বেনিয়ম: নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দুই জেলার অধিকাংশ পেট্রোল পাম্পে এ ভাবে হেলমেট ছাড়াই চলে তেল দেওয়া। নিজস্ব চিত্র
মোটরবাইক চালক ও আরোহীদের হেলমেট ব্যবহারে বাধ্য করতে প্রচারের অন্ত নেই। ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’-এর বার্তা পৌঁছে দিতে বিভিন্ন এলাকায় ঘটা করে কর্মসূচিও হচ্ছে। এই অভিযানের মধ্যেই রয়েছে ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’। অর্থাৎ, হেলমেট না থাকলে পাম্প থেকে তেল মিলবে না। এই প্রকল্পেই গত বছর থেকে পে0ট্রোল পাম্পে সিসিটিভি লাগানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই নিয়ম মানা হচ্ছে কই!
হাওড়া ও হুগলি জেলার একাধিক পাম্পের বিরুদ্ধে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে হেলমেটহীন মোটরবাইক চালককে পেট্রোল দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মাস খানেক আগে এমনই এক অভিযোগ পেয়ে তারকেশ্বরের একটি পাম্প বন্ধ করে দিয়েছিল হুগলি জেলা পুলিশ। সেই সময় পুলিশের তরফ থেকে লাগাতার অভিযানের ঘোষণাও করা হয়েছিল। তারপরও কি দুই জেলায় ছবি বদলছে এতটুকু?
হেলমেট-বিধি জারির পর আরামবাগের পাম্পগুলিতে নিয়ম মেনে তেল দেওয়া হচ্ছিল বেশ কয়েক মাস। কিন্তু এখন বালাই নেই সেই নিয়মের। শহরে রয়েছে ৫টি পেট্রোল পাম্প। কোনও পাম্পে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। এক পেট্রোল পাম্পের মালিক মানসপ্রিয় সামন্ত বলেন, ‘‘হেলমেট ছাড়া তেল দেব না বললে কেউ শুনছে না। উল্টে তর্ক করছে। মারধরের হুমকি দিচ্ছে।’’ অন্য একটি পাম্পের ম্যানেজার রাজীব চক্রবর্তী জানান, ‘‘সব পাম্পেই তো হেলমেট ছাড়া তেল দেওয়া হচ্ছে। তাই আমরাও দিচ্ছি।’’
পান্ডুয়া-বলাগড় এলাকার একটিও পেট্রোল পাম্পে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। সরকারি নির্দেশ না মেনে হেলমেটহীন বাইক সওয়ারিকে দেওয়া হচ্ছে তেল। এমনকী খোদ পুলিশ কর্মীরাও এ ভাবেই পেট্রোল ভরছেন বাইকে। এক পেট্রোল পাম্পের মালিক বলেন, ‘‘পুলিশ তো কোনও দায়িত্ব নেয় না। জানেন, কত সময় ছুরি দেখিয়ে কতজন তেল ভরে নিয়ে গিয়েছে। আমাদের প্রাণের দাম নেই?’’ খন্যানের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘প্রথম দিকে পুলিশি নজরদার ছিল। তাই সহজে হেলমেটহীনদের তেল দেওয়া হতো না। কিন্তু এখন নজরদারি কম। ফলে সকলেরই গা ছাড়া ভাব।’’
হাওড়া গ্রামীণ এলাকার পেট্রোল পাম্পের ছবিও একই রকম। মঙ্গলবার উলুবেড়িয়ার নিমদিঘিতে মুম্বই রোডের ধারে একটি পেট্রোল পাম্প থেকে হেলমেট ছাড়া তেল ভরে নিলেন কয়েকজন যুবক। হেলমেট পরেননি কেন? শেখ রফিক নামে এক বাইকচালকের উত্তর, ‘‘ইসআই হাসপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছেন। তাঁকে দেখতে যাচ্ছি। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে হেলমেট আনতে ভুলে গিয়েছি।’’ আমতা, উদয়নারায়ণপুর, ডোমজুড়, শ্যামপুর-সব এলাকার ছবি একই।
কিন্তু কেন নির্দেশ মানা হচ্ছে না?
চুঁচুড়া শহরের এক পাম্প মালিকের কথায়, ‘‘মানুষই আদতে সচেতন নন। ফলে কেউ যদি হেলমেট না পরে বাইক চালান, সেটা তাঁর সমস্যা। আমরা তেল দিতে না চাইলে শুনছে কে!’’ রানিহাটির এক পাম্প মালিকের ক্ষোভ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থানীয়রাই হেলমেট না পরে তেল নিতে আসেন। এমনকী তেল না দিলে পাম্পে ভাঙচুর চালানো হয় বলেও অভিযোগ। পাম্প মালিকদের তাই পাল্টা দাবি, প্রতি পেট্রোল পাম্পে অন্তত দু’জন করে যাতে সিভিক ভলান্টিয়ার রাখার ব্যবস্থা করা যায়। পুলিশি অভিযান শিথিল হওয়ায় ক্ষুব্ধ একাংশ শহরবাসীও। শহরবাসীর দাবি, পুলিশ লাগাতার অভিযান চালাক। পেট্রোল পাম্পের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
হাওড়া (গ্রামীণ) জেলার পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘পাম্প মালিকদের কাছে হেলমেটহীন বাইক চালকদের তেল না দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল। জানি সেটা ঠিকভাবে মানা হচ্ছে না। পুলিশের তরফ থেকে আরও বেশ নজরদারি চালানো হবে। পাম্পে সিভিক ভলান্টিয়ার রাখার প্রস্তাবও ভেবে দেখা হবে।’’ একই সুর হুগলি (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার সুকেশ জৈনের গলাতেও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পেট্রোল পাম্পগুলির উপর নজর রাখছি। আর হেলমেট ছাড়া বাইক চালালেই তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy