Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
বিতর্কে জল ঢালার চেষ্টায় গেরুয়া শিবির
BJP

বিবেকানন্দকে ‘অসম্মান’, জনমানসে ক্ষোভ-চর্চাও

বিবেকানন্দের ছবির উপরে ছিল শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং দীনদয়াল উপাধ্যায়ের ছবি। তা দেখে গুঞ্জন শুরু হয়।

বিতর্কিত ফ্লেক্স। — নিজস্ব চিত্র।

বিতর্কিত ফ্লেক্স। — নিজস্ব চিত্র।

প্রকাশ পাল
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:০১
Share: Save:

কেটে গিয়েছে ২৪ ঘণ্টা। চুঁচুড়ায় গেরুয়া শিবির যে ভাবে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন পালন করেছে, তা নিয়ে চর্চা চলেছে বুধবারেও। অনেকে মনে করছেন, বিবেকানন্দকে অসম্মান করা হয়েছে। এ কাজে কেউ বাংলার সংস্কৃতি নিয়ে উদ্যোক্তাদের ‘বোধের অভাব’ দেখছেন। কেউ বলছেন, ‘দম্ভের প্রকাশ’। সমালোচনার মুখে বিজেপি নেতারা বিতর্কে জল ঢালার চেষ্টা করেছেন।

মঙ্গলবার চুঁচুড়ার ঘড়ির মোড়ে বিজেপির ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির উদ্যোগে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন পালিত হয়। বিবেকানন্দের ছবির একটি ফ্লেক্স লাগানো হয়েছিল। ছবির উপরের অংশে দু’দিকে দু’টি পদ্মফুল ছিল। যা বিজেপির দলীয় প্রতীক। বিবেকানন্দের ছবির উপরে ছিল শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং দীনদয়াল উপাধ্যায়ের ছবি। তা দেখে গুঞ্জন শুরু হয়।

চুঁচুড়ার বুনো কালীতলার বাসিন্দা, নাট্যকার অমল রায় জানান, তিনি শুনেছেন বিবেকানন্দের ছবির সঙ্গে গেরুয়া পতাকা নিয়ে এবং ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুলে মিছিল হয়েছে ওই দিন। বিবেকানন্দের ছবিতে পদ্মফুলের বিষয়টিও শুনেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওদের বাঙালি আইকন নেই। তাই কখনও রবীন্দ্রনাথকে টানছেন, কখনও বিবেকানন্দের উদ্ধৃতি ব্যবহার করছেন। কিন্তু সঙ্কীর্ণ অর্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ জন্য যা করা দরকার, সেটাই করা হচ্ছে। বিবেকানন্দের ছবিতে পদ্মফুল জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁর মাথার উপরে শ্যামাপ্রসাদ, দীনদয়াল ঠাঁই পাচ্ছেন। গভীর উদ্বেগের বিষয়।’’

এই শহরেরই ষাণ্ডেশ্বরতলার প্রবীণ বাসিন্দা উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে যুক্ত। তাঁর মনে হয়েছে, এ ভাবে বিবেকানন্দকে অশ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। তাঁকে স্মরণ করার নামে আখের ‘অন্য দৃষ্টিভঙ্গি’ কাজ করেছে। শ্রীরামপুর কলেজের প্রাক্তন গ্রন্থাগারিক বহ্নিশিখা ঘটকও বিচলিত। তাঁর বক্তব্য, বিভিন্ন ক্ষেত্রেই রাজনীতির কারবারিরা ঢাকঢোল পিটিয়ে মনীষীদের জন্মদিন বা মৃত্যুদিন পালন করেন, যেখানে প্রচারের আকাঙ্ক্ষাই বেশি থাকে। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘মহান পুরুষকে সামনে রেখে নিজের উপরে আলো ফেলার চেষ্টা চলে। তাতে এমন কিছু করা হয়, যেটা অনুচিত। এ ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। বিবেকানন্দকে ছোট করা হয়েছে। আমাদের মননে আঘাত লেগেছে।’’

স্প্যানিশ ভাষাচর্চার সঙ্গে যুক্ত লেখিকা তথা ওই বিষয়ে বেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয় ও দুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষিকা অরুন্ধতী ভট্টাচার্যও ক্ষুব্ধ। বর্তমানে উত্তরপাড়ার বাসিন্দা অরুন্ধতীর বক্তব্য, ‘‘ক্ষমতাসীন ব্যক্তি নিজের স্বার্থে ভাষা থেকে ধর্ম— সবই নিজেদের মতো করে ব্যবহার করেন। এটা ঐতিহাসিক ভাবে সত্যি। এ ক্ষেত্রেও মনীষীদের স্মরণ করা হচ্ছে অশ্রদ্ধার সঙ্গে। বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ— কেউ বাদ যাচ্ছেন না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘যাঁরা এটা করছেন, তাঁরা নিজেদের মনীষীদের থেকেও ঊর্ধ্বে মনে করছেন। শুধু অশ্রদ্ধা নয়, ক্ষমতার দম্ভও প্রকাশ পাচ্ছে।’’

বিজেপির ওই কাজের সমালোচনায় মঙ্গলবার চুঁচুড়ায় বিক্ষোভ-মিছিল করে তৃণমূল। বিজেপিকে একহাত নেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার। ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়ও বিজেপিকে বিঁধতে ছাড়েননি। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘ভারতবর্ষের সংস্কৃতি, পরম্পরা, ঐতিহ্য বিজেপি বোঝে না, অথবা মানে না। সেটাই প্রমাণ করল।’’

বিজেপি নেতা স্বপন পাল অবশ্য দোষের কিছু দেখছেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পদ্ম জাতীয় ফুল। ফলে, যে কোনও জায়গায় শোভা পেতে পারে। আর শ্যামাপ্রসাদ, দীনদয়ালও মনীষী। ওঁদের নিয়ে বিরোধীদের গাত্রদাহ হচ্ছে। যে তৃণমূল মনীষীদের মুখ্যমন্ত্রীর ছবির নীচে ঠাঁই দেয়, তাঁদের কিছু বলার অধিকার নেই।’’ পরে অবশ্য যোগ করেন, ‘‘মানুষের ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার প্রশ্নই নেই। অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়ে থাকলে আমরা শুধরে নিই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Swami Vivekananda Chinsurah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE