বর্তমান: আলোয় সেজেছে কলেজের মূল ভবন (উপরে)।
সময়ের সরণি বেয়ে দু’শো বছর অতিক্রম করল শ্রীরামপুর কলেজ। প্রেসিডেন্সির পরে যে প্রতিষ্ঠান রাজ্যের দ্বিতীয় প্রাচীন কলেজ। এশিয়ার প্রথম মিশনারি কলেজ, প্রথম মিশনারি বিশ্ববিদ্যালয়ও। এই প্রতিষ্ঠানের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ইতিহাসের নানা উপকরণ। তাই দ্বি-শতবর্ষের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে চর্চা শুরু হয়েছে।
আঠেরো শতকের মাঝামাঝি দিনেমারদের হাতে শ্রীরামপুর হয়ে ওঠে বাণিজ্য-নগরী। শিক্ষার প্রসার ঘটে ‘শ্রীরামপুর ত্রয়ী’ অর্থাৎ কেরি-মার্শম্যান-ওয়ার্ড এই শহরে আসার পরে। তখন ১৮০০ সাল। তাঁদের হাত ধরে ১৮১৮ সালে গঙ্গার ধারে ‘অল্ডিন হাউজে’ চালু হয় শ্রীরামপুর কলেজ। ডেনমার্ক সরকারের দেওয়া প্রায় ১০ একর জমিতে বর্তমান কলেজ ভবনে পড়াশোনা শুরু হয় ১৮২১ সালে। কলেজের কেরি লাইব্রেরি ও রিসার্চ সেন্টারের (সিএলআরসি) প্রাক্তন কিউরেটর তপনকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ১৮২৭ সালে ডেনমার্কের রাজা ষষ্ঠ ফ্রেডরিকের দেওয়া সনদবলে এই প্রতিষ্ঠান ধর্মতত্ত্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পায়। কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন কেরি। ১৮৩৩ সালে কলেজের সংবিধান চালু হয়। কলেজ কাউন্সিলের প্রথম মাস্টার হন কেরি। তখন অধ্যক্ষ পদে বসেন মার্শম্যান।
এক বছর আগে নাগরিক সমাবেশে কলেজ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি নানা পরিকল্পনা করার দাবি ওঠে। তার মধ্যে একটি— কলেজের ‘আঁতুড়ঘর’ অল্ডিন হাউজ সংস্কার। কিন্তু এ দিন কলেজ চত্বর যখন উৎসবের আঙিনায় পরিণত, তখন ঝোপজঙ্গলে ঢাকা ভগ্নস্তূপের মতো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে ‘অল্ডিন হাউজ’। কলেজে উইলিয়াম কেরির আবক্ষ মূর্তি থাকলেও মার্শম্যান বা ওয়ার্ডের নেই। শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে ফের প্রকাশনার ব্যবস্থা নিয়েও আলোচনা হয়েছিল। বছরভর বিদেশি অতিথিদের আগমন, আন্তর্জাতিক সেমিনার, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি-সহ নানা কর্মসূচি পালিত হলেও ওই সব দাবি পূরণ হয়নি।
কলেজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছেন, সব চেষ্টাই চলছে। অধ্যক্ষ ভ্যানস্যাংগ্লুরা জানান, কলেজ ক্যাম্পাসের লোহার সিঁড়ি এবং মেন গেট ডেনমার্কের তৎকালীন রাজা করে দিয়েছিলেন। ওই সিঁড়ি এবং গেট সংস্কারের ব্যাপারে ডেনমার্কের জাতীয় মিউজিয়ামের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এ দিনের অনুষ্ঠানে ডেনমার্কের ওই মিউজিয়ামের কিউরেটর বেনটে উলফ উপস্থিত ছিলেন। অধ্যক্ষের বক্তব্য, ‘‘অল্ডিন হাউজ সংস্কার নিয়ে রাজ্য সরকারকে চিঠি পাঠিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলেজে আসবেন বলে সম্মতি দিয়েছেন। আশা করছি, তিনি এলে কয়েকটি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে।’’ শ্রীরামপুরের পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, অল্ডিন হাউজ সংস্কারের ব্যাপারে পুরসভা সচেষ্ট। সিএলআরসি সংস্কার এবং দুর্মূল্য নথি, পুথি বা বইপত্র যথাযথ সংরক্ষণের দাবি জানান পুরপ্রধান।
কলেজের মূল ভবন সংস্কার, বিশেষ বছরটি উপলক্ষে একটি শিক্ষাকেন্দ্র, ছাত্রাবাস, অডিটোরিয়াম তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, এ জন্য একশো কোটি টাকারও বেশি প্রয়োজন। কলেজের এক শিক্ষক বলেন, ‘‘এই প্রতিষ্ঠানকে পূর্ণাঙ্গ একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তৈরির দাবি রয়েছে সাধারণ মানুষের। এই প্রস্তাব নানা কারণে যথাস্থানে পৌঁছনো যায়নি। আগামী দিনে নিশ্চয়ই সেই চেষ্টা হবে। মার্শম্যান, ওয়ার্ডের আবক্ষ মূর্তিও বসবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy