নিজের সংগ্রহশালায়।নিজস্ব চিত্র।
নিজের বা়ড়িতেই রবীন্দ্র সংগ্রহশালা তৈরি করেছেন হাওড়ার আন্দুলের মাশিলা গ্রামের বাসিন্দা মানস মুখোপাধ্যায়।
সাতের দশকের শেষ দিকে পথ দুর্ঘটনায় মৃত ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে শ্মশান থেকে দাহ করে নিজের ঘরে ফিরে মানসবাবু শুনতে চেয়েছিলেন, ‘‘জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে হে বন্ধু রয়েছে দাঁড়ায়ে’’। দুর্ঘটনার দু’দিন আগে ওই রেকর্ডটি শুনলেও সে দিন কিছুতেই খুঁজে পাননি। এর পরেই নিজের সংগ্রহে থাকা রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ডগুলিকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। সেই শুরু। বিশ্বভারতী থেকে শুরু করে বিভিন্ন রেকর্ডিং কোম্পানি— পরবর্তী সময়ে তাঁর সংগ্রহের প্রশংসা করেছে সবাই।
মানসবাবু জানান, রবীন্দ্রসঙ্গীতের গ্রামোফোন রেকর্ড থেকে শুরু করে সম্প্রতি প্রকাশিত ডিভিডি— সবই রয়েছে তাঁর সংগ্রহে। খুঁজে পাওয়ার সুবিধার জন্য গায়ক-গায়িকার নামের প্রথম অক্ষর অনুযায়ী করা রয়েছে ক্যাটালগ। বাণিজ্য বিভাগের এই ছাত্র চাকরি করতেন কোল ইন্ডিয়ার অ্যাকাউন্টস বিভাগে। পাওয়া ও না পাওয়ার হিসেব কষতে কষতেই রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি ভালবাসা জন্মায়। তাঁর বাড়িতে রয়েছে চার রকমের সচল গ্রামাফোন। মানসবাবুর কথায়, ‘‘রবীন্দ্রনাথ আমার আশ্রয়, রবীন্দ্রনাথেই আমার মুক্তি। আমি নিজেকে রবীন্দ্র-সাধক বলতেই বেশি পছন্দ করি।’’ মানসবাবুর দাবি, এখনও পর্যন্ত ২২৩২টি রবীন্দ্রসঙ্গীতের কথা জানা গিয়েছে। তার মধ্যে ১৭৭৬টি রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড করা হয়েছে। যার মধ্যে দু’টি বাদে সব ক’টি রবীন্দ্রসঙ্গীত তাঁর সংগ্রহে রয়েছে।
মানসবাবুর বাবা ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। বাড়িতে গানের পরিবেশ ছিল। মায়ের কাছেই প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনেন তিনি। তারপর থেকে রবীন্দ্রনাথে়র গানই ধ্যানজ্ঞান। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে শিয়ালদহ এলাকার পুরনো রেকর্ডের দোকান থেকে কিনেছিলেন সন্তোষ সেনগুপ্তের গলায় ‘‘তোমার পতাকা যারে দাও...’’। সেটিই তাঁর প্রথম সংগ্রহ করা রবীন্দ্রসঙ্গীত।
রবীন্দ্রসঙ্গীতের সংগ্রাহক হিসেবে প্রশংসাও পেয়েছেন প্রচুর। সুচিত্রা মিত্রের মতো শিল্পী তাঁর সংগ্রহের প্রশংসা করেছেন। বিশ্বভারতী-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়েছেন শংসাপত্র। বিভিন্ন রেকর্ডিং কোম্পানি রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালব্যাম বের করার সময়ে মানসবাবুর সাহায্য নিয়েছে। শুধু রবীন্দ্রসঙ্গীত নয়, চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরে রবীন্দ্রনাথের স্মরণে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত ডাক টিকিটও সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন তিনি।
কিন্তু সময় বড় বালাই। নিয়মিত যত্নের পরেও তাঁর ১০০ বছরের বেশি পুরনো বেশ কয়েকটি রেকর্ড আস্তে আস্তে নষ্ট হতে বসেছে। মানসবাবুর আক্ষেপ, ‘‘অনেকে আমার থেকে সাহায্য নিয়েছে। কিন্তু প্রয়োজন মেটার পরে যোগাযোগ রাখেনি। আমার মৃত্যুর পরে এই সংগ্রহের কী হবে?’’
তবে আশার কথা হল, ইতিমধ্যেই তাঁর সংগ্রহ নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে বিশ্বভারতী। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বপন দত্ত বলেন, ‘‘মানসবাবু যদি আগ্রহী হন তাহলে বিশ্বভারতী তাঁর সংগ্রহ রক্ষণাবেক্ষণ করবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy