Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Durga Puja

ঠাকুর দেখা কোন পথে, রায়ের ফাঁক খুঁজছে কমিটি

হাওড়া গ্রামীণ এলাকার বিভিন্ন পুজো কমিটি জানিয়েছে, দর্শকের প্রবেশ আটকাতে ব্যারিকেড করা হবে।

শ্রীরামপুরে একটি পুজো মণ্ডপের সামনে পুলিশের গার্ডরেল দিয়ে ব্যারিকেড। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র

শ্রীরামপুরে একটি পুজো মণ্ডপের সামনে পুলিশের গার্ডরেল দিয়ে ব্যারিকেড। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া-উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২০ ০১:৪৫
Share: Save:

হাইকোর্ট বলেছে, মণ্ডপ থাকবে দর্শকশূন্য। সেই রায় কার্যকর করতে কোনও পুজো কমিটি উঠেপড়ে লেগেছে, কেউ হাত গুটিয়েই বসে রয়েছে। কারও বক্তব্য, পথে নামা দর্শনার্থীদের সামলানোর দায় তাদের নেই।

সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকেই বলছেন, আদালতের রায় কতটা কার্যকর হবে তা যেমন পুলিশ-প্রশাসনের উপরে নির্ভর করবে, তেমনি পুজোর উদ্যোক্তা এবং আমজনতার ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আহ্বান, মানুষ যতটা সম্ভব নিজেকে গৃহবন্দি রাখুন। পুজো কমিটিগুলিও উপযুক্ত পদক্ষেপ করুক। কিন্তু অনেক পুজো কমিটিরই যা ভাবগতিক, তাতে ভিড় আটকানোর দায় নিতে তাঁরা যে নারাজ, তা স্পষ্ট। তাঁরা ধরেই নিচ্ছেন, মানুষ ঠাকুর দেখতে বেরোবেনই। কোনও কমিটি মণ্ডপের সামনে ব্যারিকেড করছে, কেউ প্রতিমার ১০ মিটার আগে রিবন বেঁধেছে। অনেকেই অবশ্য সে রাস্তায় হাঁটেননি। কেউ বলছে, তাদের মণ্ডপ রাস্তার ধারে। ব্যারিকেড করলে রাস্তা আটকে যাবে।

বলাগড়ের জিরাটের একটি পুজোয় সপরিবারে দুর্গা করোনা-যোদ্ধার বেশে। আদালতের নির্দেশ কার্যকর করা নিয়ে মঙ্গলবার সেখানে কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। সভাপতি তপন দাসের বক্তব্য, ‘‘আদালতের নির্দেশ সরকারি ভাবে পাইনি। পেলে ভেবে দেখব, কী করা যায়। না পেলে ব্যারিকেড করব না। করলেও মানুষ যদি জোর করে ঢুকে পড়ে, সেই দায় আমাদের থাকবে না।’’

চণ্ডীতলা বাজারে অহল্যাবাঈ রোডের ধারে নবজাগরণ সঙ্ঘের মণ্ডপ। আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে পুজোকর্তারা ভাবছেন, মণ্ডপের একাংশ খুলে দেওয়া যায় কিনা, যাতে বাইরে থেকে ঠাকুর দেখা যায়। তবে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, রাস্তার দু’ধারে জায়েন্ট স্ক্রিন লাগানো হবে। কর্মকর্তা সুবীর মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘মানুষের জন্যই পুজো। বিধি মেনেই মানুষকে কতটা আনন্দ দেওয়া যায়, সেই চেষ্টা করব।’’ আরামবাগের তিরোলের কালীমাতা যুব ঐক্য সম্মিলনীর সম্পাদক সুদীপ্ত চক্রবর্তী জানান, ভিড় এড়াতে আধ কিমি দূর থেকে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবেন।

আরামবাগ মহকুমার অনেক বড় পুজোই দূরত্ববিধি নিয়ে পদক্ষেপ করেনি। আরামবাগ শহরের ২ এর পল্লির সম্পাদক সুবীর দে বলেন, ‘‘প্রশাসনের নির্দেশিকা পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ একই কথা জানান দৌলতপুর যুবশক্তি নাট্যমন্দিরের সজল কর্মকার। ভদ্রকালীর বলাকার কর্ণধার সৌমেন ঘোষের কথায়, ‘‘মানুষ মণ্ডপে ঢুকতে পারবে না, এটা আগে জানলে এটুকু আয়োজনও করতাম না।’’ প্রায় একই বক্তব্য উত্তরপাড়া চড়কডাঙ্গা সর্বজনীনের উদ্যোক্তা উৎপলাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

শ্রীরামপুরের আপনজন থিমের ডালি সাজিয়েছে। চলছিল শেষ মূহূর্তের প্রস্তুতি। আদালতের রায়ের পরে সেই কাজের গতি শ্লথ। মঙ্গলবার মণ্ডপের সামনে পুলিশের গার্ডরেলের উপস্থিতি। পুজোর কর্ণধার উত্তম রায় বলছেন, আজ, বুধবার আদালতের বক্তব্যের দিকে তাঁরা তাকিয়ে। একই বক্তব্য শহরের নেতাজি মোড় উন্নয়ন সমিতির কর্মকর্তা পিন্টু নাগের। চুঁচুড়ার রথতলা সর্বজনীনের কর্মকর্তা দেবাশিস কুণ্ডুর কথায়, ‘‘প্রস্তুতির শেষ পর্বে নতুন করে পরিকল্পনা করতে হচ্ছে।’’

ব্যান্ডেলের কেওটা নবীন সঙ্ঘের সম্পাদক বলাই সেন বলেন, ‘‘পুজোর আনন্দ ফিকে হল, সন্দেহ নেই। কিন্তু করোনার ছোঁয়াচ এড়াতে আদালতের কথা মানতেই হবে।’’ কোন্নগরের দক্ষিণপাড়া সর্বজনীনে তিন দিক খোলা মণ্ডপ। সম্পাদক অসীম মিত্রের কথায়, ‘‘মণ্ডপে মানুষের প্রবেশ আটকাতে মাইকে অনুরোধ করব। দরকারে ব্যারিকেড করব। আমাদের সচেতনতায় মানুষের ভাল হলে, মন্দ কী!’’ শ্রীরামপুর কেন্দ্রীয় দুর্গাপুজো কমিটির কর্তাদের দাবি, করোনা পরিস্থিতিতে চিরাচরিত শারদ সম্মান পুরস্কার বাতিল করা হয়েছে। করোনাবিধি যথাযথ ভাবে মানা হবে, এমন ২০টি কমিটিকে শারদ সম্মান দেওয়া হবে। কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘হাইকোর্টের রায় পুজো কমিটিগুলিকে জানাচ্ছি। নির্দেশ মানার ব্যাপারে পুজো কমিটি এবং পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলব।’’

হাওড়া গ্রামীণ এলাকার বিভিন্ন পুজো কমিটি জানিয়েছে, দর্শকের প্রবেশ আটকাতে ব্যারিকেড করা হবে। উলুবেড়িয়ার নোনা অ্যাথলেটিক্স ক্লাবের পবিত্র সান্যাল জানান, মণ্ডপের ১০ মিটার তফাতে ব্যারিকেড করা হবে। সামাজিক মাধ্যমে পুজোর লাইভ সম্প্রচার করা হবে। রাজাপুরের রঘুদেবপুর পাঁচলা মোড় নেতাজি সঙ্ঘের সম্পাদক অজিত পাড়ুই, আমতার উত্তর রসপুর সর্বজনীনের কর্তা জয়ন্ত পোল্যে, বাগনান টাউন ক্লাবের মানস বসুও জানিয়েছেন, মণ্ডপে ব্যারিকেড করা হবে।

বিদেশে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে আইপিএলে দাপাচ্ছেন বিশ্বের তাবড় ক্রিকেটাররা। সেই দৃশ্য টিভিতে দেখছে ক্রিকেট-বিশ্ব। করোনা-কালে একই কায়দায় দুর্গাপুজোও কাটবে কিনা, তা নিয়েই জোর চর্চা এখন বঙ্গে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja High Court Verdict
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE