক্ষিণ বাকসাড়ায় ছিঁচকে চুরি বেড়ে যাওয়ায় মানুষ অতিষ্ঠ। এলাকার বাসিন্দা লক্ষ্মী দাস বলেন, ‘‘আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। সন্ধ্যা হলেই দরজা বন্ধ করে থাকছি।’’

যে ক্লাবের সদস্যেরা ওই যুবককে বাঁচান, তার কোষাধ্যক্ষ কিশোর রায় বলেন, ‘‘যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। আমরা ওকে উদ্ধার করে ক্লাবে নিয়ে না এলে হয়তো মেরেই ফেলত।’’

হাওড়ার পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘চোর সন্দেহে কেন এ ভাবে ওই যুবককে মারা হল, তা আমরা তদন্ত করে দেখছি। মারধরের মামলা রুজু হয়েছে। অপরাধীদের গ্রেফতার করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Violence Beating Toto Driver
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE