দুর্গাপুরের বাসিন্দা সুচেতা চক্রবর্তী ও তাঁর শিশুকন্যা দীপাঞ্জনাকে খুনের মামলায় বুধবার সাক্ষ্য দিলেন আরও এক গাড়িচালক। নুর হাসান আলি নামে ওই চালক এ দিন শ্রীরামপুর আদালতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক রাজা চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে সাক্ষ্য দেন। যে গাড়িতে চড়ে সমরেশ দুর্গাপুর থেকে বর্ধমান পর্যন্ত এসেছিলেন বলে অভিযোগ, তার চালক ইতিমধ্যেই সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এ দিন সরকারি কৌঁসুলি জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্নের উত্তরে নুর জানান, গত বছরের ২৯ অগস্ট, রাখি পূর্ণিমার দিন সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ তিনি বর্ধমান স্টেশনে তাঁর মারুতি গাড়ি পরিষ্কার করছিলেন। সেই সময় একটি গাড়ি এসে দাঁড়ায়। গাড়ি এক ব্যক্তি নেমে জানান, শেওড়াফুলি ঘাটে যাবেন। ২২০০ টাকা ভাড়া ঠিক হয়। ওই ব্যক্তির দু’টি ট্রলি ব্যাগ, একটি হাতব্যাগ ও একটি পিঠব্যাগ তিনি অন্য গাড়িটি থেকে নিজের মারুতিতে তোলেন। জানতে পারেন, ওই ব্যক্তি দুর্গাপুর থেকে আসছেন। এর পরে তাঁকে গাড়িতে চাপিয়ে পালসিট হয়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরেন। গুড়াপ হয়ে কল্যাণী সেতু পেরিয়ে ব্যারাকপুরে ঢোকেন।
নূর জানান, ওই ব্যক্তি তাঁর পাশের আসনে বসেছিলেন। পিঠব্যাগটি নিজের কোলে রেখেছিলেন। মাঝেমধ্যেই সেটি থেকে পারফিউম বের করে নিজের গায়ে এবং গাড়িতে ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন। পারফিউমের কৌটোর গায়ে ইংরেজি হরফে ‘কে’ এবং ‘এস’ লেখা ছিল। রাস্তায় তাঁরা এক বার চা খাওয়ার জন্য থামেন। আর এক বার গঙ্গার একটা ঘাটে। সেখানে কয়েক মিনিট ঘুরে এসে ওই ব্যক্তি জানান, পরের ঘাটে যাবেন। সকাল সাড়ে ৮টা-পৌনে ৯টা নাগাদ তাঁকে মণিরামপুর ঘাটে নামিয়ে তিনি ফিরে যান।
পরের দিন খবরের কাগজে সুচেতা ও দীপাঞ্জনা হত্যার খবর পড়েন নুর। তাতে সমরেশের ছবি দেখে চিনতে পেরে বর্ধমান থানায় গিয়ে সমরেশকে ভাড়া নিয়ে যাওয়ার কথা পুলিশকে জানান। ৩ সেপ্টেম্বর শ্রীরামপুরে এসে সমরেশকে থানার হাজতে দেখেন। এ দিন আদালতে সমরেশকে শনাক্ত করেন নুর। পারফিউমের কৌটোও শনাক্ত করেন। আদালতে গাড়িও এনেছিলেন তিনি। এজলাস থেকে নেমে বিচারক গাড়িটি দেখে আসেন।
আসামীপক্ষের আইনজীবী ধূর্জটিনারায়ণ পাকড়াশী নুরকে প্রশ্ন করেন, তিনি হিন্দু না মুসলিম। নুর জবাব দেন, ‘‘মুসলিম’’। ফের প্রশ্ন, ‘‘গত বছর ফতেয়া দোহাজ দোহাম কবে ছিল? সবেবরাত কবে ছিল?’’ নুর জানান, তাঁর মনে নেই। ধূর্জটিবাবু তখন বলেন, ‘‘মুসলিম হয়েও নিজের ধর্মের পরব মনে নেই অথচ রাখি কবে ছিল, সেটা মনে আছে!’’ ভাড়া খাটার জন্য ‘কমার্শিয়াল পারমিট’ আছে কি না, তা-ও ওই গাড়িচালককে জিজ্ঞাসা করেন ধূর্জটিবাবু। নুর জানান, তাঁর কমার্শিয়াল পারমিট নেই।
এর পরেই এ দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শেষ হয়ে যায়। সূত্রের খবর, আগামী ২৪ অগস্ট পরবর্তী শুনানি হবে। ওই দিন আসামীপক্ষের আইনজীবী ফের নুরকে জেরা করবেন।
অভিযোগ, গত বছরের অগস্ট মাসে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের ম্যানেজার (এখন সাসপেন্ডেড) সমরেশ সরকার দুর্গাপুরের বিধাননগর আবাসনে ওই দু’জনকে খুন করেন। সুচেতার দেহ বঁটি দিয়ে তিন টুকরো করে কেটে তিনটি ব্যাগে ঢোকান। দীপাঞ্জনার দেহ ভরেন অন্য একটি ব্যাগে। তার পরে সেগুলি ব্যারাকপুর থেকে শেওড়াফুলির মাঝে গঙ্গায় ফেলে দেন যাত্রীবাহি ভুটভুটি থেকে।
এ দিন শুনানি শেষ হওয়ার পর আদালত চত্বরে প্রিজন ভ্যানে বসে সমরেশ দাবি করেন, তিনি নির্দোষ। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। তারপরেই বলেন, ‘‘আমাকে বিয়ে করার জন্য ওই মহিলা (সুচেতা) তাঁর মেয়ের উপর অত্যাচার করতেন। ভেবেছিলেন, মেয়ে মরে গেলে আমি তাঁকে বিয়ে করতে পারব। আমি ওঁদের খুন করিনি। অন্য কেউ করেছে। আমাকে ফোন করে ডাকা হয়েছিল। ব্যাগগুলি গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। না হলে পরিবারের লোকজনের ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া হয়।’’
কে আপনাকে ডেকেছিল, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে সমরেশ বলেন, ‘‘মুখ দেখতে পাইনি। দু’জন ছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy