Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
তিন বছরেও কাটল না ফ্রেট করিডরের জমি-জট

ফের কাজে বাধা সিঙ্গুরে

২০১০ সালে রেলমন্ত্রী থাকার সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পণ্য পরিবহণের জন্য ডানকুনি থেকে লুধিয়ানা পর্যন্ত ‘ফ্রেট করিডর’ গড়ার কথা ঘোষণা করেন। সেইমতো ‘ফ্রেট করিডর’-এর জন্য সিঙ্গুর লাগোয়া তিনটি মৌজায় রেল এবং রাজ্য সরকার জমি মাপার কাজ শুরু করে।

প্রতিবাদ: চলছে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র

প্রতিবাদ: চলছে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র

দীপঙ্কর দে
সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৭ ০২:৩১
Share: Save:

জট কাটল না তিন বছরেও। সিঙ্গুরের জমি-জট। তবে এই জমি-জট টাটাদের কারখানা নিয়ে নয়। রেলের ফ্রেট করিডর নিয়ে।

ফের সোমবার প্রস্তাবিত ফ্রেট করিডরের জন্য সিঙ্গুরে জমি মাপজোকের কাজ করতে গিয়ে গ্রামবাসীদের বাধায় ফিরতে হল রেল ও রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকদের। ‘বাসস্থান ও জীবিকা নির্বাহ রক্ষা কমিটি’র নেতৃত্বে বলরামবাটিতে এ দিন যে বিক্ষোভ হয়, সেখানে দেখা গিয়েছে অনেক তৃণমূল কর্মী-সমর্থককেই। চাকরি এবং ক্ষতিপূরণের নির্দিষ্ট লিখিত প্রতিশ্রুতি ছাড়া জমি মাপতে দেবেন না বলে এ বারও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

২০১০ সালে রেলমন্ত্রী থাকার সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পণ্য পরিবহণের জন্য ডানকুনি থেকে লুধিয়ানা পর্যন্ত ‘ফ্রেট করিডর’ গড়ার কথা ঘোষণা করেন। সেইমতো ‘ফ্রেট করিডর’-এর জন্য সিঙ্গুর লাগোয়া তিনটি মৌজায় রেল এবং রাজ্য সরকার জমি মাপার কাজ শুরু করে। বারুইপাড়ায় ইতিমধ্যে ওই কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সিঙ্গুরের রামনগর, মির্জাপুর-বাঁকিপুর এবং বলরামবাটি অংশে এখনও সেই কাজ করা যায়নি। সেখানে ‘বাসস্থান ও জীবিকা নির্বাহ রক্ষা কমিটি’ গড়ে তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ২০১৩ সালে প্রথমবার বলরামবাটিতে জমির মাপজোক করতে গিয়ে ওই কমিটির বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল রেল ও রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকদের। সেই সময় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী জানিয়েছিলেন, এই প্রকল্পে চাকরি দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই।

তার পরে তিনটি বছর পেরিয়েছে। সিঙ্গুর ব্লক অফিসে প্রশাসনের কর্তা এবং আন্দোলনকারীরা দু’বার বৈঠকও করেছেন। কিন্তু কোনও রফাসূত্র বেরোয়নি। আন্দোলনকারীরাও তাঁদের দাবি থেকে সরেননি। বারুইপাড়া, রামনগর, মির্জাপুর-বাঁকিপুর এবং বলরামবাটি মৌজায় প্রকল্পের কাজের মধ্যে ১১০-১২০টি পরিবারের বাড়ি, দোকানঘর ও জমি পড়েছে।

এ দিনও বলরামবাটি স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় জমি মাপতে এসেছিলেন রেল ও রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকেরা। সেখানেই বিক্ষোভ হয়। ‘বাসস্থান ও জীবিকা নির্বাহ রক্ষা কমিটি’র সম্পাদক অনুপ দাস বলেন, ‘‘আমরা ফ্রেট করিডরের পক্ষে। কিন্তু কেন রেল আমাদের অন্ধকার রেখেছে? প্রকল্প চালু করতে হলে আমাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। প্রশাসনের তরফে ক্ষতিপূরণের কোনও ঘোষণা না করে কেন মাপজোক হবে?’’

হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) পূর্ণেন্দু মাঝি বলেন, ‘‘যে জায়গা দিয়ে করিডর হবে, সেটি তো আগে চিহ্নিত করতে হবে। সেই কাজ না করে ক্ষতিপূরণ কী ভাবে দেওয়া যাবে?’’ তাঁর আশ্বাস, চিহ্নিতকরণ হয়ে গেলে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হবে। তার পরে ওই গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথাও বলা হবে। তাঁদের আশঙ্কার কোনও কারণ নেই।

এ দিন ফিরে যাওয়ার সময় জমি মাপতে আসা এক রেলকর্তা বলেন, ‘‘নির্দেশমতো জমি মাপতে এসেছিলাম। এলাকার মানুষের কিছু সমস্যা রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’’ এই আন্দোলন নিয়ে তিনি অন্ধকারে বলে দাবি করেছেন সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘রেল ওখানে কী চাইছে, গ্রামবাসীরাই বা কী চাইছেন, সে ব্যাপারে বিধায়ক হিসেবে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। আন্দাজ বা অনুমানে কিছু বলব না। আমাকে জানানো হলে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলা যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE